‘ব্যাড ব্যাঙ্কের’ নামে একচেটিয়া মালিকদের ঋণ মকুবঃ প্রতিবাদ ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের

 

২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী ২ লক্ষ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা অর্থনীতির নতুন টোটকা ‘ব্যাড ব্যাঙ্ক’ বা ন্যাশনাল অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (এনএআরসিএল)-এ সিলমোহর বসাল। এটি ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ আদায়ের নামে এক প্রতারণামূলক পদক্ষেপ। এই নতুন সংস্থা ব্যাঙ্কের খাতায় থাকা সমস্ত অনাদায়ী ঋণ বা অনুৎপাদক সম্পদের কাগজপত্র হাতে তুলে নেবে। ফলে ব্যাঙ্কের খাতা থেকে অনাদায়ী ঋণ মুছে যাবে। ব্যাঙ্ক নতুন করে ঋণ দেওয়ার জায়গায় চলে আসবে। নিয়ম অনুযায়ী উক্ত সংস্থা ১০০ টাকার অনাদায়ী ঋণের কাগজপত্র হাতে নিলে প্রথমেই ব্যাঙ্ককে ১৫ টাকা মিটিয়ে দেবে। বাকি ৮৫ টাকার জন্য গ্যারান্টি হিসেবে রসিদ দেওয়া থাকবে। তারপর কর্পোরেট সংস্থার থেকে অনাদায়ী ঋণ আদায়ের চেষ্টা হবে। একান্তই সম্ভব না হলে বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিলামে তুলে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা হবে। ৮৫ টাকার মধ্যে যতখানি অর্থ উদ্ধার করা যাবে না, তার জন্য সরকার দায়বদ্ধ থাকবে।

এর ফলে সরকার একদিকে যেমন কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে ঋণ পরিশোধ করার দায় থেকে মুক্তি দিতে চাইছে, তেমনি ব্যাঙ্ক গুলিকে এনপিএ মুক্ত করে বাজারে বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত করতে চাইছে। এখানে প্রশ্ন হল, ব্যাঙ্কগুলির পক্ষ থেকে কর্পোরেট সংস্থাগুলির থেকে অনাদায়ী ঋণ আদায়ের চেষ্টা করার সমস্যা কোথায়? কিংবা বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিলামে তুলে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করারই বা বাধা কোথায়? এতদিন এ কাজ তো ব্যাঙ্কই করত। এখন ঘুরিয়ে নাক দেখানো কেন? তাছাড়া ব্যাড ব্যাঙ্কের দ্বারা যতখানি অর্থ উদ্ধার করা যাবে না তার দায়িত্ব সরকার নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছে। এজন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা গ্যারান্টি বাবদ ৩০,৬০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে।

বলাবাহুল্য, এই প্রক্রিয়ায় জনগণের করের টাকায় কর্পোরেট সংস্থাগুলির স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে যার ফলে জনস্বার্থে বরাদ্দ কমবে। এর বিরুদ্ধে সমস্ত ব্যাঙ্ক কর্মচারী ও অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ইউনিটি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ রায়মণ্ডল।

গণদাবী ৭৪ বর্ষ ৯ সংখ্যা