প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেকে যতই ‘চা–ওয়ালা’ এবং গরিব দরদি বলে প্রচার করুন না কেন বাস্তবে তিনি যে সাধারণ মানুষের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষা করছেন তা আজ জলের মতো পরিষ্কার৷ তাঁর শাসনকালে তিন বছরের মধ্যে ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানতে সুদ ৯ শতাংশ থেকে কমে ৬.৫ শতাংশ হয়েছে৷ স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদ আবার ০.২ শতাংশ কমানো হল৷ পুঁজিপতিদের ঋণ খেলাপের ফলে কোনও ব্যাঙ্ক রুগ্ন হয়ে পডলে সেই ব্যাঙ্ককে বাঁচানোর জন্য ব্যাঙ্কে জমানো সাধারণ মানুষের টাকা আটকে রাখার জন্য ‘ফিনান্সিয়াল রেজলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইন্সিওরেন্স বিল, ২০১৭’ (এফ আর ডি আই বিল ) এনেছে মোদি সরকার৷ এতেও শেষ নয়৷ গরিব মানুষের টাকা ব্যাঙ্কের ব্যবসা বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করেছে৷ এক লক্ষ টাকার কম সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টধারীদের অ্যাকাউন্টে একটি ন্যূনতম পরিমাণ টাকা না থাকলে কিছু টাকা চার্জ হিসাবে তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে গত বছরের (২০১৭) ১ এপ্রিল থেকে৷ বর্তমান অর্থবর্ষে এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক এই চার্জ বাবদ আয় করেছে ১৭৭১ কোটি টাকা, যা ব্যাঙ্কটির জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর–এর নিট লাভের (১৫৮১.৫৫ কোটি টাকা) থেকে বেশি৷ পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ও সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এই চার্জ বাবদ আয় করেছে যথাক্রমে ৯৭.৩৪ কোটি টাকা ও ৬৮.৬৭ কোটি টাকা৷ (সূত্র : এই সময় ৩/১/২০১৮)৷ শিল্পপতি ও বড়লোক ছাড়া সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক লক্ষ টাকা কেন তার কম টাকাই থাকে সাধারণ মানুষের৷ অর্থাৎ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের ঘাড় ভেঙে পুঁজিপতিদের স্বার্থে ব্যাঙ্কগুলিকে তহবিল স্ফীত করার ব্যবস্থা করেছে ‘গরিবের মসিহা’ নরেন্দ্র মোদির সরকার৷ এর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি৷ অতি দ্রুত গ্রাহক কমিটি গড়ে তুলে প্রতিবাদ করতে হবে এবং প্রয়োজনে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে তার জনবিরোধী এই নীতি প্রত্যাহারে বাধ্য করতে হবে৷ অন্যথায় সব সঞ্চয় লুটে নেবে৷
ডঃ প্রদীপকুমার দত্ত
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, প্রেসিডেন্সি কলেজ