রাজ্য বিধানসভায় সম্প্রতি তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিল উত্থাপন প্রসঙ্গে এআইডিএসও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় ৮ ডিসেম্বর এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের উচ্চশিক্ষার বেহাল অবস্থা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজ্যের ৩১টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশগুলিতেই স্থায়ী উপাচার্য নেই। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ ফাঁকা রয়েছে।
শিক্ষকের অভাবে নিয়মিত পঠন-পাঠন হয় না। রাজ্যের রাজধানী খোদ কলকাতার বুকে ঐতিহ্যবাহী বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নেই, নেই পর্যাপ্ত অধ্যাপক। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই, অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। পরিকাঠামোহীন অবস্থায় মাত্র চারটি বিষয় নিয়ে মহিষাদল রাজ কলেজে চার-পাঁচ বছর ধরে চলছে মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন পাঠন। মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই, পরিকাঠামোহীন অবস্থায় সেই বিশ্ববিদ্যালয়ও ধুঁকছে। আলিপুরদুয়ার কলেজেই সাইনবোর্ড পাল্টে চালু করা হল আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। কয়েকটি বিষয় নিয়ে নামমাত্র কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে নিয়ে চলছে একটা বিশ্ববিদ্যালয়। কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই স্থায়ী উপাচার্য, প্রয়োজনীয় শিক্ষক। একদিকে যখন ক্লাসরুমের স্বল্পতা, তখন তৈরি হওয়া বিল্ডিং পড়ে রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতায়।
রাজ্যের বেশিরভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির চিত্র এমনই। উচ্চশিক্ষার এই ভয়াবহ দৈন্যদশা কাটাতে রাজ্য সরকারের উচিত ছিল রাজ্যের সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা, সমস্ত শূন্যপদে স্থায়ী শিক্ষক, কর্মচারী এবং স্থায়ী উপাচার্য সহ প্রশাসনিক পদে স্থায়ী নিয়োগ করা এবং সামগ্রিকভাবে উচ্চশিক্ষার মানের উন্নয়ন ঘটানো। তা না করে আরও ৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা রাজ্য সরকার করছে যা উচ্চশিক্ষার বেসরকারিকণের রাস্তাকে আরও প্রসারিত করবে। রাজ্য সরকার মুখে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের শিক্ষানীতির বিরোধিতা করলেও আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষানীতিকে অনুসরণ করেই শিক্ষায় কর্পোরেট পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সামগ্রিক বেসরকারিকরণের পথে হাঁটছে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধিকার হরণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার, যা চূড়ান্ত শিক্ষাস্বার্থবিরোধী।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা কোনও পণ্য নয়, শিক্ষা অধিকার’। তাই সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাতে, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের সরকারি শিক্ষা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলছে এআইডিএসও। বেহাল উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের কোনও পরিকল্পনা না করে শিক্ষার বেসরকারিকরণকে ত্বরান্বিত করতে নতুন করে তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালুর প্রতিবাদে ১০ ডিসেম্বর এআইডিএসও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ দেখাবে।
কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের প্রতিবাদঃ দ্বাদশ শ্রেণির পর কলা বিভাগের অ্যাডমিশন টেস্টে পাশ করলে কলেজে বিজ্ঞান পড়তে পারবে– এমনই নিয়ম করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মজুরি কমিশন। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এআইডিএসও। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড শিবাশিস প্রহরাজ ৬ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন, ইউজিসির কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বছরে দু’বার ভর্তির যে সিদ্ধান্ত তা মানা সম্ভব নয়। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী শিক্ষা বহুবার ছাড়া এবং ধরা আসলে ড্রপ-আউটকেই আইনসিদ্ধ করা। এতে সুসংহত শিক্ষা ব্যাহত হবে। তিনি এর বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।