এমএলএ–এমপি–মন্ত্রী নেই, তবু লাখো মানুষের সমাবেশ হল কীসের জোরে
‘অল রোডস লিড টু নভেম্বর রেভলিউশন’, কথাগুলি অনুরণিত হয়ে ঢেউ তুলে গেল লাখো মানুষের বুকে৷
১৭ নভেম্বর কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের বিশাল সমাবেশে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের কথাগুলি বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল মানুষের মনে – লড়াইয়ের স্ফুলিঙ্গ জাগছে দুনিয়া জুড়ে৷ শোষিত নিপীড়িত মানুষ ফেটে পড়ছে বিক্ষোভে, তারা অবসান চায় শোষণ জুলুমের৷ চায় পরিবর্তন৷ চায় মুক্তি৷ পচাগলা এই পুঁজিবাদী সমাজের শেষকৃত্য করবে শ্রেণিসচেতন শ্রমিক–কৃষক–মেহনতি মানুষ৷ সেই পথ দেখিয়েছে নভেম্বর বিপ্লব৷ খেটে খাওয়া মানুষ নভেম্বর বিপ্লবের শিক্ষায় আলোকিত হচ্ছে৷ তাই নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন আমাদের কাছে নিছক একটা অনুষ্ঠান নয়৷ সমাজের মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রামের প্রস্তুতি দ্রুত করার শপথের মধ্যেই আছে নভেম্বর বিপ্লব শতবার্ষিকী উদযাপনের যথার্থ প্রয়োজন৷
সভা চলতে চলতে কেটে গেছে প্রায় তিন ঘন্টা৷ বেশিরভাগ সময়টাই চলেছে বৃষ্টি৷ লক্ষাধিক মানুষের এই জমায়েত শুধু ভিড় নয়৷ সকলে এসেছেন নভেম্বর বিপ্লবের তাৎপর্য বুঝে নিতে৷ আগামী দিনের করণীয় বুঝে নিতে৷ দীর্ঘ সময় ধরে কমরেড প্রভাস ঘোষ নানা দিক থেকে বুঝিয়েছেন নভেম্বর বিপ্লব শতবার্ষিকী উদযাপনের তাৎপর্য৷ সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষার আলোতে তিনি তুলে ধরেছেন দেশের বিপ্লবী কর্মীদের কর্তব্য৷ মানুষ ভিজতে ভিজতেই শুনছেন তন্ময় হয়ে৷ বৃষ্টি দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি বক্তব্য চালিয়ে যাব? অসংখ্য গলায় উত্তর এল, হ্যাঁ যা দেখে হতবাক পেশাদার সাংবাদিকরাও৷ তাঁদের অবাক করে বলে উঠেছেন সাধারণ চাষি ‘আমরা তো সারা বছরই পেটের দায়ে রোদে পুড়ি, জলে ভিজি৷ এটা নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু আজ এখানে বুঝছি মুক্তির রাস্তা শুধুমাত্র স্বপ্ন নয়৷ তা রাশিয়ার চাষিদের মতো আমাদের জীবনে বাস্তবেই ধরা দিতে পারে৷’ কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা– এত বিশাল হয়েছে এই পার্টি তাঁদের বিস্ময় বাধ মানছে না, এমএলএ–এমপি নেই তবু কীসের জোরে এত শক্তি পায় এই পার্টি তখন সমাবেশে আসা অসংখ্য মাথা বেয়ে নেমে আসা বৃষ্টির জলের সাথে মিশে যাচ্ছে সফলতার আনন্দাশ্রু৷ মুক্তিপথের সন্ধানী চোখগুলিতে স্বপ্ন চিকচিক করে উঠছে৷ ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ছে অসংখ্য রক্ত–নিশান৷
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)–র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী অল্প কথায় তুলে ধরলেন এই মহতী সমাবেশের বৈশিষ্ট্য৷ বললেন, কোনও এমএলএ–এমপি সরকারি ক্ষমতার জোরে এই সমাবেশ নয়৷ আদর্শের জোর আর জনসমর্থনের ভিত্তিতেই এই সমাবেশ– যা এই পার্টি ছাড়া আর কারও পক্ষে সংগঠিত করা সম্ভব নয়৷ কারণ এটাই একমাত্র আদর্শভিত্তিক পার্টি৷ কমরেড শিবদাস ঘোষের হাতে গড়া পার্টি এত বড় হয়েছে দেখে গর্বে বুক ভরে উঠছে৷ তিনি স্মরণ করলেন মহান নভেম্বর বিপ্লবের অমূল্য শিক্ষাগুলিকে৷ আজকের দিনে মার্কসবাদী বিপ্লবী হতে গেলে ব্যক্তিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যে প্রয়োজন সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষ দেখিয়ে গেছেন তার চর্চার প্রয়োজন তুলে ধরলেন কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী৷ কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাই যে বর্তমান সময়ে দেশে দেশে বিপ্লবী আন্দোলনে দিশারীর ভূমিকা নিতে পারে তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি ঘোষণা করলেন৷
এই সমাবেশের আগে কয়েক মাস ধরে গ্রাম–শহর জুড়ে চলেছে প্রস্তুতি৷ ১৭ নভেম্বরঐতিহাসিক মহান নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তির দিনটি যত এগিয়ে এসেছে তত সংগ্রামী জনতার বজ্রমুষ্টিতে ধরা রক্তপতাকায় লাল হয়ে উঠেছে সারা রাজ্যের সাথে মহানগরের রাস্তা৷ চলেছে নিবিড় প্রচার, আসুন সমাবেশে৷ সারা রাজ্য জুড়ে অসংখ্য দেওয়াল লিখন, ব্যানার পোস্টারে চলেছে প্রচার৷ বাংলা জুড়ে এক বছর ধরে চলেছে অসংখ্য জনসভা, হাটসভা, পথসভা৷ চলেছে ঘরে ঘরে প্রচার, শহরের বস্তিতে, গ্রামের দিনমজুর পাড়া থেকে শুরু করে কলকারখানা–অফিস, কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়্ কলেজে হয়েছে অসংখ্য গ্রুপ বৈঠক৷ সাথে চলেছে অর্থ সংগ্রহ, মানুষ সাধ্যমতো সাহায্য দিয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন এই দলটাই তো লড়ে, এ দল আরও বড় হোক৷ কলকাতার মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়েছে কথা– দেখতে যেতে হবে এই সমাবেশ৷ শুধু বাংলা নয়, একই ভাবে কর্মীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় নভেম্বর বিপ্লবের কথা পৌঁছেছে উত্তরাখণ্ড থেকে কেরালা–তামিলনাডু কিংবা রাজস্থান–গুজরাট থেকে আসাম–ত্রিপুরা–সিকিমে৷ এমনকী আন্দামানের দ্বীপেও ছড়িয়ে গেছে এই আহ্বান৷১৭ নভেম্বরের সমাবেশের ঘোষিত স্থান ছিল শহিদ মিনার ময়দান৷ কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে মাঠের অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় রাতারাতি স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে৷ লাল কাপড়ে মোড়া মঞ্চের একদিকে নভেম্বর বিপ্লবের রূপকার মহান লেনিন এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজের স্থপতি মহান স্ট্যালিনের সুবিশাল প্রতিকৃতি৷ পাশে মাথা উঁচু করে আছে কাস্তে– হাতুড়ি – তারা চিহ্ণিত রক্ত পতাকা৷ অনেকটা দূরে বুকস্টলে সভার অনেক আগে থেকেই ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা৷ নানা প্রদেশ থেকে আসা মানুষের বই চাই৷ কমরেড শিবদাস ঘোষের বই, বর্তমান নেতৃত্বের নানা বিষয়ে আলোচনা খোঁজ করছেন তাঁরা৷ হিন্দি–ইংরেজি–বাংলাতে বই চাই৷ পাশে মার্কস এঙ্গেলস–লেনিন–স্ট্যা সে তুঙ থেকে শুরু করে কমরেড শিবদাস ঘোষ পর্যন্ত মহান নেতাদের ও মনীষীদের শিক্ষা এবং ছবির প্রদর্শনী৷
বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যেই রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ কানায় কানায় ভর্তি৷ দুপাশের ফুটপাথ জুড়ে ঠাসা ভিড়, নড়াচড়ার এতটুকু জায়গা পর্যন্ত নেই৷ সমাবেশের বেশিরভাগ মানুষই খেটে খাওয়া, চাষি–মজুর৷ কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে আক্ষেপ– অঘ্রাণের এই অকাল বৃষ্টি মাঠে পাকা ধানের সর্বনাশ করে দিয়েছে৷ সেই ক্ষতির ব্যথা বহন করেই দলে দলে এসেছেন তাঁরা৷ এর উপর ১৭ থেকে তিনদিন খড়গপুর হয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ৷ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিশাল সংখ্যক মানুষ তাই যেমন করে পেরেছেন সমস্ত সম্বল উজাড় করে বাস ভাড়া করেছেন৷ পুরুলিয়া–বাঁকুড়ার মানুষকে আসতে হয়েছে বহু ঘুরপথে৷ ওড়িশার কয়েক হাজার কর্মী–সমর্থককে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে ট্রেনের অভাবে৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণার মৈপীঠ, রায়দীঘি, জয়নগর, জামতলা, ক্যানিং থেকে প্রায় আড়াইশোর বেশি বাস এসেছে, তার অনেকগুলিতেই কলকাতার অফিসটাইমের মতো বাদুড় ঝোলা ভিড়৷ নানা জেলা থেকে বহু ট্রেন ধরেও এসেছেন হাজার হাজার মানুষ৷ তা সত্ত্বেও যানবাহনের অভাবে ফিরে যেতে হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে৷ কলকাতা ও আশপাশের জেলা থেকেও এসে পৌঁছচ্ছে বাস, অন্যান্য গাড়ি৷ প্রত্যেকটিতে ঠাসা ভিড়৷
ঠিক বেলা ১২টায় পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড রণজিৎ ধর উদ্বোধন করলেন প্রদর্শনীর৷ তার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হল সভার কাজ৷ তখনও উত্তরবঙ্গ থেকে আসা স্পেশাল ট্রেনের সাড়ে চার হাজার কর্মী–সমর্থক পৌঁছতে পারেননি৷ দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বহু বাসও আসতে বাকি৷ তখনই জমায়েত চেহারা নিয়েছে মহা–সমাবেশের৷ রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ ছাপিয়ে চৌরঙ্গির ডোরিনা ক্রসিং অবরুদ্ধ প্রায়৷ শহিদ মিনার ময়দানের সংলগ্ণ জায়গাতেও মানুষ দাঁড়িয়ে পড়েছেন৷ মেয়ো রোডে মানুষের সারি৷ অনেকে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে দাঁড়িয়েছেন গাড়ি বারান্দা বা দোকানের শেডের তলায়৷ কান কিন্তু মাইকের দিকে খাড়া৷ সমাবেশে লোক নিয়ে আসা বাসের সারি তখনই পার্ক স্ট্রিট ছাড়িয়ে গেছে৷
একে একে নেতৃবৃন্দ মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জনালেন মহান নেতা লেনিন এবং স্ট্যালিনের প্রতিকৃতিতে৷ পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড অসিত ভট্টাচার্য যখন পতাকা উত্তোলন করছেন, ইয়ং কমিউনিস্ট বাহিনী কমসোমলের ড্রামের গুরুগুরু ধ্বনি কাঁপন তুলেছে অগণিত মানুষের বুকে৷ সকলে উঠে দাঁড়িয়ে লাল সেলাম জানালেন রক্ত পতাকাকে৷ মহান লেনিনের স্মৃতিতে রচিত গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেল সভার কাজ৷ নভেম্বর বিপ্লবের দুই রূপকার মহান লেনিন–স্ট্যালিনের প্রতিকৃতিতে গার্ড–অব–অনারের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাল কমসোমল বাহিনী৷ বক্তব্য রাখলেন সভার সভাপতি কমরেড মানিক মুখার্জি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কর্ণাটক রাজ্য সম্পাদক কমরেড কে রাধাকৃষ্ণ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও হরিয়ানা রাজ্য সম্পাদক কমরেড সত্যবান৷ বক্তব্য রাখলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)–র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী৷ প্রধান বক্তা এস ইউ সি আই (সি) সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ শুরু করলেন তাঁর ভাষণ৷ সমাবেশের শেষ মাথা তখন ডোরিনা ক্রসিং পেরিয়ে এস এন ব্যানার্জি রোডের মোড় ছাড়িয়েছে৷ শহিদ মিনারের বাসস্ট্যান্ড ছাপিয়ে মাঠের মধ্যেও থিকথিক করছে লোক৷
কমরেড প্রভাস ঘোষ তুলে ধরলেন দুনিয়া জুড়ে পুঁজিবাদের আক্রমণে বিপর্যস্ত মানুষের জীবনযন্ত্রণার কথা৷ সমাজতান্ত্রিক সমাজের শ্রেষ্ঠত্বের নানা দিক তুলে ধরে তিনি দেখালেন মানব সভ্যতার বিজ্ঞান নির্ধারিত গতিপথ সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদের দিকেই৷ সঠিক বিপ্লবী পার্টি ছাড়া যে বিপ্লব হয় না, মহান লেনিনের এই শিক্ষাকে তুলে ধরে তিনি দেখালেন পুঁজিবাদের চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়ার যুগে কমরেড শিবদাস ঘোষ কীভাবে এই শিক্ষাকে আরও বিস্তৃত এবং বিশেষীকৃত করতে গিয়ে মার্কসবাদের জ্ঞানভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন৷ শুধু তাই নয়, কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষাতেই বর্তমান সময়ে ব্যক্তিবাদের ভয়াবহ আক্রমণের মোকাবিলা করার সুনির্দিষ্ট পথ নির্দেশ পেয়েছে মার্কসবাদী–লেনিনবাদী বিপ্লবী কর্মীরা৷ কমরেড প্রভাস ঘোষ বলছেন, দুটি পথ আছে, হয় এই শোষণ অত্যাচারের কাছে আত্মসমর্পণ, না হয় চলতে হবে মুক্তির পথে নভেম্বর বিপ্লবের দেখানো পথ ধরে৷ দুর্গন্ধময় পুঁজিবাদের শবদেহ সমাজকে দূষিত করছে৷ এর রক্ষক সব দলগুলিই আজ চূড়ান্ত দুর্নীতির শিকার না হয়ে পারে না৷ এই সমাজকে ভাঙতে হলে সঠিক পথে সংগ্রাম গড়ে তোলা দরকার৷ বিশাল সমাবেশ তাঁর কথা শুধু শুনছে তাই নয়–বোঝা যাচ্ছিল প্রতিটি শব্দ যেন মন–প্রাণ দিয়ে তারা শুষে নিতে চায় এমনকী বাংলার বাইরের যে রাজ্যগুলির কর্মী–সমর্থকরা ভাষা বুঝতে পারছেন না, তাঁরাও নিমগ্ন যদি কিছু শব্দ বোঝা যায় তার প্রচেষ্টায়৷ অনেকে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে প্লাস্টিকের তলায় মাথা ঢেকেছেন, কিন্তু একবারও উঠছেন না৷ মা প্লাস্টিকের আচ্ছাদনে কোলের শিশুকে রক্ষা করতে করতেই সাগ্রহে শুনছেন নেতাদের বক্তব্য৷ সমাবেশে আসা মানুষগুলিকে একঝলক দেখলেই বোঝা যায় তাঁরা এসেছেন যেন এক প্রাণের উৎসবে যোগ দিতে৷ যে উৎসবে সমারোহ নেই, জাঁকজমক নেই– আছে মুক্তির প্রবল আকাঙক্ষা৷ যা দেখে বাংলাদেশের এক বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার বলে গেলেন, শোষিত মানুষ বলেই নভেম্বর বিপ্লবের আহ্বান এদের এত নাড়া দিয়েছে৷
সভা শেষ৷ এমন এক অনুষ্ঠানের শেষে ফিরতে যেন মন চায় না৷ তবু সামনে কর্তব্য তাঁদের টানছে, ফিরে গিয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে এই বিশাল সমাবেশের বার্তা৷ গড়ে তুলতে হবে মানুষের বাঁচার দাবিতে গণআন্দোলন৷ কেরালার এমিল, আশনা, অন্ধ্রপ্রদেশের রাজশেখর, আসামের আদিত্য গোগোই সকলেই ছাত্র৷ অদ্ভুত মিল এদের, সবাই সেমিস্টার এমনকী ফাইনাল পরীক্ষা উপেক্ষা করেই এসেছেন কলকাতায়৷ বাঙ্গালোরের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের একটা দল গভীর মনোযোগে শুনছে অন্ধ্রের কৃষক শিভা সম্মুখাভেলের সংগ্রামের অভিজ্ঞতা৷ কুলতলির কৃষক কর্মীরা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছেন না৷ কীভাবে শত অত্যাচার সয়েও তাঁরা দলের ঝান্ডাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে আছেন তা জানার আগ্রহ সারা ভারতের৷
লং লিভ সোস্যালিজম, লং লিভ মার্কসইজম–লেনিনইজম-শিবদাস ঘোষ থট–স্লোগানে মুখরিত মানুষের ঢল ফিরে চলেছে৷ চোখে মুখে প্রত্যয় নতুন দায়িত্ব নেওয়ার৷ কাজ বুঝে নিতে হবে তাঁদের৷ সমাবেশ বলে গেল এই অমোঘ শক্তির অগ্রগতি রুদ্ধ করার ক্ষমতা আজ আর কারও নেই৷