২২ অক্টোবর এআইইউটিইউসি অনুমোদিত বিড়ি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার চতুর্থ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল কলকাতার ভারতসভা হলে৷ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে দেড় শতাধিক প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন৷ প্রতিনিধিরা বলেন, ‘ভারতবর্ষের ১ কোটির বেশি বিড়ি শ্রমিকের সাথে পশ্চিমবঙ্গের ২৩ লক্ষাধিক বিড়ি শ্রমিক চরম সংকটে৷ তাঁরা মালিক, ঠিকাদার ও সরকারের ত্রিমুখী শোষণ অত্যাচারে জর্জরিত৷ সরকারি ন্যূনতম মজুরি হাজার বিড়ি বাঁধার জন্য কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগণা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ২৬২.০৩ টাকা, হাওড়া–হুগলিতে ২৩৯.৯৬ টাকা, বাকি জেলায় ২৫৪.৯৯ টাকা৷ কিন্তু বাস্তবে শ্রমিকরা পান ৭০ থেকে ১৫২ টাকা৷ এছাড়া মালিক ও ঠিকাদাররা অন্যায়ভাবে পাতা ও তামাকের দাম কেটে শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি আরও কমিয়ে দেয়৷ বিগত ও বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য কোনও সরকারই বিড়ি শ্রমিকদের সরকার নির্ধারিত নূ্যনতম মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি৷ সম্মেলন থেকে দাবি ওঠে, সারা দেশে বিড়ি শ্রমিকদের জন্য একই মজুরি চালু করতে হবে৷
১৯৭৭ সাল থেকে বিড়ি শ্রমিকরা প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় এলেও পশ্চিমবঙ্গে বেশিরভাগ (প্রায় ১৯ লক্ষ) বিড়ি শ্রমিকের পিএফ চালু হয়নি৷ ফলে তারা পেনশন প্রকল্প থেকে বঞ্চিত৷ অনেক আন্দোলনের ফলে ১৯৭৬ সালে বিড়ি শ্রমিক কল্যাণ আইন লোকসভায় পাশ হয় এবং ১৯৭৮ সাল থেকে তা কার্যকরী হয়৷ এই প্রকল্পের কোনও সুযোগ পেতে হলে প্রয়োজন সরকারি বিড়ি শ্রমিক পরিচয়পত্রের৷ এ রাজ্যে এখনও ৮ লক্ষাধিক বিড়ি শ্রমিক সরকারি পরিচয়পত্র পাননি৷ কল্যাণ প্রকল্প চালু হওয়ার পর যতটুকু সুযোগ বিড়ি শ্রমিকরা পেতেন আজ তাও তাঁরা পাচ্ছেন না৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গৃহ নির্মাণ প্রকল্প থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন৷ বিভিন্ন প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে৷ বাস্তবে বিড়ি শ্রমিক কল্যাণ দপ্তরের গুরুত্ব লঘু করে দেওয়া হচ্ছে৷ বিড়ি শিল্প থেকে জিএসটি–র মাধ্যমে ওঠা টাকার খুবই সামান্য পরিমাণ কল্যাণ প্রকল্পে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ রাজ্য সরকার কিছুই প্রায় দিচ্ছে না৷ সম্মেলনে দাবি ওঠে, বিড়ি শিল্প থেকে জিএসটি–র মাধ্যমে ওঠা টাকার ৫০ শতাংশ টাকা বিড়ি শ্রমিক কল্যাণে খরচ করতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে৷
সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন এ আই ইউ টি ইউ সি–র সর্বভারতীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং বিড়ি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড অচিন্ত্য সিংহ৷ সভাপতিত্ব করেন কমরেড মধুসূদন বেরা৷ সম্মেলন থেকে কমরেড অশোক দাসকে সভাপতি, কমরেড আনিসুল আম্বিয়াকে সম্পাদক করে ৩৭ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়৷ প্রতিনিধিরা আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ নিয়ে জেলায় জেলায় ফিরে যান৷