২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ এর এপ্রিল পর্যন্ত ভারত থেকে রপ্তানি করা ৫২৭টি খাদ্যপণ্যে বিষ পেয়েছে বলে অভিযোগ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের। একই অভিযোগ প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালেরও। ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা এবং মান বিষয়ক কর্তৃপক্ষ এবং এফএসএসএআই জানিয়েছে, ২০২১-২৩ সাল জুড়ে যে ৪ লক্ষ ২৯ হাজার ৬৮৫টি খাবারের নমুনা তারা পরীক্ষা করেছেন। তার মধ্যে ১ লক্ষ ৫ হাজার ৯০৭টি নমুনাই নিরাপত্তা সূচক মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশ খাদ্য মানুষের শরীরের পক্ষে বিপজ্জনক।
ভারতের খাদ্যপণ্য নিয়ে অভিযোগ রয়েছে আরও। সম্প্রতি এম ডি এইচ এবং এভারেস্টের চারটি মশলায় নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে সিঙ্গাপুর, হংকং এবং নেপাল। তাদের অভিযোগ সেগুলিতে মাত্রাতিরিক্ত হারে এথিলিন অক্সাইড মেশানো আছে, যা দীর্ঘদিন খেলে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। অভিযোগ উঠেছে মশলা ও ভেষজ খাদ্যপণ্যে অনুমোদিত সীমার ১০ গুণ বেশি কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ থাকলেও সেগুলিকে অনুমতি দিচ্ছে ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ। কোন শক্তিতে বলিয়ান হয়ে গুণমানে অনুত্তীর্ণ খাদ্য বিক্রির অনুমতি দিচ্ছে?
পরীক্ষায় যে খাদ্যগুলি উত্তীর্ণ হল না তাদের প্রস্তুতকারী সংস্থার মালিকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার? অর্থলোভী মুনাফাখোর এই মালিকরা মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে এবং তার বিনিময়ে নিজেদের ব্যবসার সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে, মুনাফার পাহাড় বানাচ্ছে। কেন্দ্রে মোদি সরকারের কল্যাণহস্ত এদের মাথায় না থাকলে, রাজ্যে রাজ্যে সরকারগুলি দেখেও না দেখার মনোভাব না নিলে মানুষের জীবন নিয়ে এমন হীন কাজ তারা অনায়াসে করতে পারতো কি? বছরের পর বছর ধরে এই জিনিস চলছে। এ বার দশ গুণেরও বেশি কীটনাশকের অবশেষ যুক্ত খাবার বাজারে বিক্রির অনুমোদনের পিছনে অর্থের খেলা কত রয়েছে তারও তদন্ত হওয়া দরকার।
মুনাফা বা সর্বোচ্চ মুনাফা পুঁজিবাদী অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য। এই অর্থব্যবস্থা এত পচে গেছে যে মুনাফার লোভে খাদ্যে, ওষুধে ভেজাল দিতেও এদের হাত কাঁপে না। যে শিশু খাদ্য মালিকের ঘরের সন্তানও খাবে, যে ওষুধ মালিকদেরও খেতে হয়, সেখানেও ভেজাল দিতে এতটুকু নিরস্ত হয় না। এদের কাছে মানুষের জীবনের মূল্য মুনাফার তুলনায় কিছুই না। পুঁজির সেবক সরকারের কাছেও মানুষের জীবনের কানাকড়ি মূল্য নেই। থাকলে তদন্ত হত, অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা হত। এই ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিল এই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মানুষের বেঁচে থাকার পক্ষে আজ কত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এরপরেও এই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সেবা করে চলেছে সংসদীয় দলগুলি।