Breaking News

‘বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি’! হাল দেখে শঙ্কিত পুঁজিবাদী পণ্ডিতরাও

দেশটা এগিয়ে চলেছে, এগোতে এগোতে ছুঁতে চলেছে উন্নয়নের শিখর– ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা এমন প্রচারই করে চলেছেন। কেমন এগিয়েছে দেশ? এতটাই যে, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয় ইনফোসিস কর্তা নারায়ণমূর্তিকে কর্পোরেট কোম্পানির মালিকদের উদ্দেশে বলতে হচ্ছে, ‘সহানুভূতিশীল পুঁজিবাদ (কমপ্যাশনেট ক্যাপিটালিজম) চাই’! ১৫ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্সের শতবর্ষের সূচনা উপলক্ষে কলকাতার টাউন হলে পুঁজিপতিদের কাছে তাঁর এই আর্জি। শুধু তিনিই নন, কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অনন্ত নাগেশ্বরন সম্প্রতি বলেছেন, কোভিডের পরবর্তী সময়ে ভোগ্যপণ্যের বিক্রিবাটা ধীরগতিতে হলেও হচ্ছে। কিন্তু মজুরির হারের বৃদ্ধি এতটাই কম যে, তাতে কোনওমতেই চাহিদা বাড়ছে না। তাঁর মতে আর্থিক বৃদ্ধির প্রশ্নে এটাই মূল মাথাব্যথা (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১২.১২.২০২৪)।

তাঁরা এত চিন্তিত কেন? নারায়ণমূর্তি সাহেব তো কিছুদিন আগে থেকেই বলে চলেছেন, দেশের শ্রমিক কর্মচারীদের সপ্তাহে অন্তত ৭০ ঘণ্টা কাজ করা উচিত। অর্থাৎ তাঁর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সপ্তাহে ৬টি কাজের দিনে গড়ে ১২ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করতে হবে। অবশ্য তাঁর কথা থেকে বোঝা যায়নি, অসংগঠিত ক্ষেত্রের অগণিত শ্রমিকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের খবর তিনি কতটুকু রাখেন? এমনকি আইটি সেক্টরের কাজের সময় কতটা লম্বা, তার খোঁজও তিনি রাখেন কি না জানা নেই। তবে তাঁকে একটা কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভাল অতি সম্প্রতি কর্পোরেট কোম্পানিতে কাজের চাপে উচ্চ পদস্থ কর্মচারীদের পর্যন্ত অকাল মৃত্যুর একাধিক রিপোর্ট সংবাদমাধ্যমেই এসেছে। নারায়ণ মূর্তিজি এর কোনও প্রতিকার চেয়েছেন বলে কারও জানা নেই। কিন্তু উদার অর্থনীতি, মুক্ত বাজার অর্থনীতির দ্বারা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সব সংকট কাটিয়ে ফেলার ঢাক এতদিন ধরে বাজানোর পর ‘সহানুভূতিশীল’ হওয়ার জন্য পুঁজিমালিকদের কাছে এমন কাতর আর্জি জানাতে হচ্ছে কেন? আসলে ঢাক যত জোরেই বাজুক না কেন, দিনে দিনে পুঁজিবাদী বাজারের সংকট যে সব সমাধানের অতীত হয়ে উঠেছে তা নারায়ণমূর্তির মতো ঝানু কর্পোরেট কর্তার বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে জন্যই তাঁর এই কাতর আবেদন! পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটারই অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে বাজারের সম্প্রসারণ দূরে থাক সাধারণ ভোগ্যপণ্যের ক্রেতা পাওয়াই মুশকিল। গোটা উৎপাদন ব্যবস্থাকেই সমরাস্ত্র উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত করে, যুদ্ধাস্ত্র কিংবা সামরিক উপকরণের ব্যবসায় একচেটিয়া মালিকদের মুনাফার ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে, তাতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সামগ্রিক সংকট কাটে না।

সংকটটা কতটা গভীর তা মানুষ নিজের জীবন দিয়েই বুঝতে পারে, কিন্তু একেবারে চোখে আঙুল দিয়ে সরকারের কাছেও পরিস্থিতিটা তুলে ধরেছে কর্পোরেট মালিকদের সংস্থা ফিকি এবং কর্মচারী সরবরাহ করার সংস্থা কোয়েস গ্রুপের যৌথ সমীক্ষা। দুই সংস্থা সরকারের কাছে জমা দেওয়া রিপোর্টে দেখিয়েছে–২০১৯ থেকে ’২৩ এই চার বছরে কর্পোরেট মালিকদের মুনাফা বেড়েছে চারগুণ। ২০০৯ থেকে ২৪ এই পনেরো বছরের মধ্যে এই মুনাফা সর্বোচ্চ। কিন্তু একই সময়ে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি এবং বেতন কার্যত কমেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, প্রসেসিং এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার অর্থাৎ পরিকাঠামো এই মূল ক্ষেত্রগুলিতে (ইএমপিআই) শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে গড়ে মাত্র ০.৮ শতাংশ। ব্যাঙ্ক, ইনসিওরেন্স, ফিনান্স ক্ষেত্রে গড় বেতন বেড়েছে চার বছরে মাত্র ২.৮ শতাংশ। আইটি, লজিস্টিক (পণ্যপরিবহণ), রিটেল চেন ইত্যাদিতে গড়ে সাড়ে তিন থেকে চার শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিক্রির কোম্পানিগুলিতে কর্মচারীদের বেতন একটু বেশি হারে (৫.৪ শতাংশ) বেড়েছে বলে দেখালেও তাদের বেতনের পরিমাণটাই এত কম যে টাকার অঙ্কে তা অতি সামান্য। এই সময়ের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার কত? এই চার বছরে সরকারের তথ্য ঢাকার সব চেষ্টা সত্ত্বেও ভোগ্যপণ্যের গড় মূল্যবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে প্রায় নামেইনি। তাহলে শতাংশের অঙ্কে কর্মচারীদের প্রাপ্যে যতটুকু বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে তা কি বাস্তবে বৃদ্ধি? আসলে মজুরি এবং বেতন কমেছে। সমস্ত ক্ষেত্রেই ম্যানেজমেন্ট স্তরের সাথে সাধারণ কর্মচারীর বেতনের পার্থক্য এতটাই বেশি যে, এই সামান্য শতাংশের গড় বৃদ্ধিটাও আসলে সকলের জন্য বৃদ্ধি নয়। স্ট্যাটিস্টিকসের পরিভাষায় সমীক্ষকরা বলেছেন, সংগঠিত ক্ষেত্রেও বেতন বৃদ্ধির হার ‘ঋণাত্মক’। সোজা কথায়, মুনাফা যতই বাড়ুক, বেতন ক্রমাগত কমছে (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১২.১২.২০২৪)।

এই দেখেই অনন্ত নাগেশ্বরন ৫ ডিসেম্বর অ্যাসোচেমের একটি সভায় খুবই উদ্বেগের সাথে শিল্পপতিদের বলেছেন, ‘শ্রমিকদের যথেষ্ট বেতন না দিলে, যথেষ্ট সংখ্যায় শ্রমিককে কাজে না নিলে তা কর্পোরেট সেক্টরের পক্ষে কার্যত আত্মধ্বংসের সমান হবে।’ কারণটা তিনিই ব্যাখ্যা করেছেন, এটা না হলে অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরি হবে না, কর্পোরেটরা নিজেদের পণ্য বিক্রিরও বাজার পাবে না (ওই)। খোদ নরেন্দ্র মোদি সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার আসল উদ্বেগের কারণটা বোঝা গেল নিশ্চয়ই! তিনি শ্রমিক-কর্মচারীদের দুর্দশা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন, উদ্বিগ্ন বৃহৎ পুঁজিমালিকদের বাজার সংকট নিয়ে।

লন্ডনে অবস্থিত সংবাদ বিশ্লেষক সংস্থা ‘ইন্ডিয়া আইএনসি’-র সঙ্গে যুক্ত অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, ভারতের বৃহত্তর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হল উপযুক্ত মজুরির কাজের অভাব। কর্মসংস্থান এমনিতেই কম, তার ওপর যতটুকু কাজ তৈরি হচ্ছে তাতেও কাজের তুলনায় মজুরি অতি নিম্ন। বেকারত্বের হারের হিসাবে সরকার অনেক জল মেশালেও গত সেপ্টেম্বরে বেসরকারি সমীক্ষা সংস্থা ‘সিএমআইই’-র হিসাবে তা ছিল ৭.৮ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুব সমাজের হিসাবকে আলাদা করে ধরলে বেকারত্বের হার পৌঁছে যাচ্ছে প্রায় সাড়ে দশ শতাংশে। তাদেরই সমীক্ষা অনুযায়ী লেবার ফোর্স পার্টিশিপেশন রেট অর্থাৎ কর্মক্ষম মানুষের কত শতাংশ কাজ পায় তার পরিসংখ্যান সেপ্টেম্বরে ছিল ৪১ শতাংশ (ফোর্বস ইন্ডিয়া.কম, ১৭.১০.২৪)। অর্থাৎ দেশের সবচেয়ে কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৫৯ শতাংশ কোনও আর্থিক রোজগার করার মতো কাজে যুক্ত নয়। শ্রমের বাজারে এত বিপুল শ্রমিকের জোগান থাকলে পুঁজি মালিকরা অতি সস্তায় শ্রমিক পেতে পারে। যার ফলে এখন বেসরকারি ক্ষেত্রে তো বটেই, সরকারি ক্ষেত্রেও স্থায়ী চাকরি, সুনির্দিষ্ট স্কেলে বেতন, সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ ইত্যাদি প্রায় বিলোপের পথে। অর্থনীতির গবেষকরা দেখিয়েছেন, ১৯৫০-এ ভারতের মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ০.৭৫ শতাংশ মজুরি বা বেতন বাবদ খরচ হত, ২০১৯-এ তা দাঁড়িয়ে ০.৫ শতাংশে (ফ্রেড ইকনমিক ডাটা, সেন্ট লুইস, সোর্স ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া)। ভারতের জিডিপি-র আয়তন বেড়েছে বিরাট। শ্রমিকের সংখ্যাও ১৯৫০-এর তুলনায় অনেক বেড়েছে। অথচ তাদের মোট প্রাপ্য কমেছে। শতাংশের হিসাবে পুরোটা বোঝা যাবে না, মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব হিসাবে নিলে টাকার অঙ্কে সাধারণ শ্রমিকের প্রকৃত আয় কমেছে চূড়ান্তভাবে। এ দেশের একাধিক গবেষণাও দেখিয়েছে ১৯৯০-এ অর্থনীতির উদারিকরণের পর থেকে ক্রমাগত উৎপাদিত মূল্যের নিরিখে শ্রমিকের ভাগ কমেছে।

কর্পোরেট পুঁজি মালিক ও তাদের প্রতিনিধি আমলারা দোষ চাপাচ্ছেন শ্রমিকের উৎপাদনশীলতার ওপর। তাঁদের কথায়, ভারতের শ্রমিকের উৎপাদশীলতা চিনের শ্রমিকের থেকে কম। সে জন্যই তাদের প্রাপ্য কম। কিন্তু তাঁরা যদি দয়া করে বলে দিতেন, উৎপাদশীলতা কম, অথচ এই শ্রমিক বাহিনীর শ্রম নিংড়ে তাঁদের মুনাফাটি ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হতে পারল কী করে? কর্পোরেট কোম্পানির সিইও থেকে এমডি অর্থাৎ মালিকদের বেতনের নামে প্রাপ্য অংশ বেড়ে যাচ্ছে কোন যাদুতে? কোন যাদুতে দেশের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনকুবের জাতীয় আয়ের ২২ শতাংশ দখল করে? কার শক্তিতে মোট সম্পদের ৪০ শতাংশ যায় ধনকুবেরদের কবলেই? সে এমন যাদু, যার ফলে হাড়ভাঙা খেটেও জনগণের ৫০ শতাংশ সব মিলিয়ে আয় করতে পারে জাতীয় আয়ের মাত্র ১৩ শতাংশ! তাদের ভাগে পড়ে থাকে মোট সম্পদের মাত্র ৬.৪ শতাংশ (ফ্রন্টলাইন, ২৩.০৩.২৪)। এই তথাকথিত ‘কম উৎপাদনশীল’ শ্রমিকরাই তো এই অসাম্যের বোঝা বহন করে ধনকুবেরদের ধনের পাহাড় গড়েছেন! তাঁরাই তো নরেন্দ্র মোদি সাহেবের কথিত ভারতের আর্থিক বৃদ্ধিকে বিশ্বের পঞ্চম স্থানে নিয়ে গেছেন! এর পরেও শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াবার লক্ষে্য সপ্তাহে ৭০ ঘন্টা কাজ, শ্রমকোডের মাধ্যমে শ্রমিকের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের মুখ বুজে খেটে চলা ভারবাহী পশুর স্তরে নামিয়ে আনার অনেক চেষ্টা চলছে।

আজ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সংকট এতটাই যে, ধনকুবের মালিকরা তাদের সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য কোথাও সামান্য এতটুকু ছাড় দিতে রাজি নয়। আগে অন্তত শ্রমিক যাতে পরের দিন কাজে আসতে পারে তার জন্য তাকে বাঁচিয়ে রাখার মতো মজুরি দেওয়ার দায় মালিকদের ছিল। কিন্তু এখন অদক্ষ শ্রমিকের কথা ছেড়ে দিলেও দক্ষ এমনকি ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রিধারী শ্রমিকই এত উদ্বৃত্ত যে, শ্রমের বাজারে অতি সস্তায় শ্রমিক পেতে অসুবিধা নেই। পুঁজিবাদী পণ্ডিতরা দেখাতে চাইছেন, শ্রমের উৎপাদশীলতা কম, তাই তাদের মজুরি কম হচ্ছে! অথচ ১৮৪৭-৪৮ সালেই শ্রমিক শ্রেণির মুক্তিপথের দিশারি মহান কার্ল মার্ক্স একেবারে বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, ‘‘উৎপাদনশীল পুঁজি যতই বেড়ে যায়, শ্রম বিভাগ এবং যন্ত্রপাতির প্রচলনেরও ততই প্রসার ঘটে। শ্রম বিভাগ এবং যন্ত্রপাতির প্রচলন যতই বেড়ে চলে শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও ততই বাড়ে, মজুরিও ততই কমে যায়।’’ (কার্ল মার্ক্স, মজুরি-শ্রম ও পুঁজি) ওই রচনাতেই মার্ক্স দেখিয়েছেন, শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বাড়লে, বা যন্ত্রপাতির উন্নতি হলে একই পরিমাণ শ্রমের সাহায্যে পুঁজিপতিরা বেশি বিনিময়-মূল্য অর্জন করে। এ ক্ষেত্রে নিট মুনাফা যত বাড়ে, তার অনুপাতে মজুরি কমে যায়। তিনি দেখিয়েছেন ‘মুনাফা বেড়ে যাওয়ার ফলেই মজুরিটা কমে গেল’ (ওই)। এখানে উৎপাদনশীল পুঁজি বলতে যন্ত্রপাতির উন্নতি, শ্রমিকের দক্ষতা, তার উৎপাদনশীলতা ইত্যাদির বৃদ্ধির কথাই বলা হয়েছে। তাহলে ‘কম উৎপাদনশীল’ তাই শ্রমিকের মজুরি কম হচ্ছে, এই তত্ত্ব খাটছে কি? বরং সত্যটা এর ঠিক বিপরীত। মুনাফা সর্বোচ্চ জায়গায় নিয়ে যেতে গেলে পুঁজির অন্য কোনও ক্ষেত্রে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। একমাত্র শ্রমিকের ন্যায্য প্রাপ্য বঞ্চিত করেই মুনাফা বাড়ছ।

এখানেই মূর্তি সাহেব কিংবা অনন্ত নাগেশ্বরন সাহেবদের আশঙ্কা। তাঁরা পুঁজিবাদের সামগ্রিক স্বার্থের কথা ভেবে একটু মানবিক পুলটিশ লাগিয়ে শোষণের ক্ষতটাকে ঢাকতে চান। ‘কমপ্যাশনেট ক্যাপিটালিজম’, ‘হিউম্যান ফেস অফ ক্যাপিটালিজ’– এই সব কথা প্রথম শোনা যাচ্ছে না। বহুদিন ধরেই একদল পুঁজিবাদী তাত্ত্বিক বলে চলেছেন, সমাজে বিপুল আর্থিক বৈষম্য কমাতে কিছুটা ধনবণ্টনের রাস্তায় হাঁটতে হবে। বুর্জোয়া অর্থনীতিবিদ কেইনস থেকে শুরু করে একেবারে হাল আমলের টমাস পিকেটি কিংবা নোবেলপ্রাপ্ত একাধিক অর্থনীতিবিদ বলে চলেছেন পুঁজিপতিরা মমুনাফা করুক, কিন্তু দেশের মানুষের হাতে অন্তত কিছু অর্থ দেওয়া হোক। না হলে সংকটের ভারে পুরো ব্যবস্থাটাই অচিরে ভেঙে পড়বে। সরকারগুলোও কিছু কিছু সরকারি খরচ বাড়িয়ে, মার্কিন দেশে ফুড কুপন দিয়ে, ভারতে রেশনে বিনামূল্যে চাল দিয়ে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কিংবা লাডলি বহিন যোজনা ইত্যাদি দিয়ে একটু হলেও মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

নারায়ণমূর্তি সাহেবদের প্রেসক্রিপশনে হয়ত কিছু কর্পোরেট মালিক বস্ত্র বিতরণ কিংবা লঙ্গরখানার মতো ‘সেবা’ শুরু করতেও পারেন। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নিয়মই বলছে, মালিকের মুনাফা বাড়লে শ্রমিকের আয় কমবে। একচেটিয়া পুঁজি ছোট পুঁজিকে ক্রমাগত গ্রাস করবে। ফলে দুই-চারটি ক্ষতস্থানে পুলটিশ লাগিয়ে এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পুরো পচা দেহটাকে আড়াল করার চেষ্টা নিছক বাতুলতা। এই ব্যবস্থাটি টিকিয়ে রেখে এই সংকটের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কল্পনা একেবারেই অবাস্তব।