এ আই ডি এস ও–র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক ২০ মে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যখন সারা দেশ জুড়ে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ‘মহা উৎসব’ চলছে, দেশবাসীর বিপুল উন্নয়ন সাধনের জন্য নেতা–মন্ত্রীরা প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে দেশের অন্যতম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীতে বিপুল ফি–বৃদ্ধির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হল৷ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছেন বিশ্বভারতীর ইউজি, পিজি–র সব বিভাগ, গবেষণা সহ সকল ক্ষেত্রে এ দেশের ছাত্রদের এ বছর ভর্তির জন্য ফর্ম ফিল–আপ ফি এবং ভর্তি ফি গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ এবং বিদেশি সার্কভুক্ত দেশগুলির জন্য পাঁচ গুণ ও সার্ক বহির্ভূত দেশগুলির জন্য দশগুণ বৃদ্ধি করা হল৷ ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দরিদ্র–মধ্যবিত্ত মেধাবী ছাত্রদের বিশ্বভারতীতে প্রবেশের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ফরমান জারি করলেন৷
এমন একটি সময়ে এই ফরমান জারি করা হল যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত বিভাগে সেমেস্টার পরীক্ষা চলছে৷ যাতে ছাত্র–ছাত্রীরা প্রতিবাদ–প্রতিরোধে নামতে না পারেন৷ কিন্তু বিপুল এই ফি বৃদ্ধির (যেমন স্নাতক স্তরে গত বছর ভর্তি ফি ছিল– ১,০০০ টাকা, যা বেড়ে এ বছর হয়েছে ২০০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত৷ স্নাতকোত্তর স্তরে ছিল ১,৫০০ টাকা, বেড়ে হয়েছে ৩,০০০–৬,০০০ টাকা পর্যন্ত৷ পিএইচডিতে ছিল ৩,০০০ টাকা, হয়েছে ৮,০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত৷ সার্ক ও সার্ক বহির্ভূত দেশগুলির ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৫ ও ১০গুণ)৷ এই ঘৃণ্য ফরমানের বিরুদ্ধে সমস্ত ছাত্রছাত্রী প্রতিবাদ–প্রতিরোধে সামিল হয়েছেন৷ প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ–অবস্থান–মিছিল-ঘেরাও করছেন৷ গড়ে তুলেছেন ছাত্রছাত্রীদের ঐক্য মঞ্চ৷ লজ্জার বিষয়, রবীন্দ্রচিন্তাকে দু’পায়ে মাড়িয়ে শিক্ষার পণ্যায়নে ব্যগ্র কেন্দ্রীয় সরকার ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ একদিকে রবীন্দ্রপূজার চমক দেখাচ্ছেন অন্য দিকে মেধাকে শান্তিনিকেতন থেকে বিতাড়িত করছেন৷ আরও লজ্জার, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে উপাচার্য আন্দোলনকারী ছাত্র–ছাত্রীদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করছেন না৷ টানা কয়েকদিন আন্দোলনের চাপে বিশেষত ১৯ মে মধ্যরাত পর্যন্ত রেজিস্ট্রারকে ঘেরাও–এর ফলে ২১ মে ছাত্রদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন৷
আমরা ন্যায়সঙ্গত দাবিতে আন্দোলনকারী এই ছাত্রছাত্রীদের সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি ও অযৌক্তিক বিপুল ফি–বৃদ্ধি বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে তার পাশে দাঁড়াতে সারা রাজ্যের ছাত্রসমাজের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি৷ আমরা দাবি করছি বিশ্বভারতীর ছাত্র–ছাত্রীদের উত্থাপিত অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত এই দাবি মেনে অবিলম্বে সকল বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করতে হবে৷ রবীন্দ্রচিন্তা তথা সকলের জন্য গণতান্ত্রিক শিক্ষাবিরোধী কোনও প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা চলবে না৷’