বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা কমরেড শঙ্কর সাহার জীবনাবসান

এস ইউ সি আই (সি) দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটবুরো সদস্য, এ আই ইউ টি ইউ সি-র সর্বভারতীয় সভাপতি এবং এ দেশের বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা কমরেড শঙ্কর সাহা ৩১ মে সকালে ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

১২ এপ্রিল কমরেড শঙ্কর সাহা প্রবল জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষায় দেখা যায় তিনি কোভিডে আক্রান্ত। প্রাথমিকভাবে তাঁর অবস্থা অনেকটা স্থিতিশীল থাকলেও পরে প্রবল অস্থিরতা এবং জটিল নিউমোনিয়া দেখা দেয়। ২৭ এপ্রিল তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর ৮ মে তাঁর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু তাঁর কিডনি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাঁকে কয়েকবার হিমোডায়ালিসিস দিতে হয়। ধীরে ধীরে তাঁর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক পর্যায়ে চলে যায়। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা সত্তে্বও তাঁর জীবন রক্ষা করা যায়নি।

কমরেড শঙ্কর সাহার মৃত্যুসংবাদে সারা দেশে দলের কর্মী-সমর্থক এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর বিপ্লবী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি তিন দিন শোক পালনের আহ্বান জানায়। ২ জুন পর্যন্ত সমস্ত দলীয় কার্যালয়ে রক্তপতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটাল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কমরেড শঙ্কর সাহাকে প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মীরা মাল্যদান করে চোখের জলে বিদায় জানান। বেলা দু’টোর সময় ৪৮ লেনিন সরণিতে দলের কেন্দ্রীয় অফিসে তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হয়। ততক্ষণে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা লকডাউনের মধ্যেই কেউ পায়ে হেঁটে কেউ সাইকেল কিংবা অন্য কোনও উপায়ে এসে উপস্থিত হয়েছেন প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে। কমরেডদের সমবেত লাল সেলাম স্লোগানের মধ্যে লাল কাপড়ে মোড়া টেবিলে শোয়ানো হয় প্রয়াত নেতার মরদেহ। শুরু হয় শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের অনুষ্ঠান।

প্রথমেই দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের পক্ষে মাল্যদান করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং অফিস সম্পাদক কমরেড স্বপন ঘোষ। তারপর একে একে প্রবীণ পলিটবুরো সদস্য কমরেড অসিত ভট্টাচার্যের পক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মানব বেরা, কমরেড মানিক মুখার্জীর পক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড অমিতাভ চ্যাটার্জী মাল্যদান করেন। শ্রদ্ধা জানান পলিটবুরো সদস্য কমরেড সৌমেন বসু এবং কমরেড গোপাল কুণ্ডু। পলিটবুরো সদস্য কমরেড রাধাকৃষ্ণ, কমরেড সত্যবানের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানিয়ে মাল্যদান হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড ছায়া মুখার্জী সহ উপস্থিত কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃবৃন্দ সহ কর্মী-সমর্থকরা শ্রদ্ধা জনান। কমরেড শিবদাস ঘোষ স্মরণে রচিত সঙ্গীত এবং আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের পর কমরেড শঙ্কর সাহা লাল সেলাম ধ্বনিতে কমরেডরা তাঁকে বিদায় জানান।

মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় এ আই ইউ টি ইউ সি-র কেন্দ্রীয় অফিসে। যে অফিসের সাথে বহু বছর জড়িয়ে আছে কমরেড শঙ্কর সাহার বিপ্লবী জীবনের স্মৃতি। সেখানে মাল্যদানের পর শুরু হয় শেষ যাত্রা। রক্তপতাকাবাহী বাইকের সারিবদ্ধ মিছিল সহকারে কমরেডরা নিয়ে যান প্রিয় নেতার মরদেহবাহী গাড়ি। মিছিল পৌঁছায় কেওড়াতলা শ্মশানে। অশ্রুসজল চোখে মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে বিপ্লবী অভিবাদনের সঙ্গে তাঁকে বিদায় জানান নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।

কমরেড শঙ্কর সাহার মৃত্যুতে ভারতের সর্বহারা বিপ্লবী আন্দোলন এবং শ্রমিক আন্দোলন গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হল।

কমরেড শঙ্কর সাহা লাল সেলাম

গণদাবী ৭৩ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা