এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর বিহার রাজ্য কমিটির প্রবীণ সদস্য এবং অল ইন্ডিয়া কিষাণ-খেতমজদুর সংগঠনের বিহার রাজ্য সম্পাদক কমরেড অশোক কুমার সিং গত ১ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সেদিনই মজফফরপুরে এক পথ দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্মক আহত হন। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তাঁর প্রাণ বাঁচানো যায়নি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
১৯৭০-এর দশকে যখন দেশে কংগ্রেস সরকারের জনবিরোধী নীতি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন চলছে, সেই সময় ছাত্রবয়সে কমরেড অশোক সিং নকশাল আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। এ সময় জেলে থাকাকালীন তিনি এস ইউ সি আই (সি)-র প্রাক্তন বিহার রাজ্য সম্পাদক কমরেড শিবশঙ্করের মাধ্যমে সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তার সংস্পর্শে আসেন। ১৯৭২ সালে জেল থেকে বেরিয়ে তিনি এস ইউ সি আই (সি)-র সাথে যুক্ত হন। দলের কৃষক-খেতমজুর সংগঠনের কর্মসূচিগুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। দ্বারভাঙা জেলায় পার্টির সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বিহারের বিশেষ সমস্যা, বন্যা-খরা, ইত্যাদির স্থায়ী সমাধানে সমস্ত বাম দলগুলির যৌথ আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলনের প্রথম রাজ্য স্তরের কনভেনশন দ্বারভাঙা জেলায় আয়োজিত হয়েছিল। এই আয়োজনেও কমরেড অশোক কুমার সিং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। এ আন্দোলন আজও চলছে। ২০০৭ সালে গুজরাটের সুরাটে প্রবাসী শ্রমিকদের সম্মেলনে তিনি বিহার রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ২০০৯-‘১০ সালে মজফফরপুরে কৃষিজমিতে অ্যাসবেস্টস কারখানা নির্মানের বিরুদ্ধে ‘খেত বচাও জীবন বচাও জন সংঘর্ষ কমিটি’র আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। এ জন্য পুলিশি হামলার শিকার পর্যন্ত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের জয় হয়। মধুবনী জেলায় ৩৫০ একর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে চিনিকল নির্মাণের বিরুদ্ধে পার্টির আন্দোলনেও তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে। এই আন্দোলনও জয়ী হয়েছিল।
কৃষক আন্দোলনে থাকলেও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কর্মসূচি কিংবা সেভ এডুকেশন কমিটির কর্মসূচি, সবেতেই কমরেড অশোক কুমার সিং সমান উদ্যোগ নিতেন। এআইকেকেএমএস-এর রাজ্য সম্পাদক হিসাবে সংগঠনের বিস্তারের জন্য সদাসক্রিয় থাকতেন তিনি। খরা সমস্যা নিয়ে তালিনাড়ূর কৃষকরা যখন সংসদে ধর্না দেন এবং অনশন করেন, এআইকেকেএমএস-এর প্রতিনিধি দল তাঁদের সাথে দেখা করতে গেলে সেই দলেও ছিলেন কমরেড অশোক কুমার সিং।
তিনি সবসময় কমরেডদের সংস্পর্শে থাকতেন। তাঁদের বিকাশের ক্ষেত্রে কিছু মনে হলে বলতেন, সমালোচনা-আত্মসমালোচনায় সক্রিয় অংশ নিতেন। সমষ্টির মত বা সিদ্ধান্ত মেনে চলার আন্তরিক চেষ্টা করতেন। ছোটদের অত্যন্ত খেয়াল রাখতেন। সম্ভাবনাময় কমরেডদের বিশেষ যত্ন নিতেন। তাঁর গোটা পরিবারকে তিনি পার্টির সাথে যুক্ত করেছেন। তাঁর সন্তান দলের সর্বক্ষণের কর্মী।
কমরেড অশোক কুমার সিং-এর জীবনাবসানে কৃষক আন্দোলনের অত্যন্ত ক্ষতি হল। এস ইউ সি আই (সি) হারালো এক বলিষ্ঠ নেতাকে।
কমরেড অশোক কুমার সিং লাল সেলাম