বিপ্লবী স্পর্ধায় উদ্দীপ্ত মিছিল

মিছিলে পা মিলিয়েছেন আইনজীবীরা

২১ জানুয়ারি। বিশ্বে শোষণহীন প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রূপকার মহান লেনিনের মৃত্যুদিন। বিশ্বের মেহনতি মানুষ দিনটিকে বিপ্লবী শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। এ দিনটির সাথে মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের স্মৃতি জড়িয়ে। দুনিয়ার প্রথম শোষণহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে। তিনি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কত শত বছরের শোষণ-যন্ত্রণাকে উৎখাত করেছিলেন, কত লক্ষ মানুষের জীবন করে তুলেছিলেন মর্যাদাময়। এ বছরও এসেছে ওই স্মরণীয় দিন, আন্দোলনের শপথকে আরও তেজোদীপ্ত করার ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার স্থির লক্ষ্যে এ দেশে সাধারণ মানুষের প্রতিটি দাবি নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তুলেছে এসইউসিআই (সি) দল। এর মধ্যেই ঘটে গেছে আর জি করে কর্মরত চিকিৎসক অভয়ার উপর পাশবিক নির্যাতন ও পরিকল্পিত ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড। অভয়ার ন্যায় বিচার এবং গরিব, মেহনতি মানুষের শিক্ষা-স্বাস্থ্য, শ্রমিক-কৃষকের অধিকার কেড়ে নেওয়া ও বিদ্যুৎ মাশুল বৃদ্ধি, মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ২১ জানুয়ারিই ডাক দেওয়া হয়েছিল মহামিছিলের। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদকে হাতিয়ার করে বিপ্লবী স্পর্ধা বুকে নিয়ে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের ঢেউ আছড়ে পড়ল মিছিল শুরু হতেই। সুবিশাল ‘জন-তরঙ্গে’ সাথে সাথেই শোনা গেল স্লোগানের মূহুর্মূহু গর্জন।

হেদুয়াতে সমাবেশে নেতৃবৃন্দের গণআন্দোলনকে আরও জোরালো করার আহ্বান বাজছে মিছিলে পা মেলানো মানুষের কানে, বুকে শিহরণ জাগিয়ে চলেছে ‘রক্তপতাকা হাতে দাঁড়িয়ে কমরেড লেনিন’ সঙ্গীত। সূদুর দার্জিলিংয়ের চা-শ্রমিক মায়েরা যেমন মিছিলে পা মিলিয়েছেন ছোট সন্তান কোলে নিয়ে, তেমনই সুন্দরবনে বাঘ-কুমিরের সাথে লড়াই করে দিন কাটান যে মৎস্যজীবীরা, তাঁরাও এসেছেন জীবনযন্ত্রণাকে সঙ্গী করে। বর্ধমানের খেতমজুর থেকে শুরু করে নদীয়ার পাটচাষিরাও নিজেদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের প্রেরণা সংগ্রহ করতে যোগ দিয়েছেন এই জনসমুদ্রে। অসংখ্য মহিলা এসেছেন ঘরে-বাইরে তাদের উপর ঘটে চলা অসম্মানের প্রতিকার চাইতে। পাচার হয়ে যাওয়া কিশোরীর মা থেকে শুরু করে পণপ্রথার বলি মেয়ের মা ‘জাস্টিস’ চাইতে গলা মিলিয়েছেন মিছিলে। মিছিলের দাবি অনেক। প্রতিটি দাবি নিয়ে এগিয়ে চলেছে সুসজ্জিত ট্যাবলো। তার পিছনে সারি দিয়ে চলেছেন দলের কর্মীরা। কে নেই মিছিলে! পা মিলিয়েছেন ছাত্র-শিক্ষক, ব্যাঙ্ক কর্মচারী, বিড়ি শ্রমিক-কৃষক-পরিচারিকা-ভ্যান রিক্সা চালক-মুটে মজদুর সকলেই। এ মিছিল যে তাদের সকলের বাঁচার দাবিকেই তুলে ধরছে।

মিছিল যত এগোচ্ছে ততই রাস্তার দু’দিকে সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়ছে, তার মধ্য থেকে ভেসে আসছে উচ্ছাস– ‘এরাই পারবে’, ‘মিছিলের এরকম মেজাজ আগে কখনও দেখিনি’! মিছিলের নির্দিষ্ট রাস্তা যথার্থই পরিণত হয়েছে জনপ্লাবনে। এ মিছিল অনেক না-পাওয়ার মাঝে একটু পাওয়া, অনেক দুঃখ-যন্ত্রণার মাঝে একটুকরো ভাল লাগার দমকা হাওয়া। এতে মিলেমিশে রয়েছে অসংখ্য মানুষের অনেক কষ্ট, অনেক আশা-আকাঙ্খা, আবার রয়েছে সকলের সাথে একত্রে পথচলার আনন্দ। এখানে নেই ব্যক্তিগত স্বার্থে চিন্তার অবকাশ। রয়েছে সকলের দাবি নিয়ে জোটবেঁধে চলার অম্লান আনন্দের রেশ।

টানা প্রায় আড়াই ঘণ্টার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মিছিল পৌঁছল এসপ্ল্যানেডে। তখনও সফল মহামিছিলের আনন্দে নিজেকে জারিত করছেন অসংখ্য মানুষ, পরবর্তী প্রজন্মকে নতুন সূর্যোদয়ের পথে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছেন তারা।

যতদিন না দাবি অর্জিত হচ্ছে, যতদিন না শোষিত মানুষের উপর মালিকী শোষণ বন্ধ হচ্ছে, ততদিন চলবে গরিব-মেহনতি মানুষের পথ হাঁটা। সেই দিকনির্দেশ করেছেন বিশ্বে মানবমুক্তির অগ্রদূত মহান লেনিন। তাঁর আদর্শে বলিয়ান হয়ে এ দেশে সমাজবিপ্লবের পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)। তা উপলব্ধি করেআরও দৃঢ়পণ হচ্ছেন মিছিলে আগত হাজার হাজার মানুষ। বিপ্লব সফল করে তোলার বহু লালিত স্বপ্নকে বাস্তবের মাটিতে রূপ দিতে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুঁড়ছেন উর্ধ্বে।