বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পক্ষে নির্লজ্জ ওকালতি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর

 

দেশের কোটি কোটি বিদ্যুৎ গ্রাহককে স্তম্ভিত করে ৭ জুলাই কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লার দাম দেশি কয়লার চেয়ে ৯ গুণ বেশি হওয়ায় বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৬০ থেকে ৮০ পয়সা বাড়াতে হবে।

এর তীব্র প্রতিবাদ করে অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন (অ্যাবেকা)-র সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বিশ্বাস ১২ জুলাই এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করার নির্দেশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গভীর রহস্যাবৃত। কারণ এ বছর গরমের শুরুতেই বিদ্যুৎ সংকট প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেছিলেন, বিদ্যুতের সংকট মোকাবিলা করতে প্রয়োজনের ১০ শতাংশ কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করতেই হবে। কেন্দ্রীয় সরকার কোল ইন্ডিয়াকে বাধ্য করেছিল ২৪ লক্ষ টন কয়লা আমদানি করতে। মন্ত্রী এমনও হুঁশিয়ারি দিলেন, যে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বিদেশ থেকে কয়লা আমদানির নির্দেশ মানবে না, তাদের প্রয়োজনের ৬০ শতাংশের বেশি দেশীয় কয়লা দেওয়া হবে না (আনন্দবাজার পত্রিকা ১০-৬-২২)।

হঠাৎ মন্ত্রীর এমন ফতোয়া কেন? দেশে যথেষ্ট পরিমাণ কয়লা মজুত থাকা সত্তে্বও কেন বিদেশ থেকে আনার এত তৎপরতা? কোল ইন্ডিয়ারও বক্তব্য, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কারণ দেশীয় কয়লার জোগানে ঘাটতি নয়। এপ্রিল-মে মাসে তারা ১০.২৫ কোটি টন কয়লা সরবরাহ করেছে যা গত বছরের থেকে ১৬.৭ শতাংশ বেশি। বরং কেন্দ্রীয় সরকার রেলের রেক প্রয়োজন মতো সরবরাহ না করায় কয়লা সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী বলেছেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজন মতো কয়লা মজুত ছিল এবং প্রতিদিনের হিসাবে তা পাঠানোও হয়েছে। অথচ প্রচার করে করে এমন অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, যাতে মনে হয় চার-পাঁচ দিন পরে আলো চলে যাবে। আসলে তা প্রচার করা হচ্ছিল যাতে মানুষ বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি মেনে নেয় (আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৮-৬-২২)। প্রসঙ্গত, কোল ইন্ডিয়ার উদ্বৃত্ত ৩৫,০০০ কোটি টাকা হস্তগত করে কেন্দ্রীয় সরকার ঘাটতি বাজেট মিটিয়েছে, যা নতুন কয়লাখনি খুলে কয়লা উৎপাদন বাড়াতে ব্যবহার করা যেত।

সকলেই জানেন, টাটা, আদানি, গোয়েঙ্কা, টোরেন্টো, এসার সহ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী একচেটিয়া পুঁজিপতিরা ওভার ইনভয়েসিং করে বিদেশ থেকে এবং বিদেশে তাদের নিজস্ব খনি থেকে (যেমন অস্ট্রেলিয়ায় আদানির খনি) বহুগুণ বেশি দাম দেখিয়ে কয়লা আমদানি করে ও সেই অজুহাতেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেশি দেখায়। দেশের সরকার জনগণকে বাড়তি দামে সেই বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য করে।ফলে এটা স্পষ্ট, একচেটিয়া পুঁজিপতিদের স্বার্থেই কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর বিদ্যুতের মাশুল বাড়ানোর নির্লজ্জ সওয়াল। দেশের তথা রাজ্যের সমস্ত স্তরের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছে আবেদন, এই ঘৃণ্য পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদে সামিল হোন।