১৪ জানুয়ারি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজগুলির তৃতীয় বর্ষের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট রাত দশটা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখল৷ বিশাল পুলিশবাহিনী নামিয়েও আন্দোলন দমন করতে পারল না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷
ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে ১১ জানুয়ারি আচমকা তৃতীয় বর্ষের লিখিত পরীক্ষার দিন ঘোষণা করা হয় ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে৷ তারও অনেক আগে থেকে প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা হবে৷ যা শিক্ষাবর্ষের নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় দু’মাস আগে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে খবরটা দেখার পরে ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক সকলেই হতবাক হয়ে পড়েন৷ কারণ বেশিরভাগ কলেজে সিলেবাসই শেষ হয়নি৷ কেবলমাত্র নির্বাচনের কারণে সিলেবাস শেষ হওয়ার আগেই পরীক্ষা দিতে হবে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে ছাত্ররা৷ ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও প্রথম থেকেই বিক্ষোভকে সংগঠিত প্রতিবাদের রূপ দিতে সক্রিয় হয় এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসকের দপ্তরে বিক্ষোভ দেখায়৷ বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা সিদ্ধান্ত নেয় ১৪ জানুয়ারি তারা একত্রিত হয়ে উপাচার্যের সাথে দেখা করতে যাবে৷ ওই দিন সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছায় এবং তাদের প্রতিনিধিরা উপাচার্যের সাথে দেখা করতে চায়৷ অনুমতি না দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি গেটই অবরোধ করে বসে থাকে তারা৷ স্লোগান ওঠে, সিলেবাস শেষ না করে পরীক্ষা নেওয়া চলবে না৷ ছাত্রদের অনমনীয় মনোভাব দেখে কর্তৃপক্ষ আন্দোলন ভাঙতে ছাত্র ইউনিয়নের টিএমসিপির মস্তান বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়৷ ক্যাম্পাসের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নামে RAF নামায়৷ ছাত্রীদের মনোবল ভাঙতে অশ্লীল আচরণ করতে থাকে৷ তবু ছাত্রছাত্রীদের একবিন্দু টলানো যায়নি৷ কলেজ হোস্টেলগুলি থেকে খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আন্দোলনরত বন্ধুদের পাশে দাঁড়াতে থাকে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা৷
প্রবল শীতে রাত পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের এই অটুট মনোভাবের কাছে একযোগে নতিস্বীকার করতে হয় টিএমসিপি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ বাহিনীকে৷ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে মার্চের শেষ সপ্তাহে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হবে৷ সমস্ত প্রতিকূল শক্তির সাথে লড়াই করে জয় হয় আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের৷ এআইডিএসও–র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক কমরেড অনুপ মাইতি ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক কমরেড ব্রতীন দাস যৌথ বিবৃতিতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলনকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানান৷ আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের উপর টিএমসিপি–র ঘৃণ্য আক্রমণ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার প্রতিবাদে ১৬ জানুয়ারি দুই জেলা জুড়ে প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়৷