বিজেপি সরকারের কৃষক বিরোধী কর্পোরেট স্বার্থবাহী নীতির বিরুদ্ধে শহিদ মিনারে কৃষক সমাবেশের ডাক

বিজেপি সরকারের কৃষি ও কৃষক বিরোধী এবং কর্পোরেট স্বার্থবাহী নীতির বিরুদ্ধে ২৫ ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনার ময়দানে কৃষক ও গ্রামীণ মজুর মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে এআইকেকেএমএস।

সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কমরেড গোপাল বিশ্বাস বলেন, আমাদের দেশের কৃষক ও খেতমজুর জীবন ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সার বীজ কীটনাশক ইত্যাদি কৃষি উপকরণের দাম লাফিয়ে বাড়ছে কিন্তু চাষি তার ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না। ঋণভারে জর্জরিত কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। কৃষকদের উচ্ছেদ করে জল-জমি-জঙ্গল কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ফসলের উৎপাদন খরচের দেড়গুণ (সি ২ প্লাস ৫০ শতাংশ) হারে এমএসপির দাবিতে চাষিরা দীর্ঘদিন লড়াই করছে।

কংগ্রেস সরকারের মতো বিজেপি সরকারও এই দাবি মানছে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা হবে। বাস্তবে চাষির আয় তো বাড়েইনি বরং ঋণের বোঝা আরও ভারী হচ্ছে। নয়া বিদ্যুৎ বিল আনা হয়েছে ক্ষেত্রটি কর্পোরেটের হাতে তুলে দিতে এবং প্রিপেড স্মার্ট মিটার চালু করা হচ্ছে গ্রাহকদের লুটতে। খেতমজুরদের বছরে দু-তিন মাসের বেশি কাজ থাকে না। কাজের সন্ধানে ঘরবাড়ি ছেড়ে দূর দেশে চলে যেতে হয়। এনরেগা প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজও সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও বিভিন্ন রাজ্যের সরকারগুলো সংকটগ্রস্ত পুঁজিবাদকে বাঁচানোর লক্ষ্যে কর্পোরেট স্বার্থবাহী নীতি অনুসরণ করে সমস্ত সংকটের বোঝা কৃষক-খেতমজুর সহ সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।

দিল্লিতে কৃষকরা ঐতিহাসিক লড়াই করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তিনটি কালা কৃষি আইন বাতিল করতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু বিজেপি সরকার কর্পোরেট প্রভুদের সেবা করার জন্য পিছন দরজা দিয়ে আবারও ভয়ঙ্কর সেই কৃষিনীতিকেই ফিরিয়ে আনতে চাইছে। গত ২৫ নভেম্বর জাতীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘ন্যাশনাল পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক অন এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং’– এই শিরোনামে একটা খসড়া নীতি নিয়ে এসেছে, যা তিনটি কালা কৃষি আইনের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এই বিলে বলা হয়েছে, কৃষি বিপণনের জন্য দেশের এপিএমসি মান্ডি সহ সমস্ত গ্রামীণ হাট কর্পোরেটের় নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হবে, চুক্তিচাষ আইনসিদ্ধ করা হবে। এক কথায় চাল, গম, ডাল, মাছ-মাংস-দুধ সহ সমস্ত কৃষিপণ্য কর্পোরেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এর ফলে সমস্ত খাদ্যদ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হবে। চাষিরা কোম্পানির গোলামে পরিণত হবে, কোটি কোটি মানুষ জীবিকা হারাবে।

তাহলে উপায় কী? উপায় একটাই, কৃষক খেতমজুরদের সংগঠিত করে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা। এই লক্ষ্য সামনে রেখে এ আই কে কে এম এস গ্রামে গ্রামে কৃষক খেতমজুরদের সংগ্র্রামের হাতিয়ার গ্র্রাম কমিটি গড়ে তুলছে। এই আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের ১৮টি রাজ্যের রাজধানীতে ব্যাপক কৃষক ও গ্রামীণ মজুরদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন কলকাতার শহিদ মিনার ময়দানে বেলা ২ টায় এক মহাসমাবেশের আহ্বান করা হয়েছে। এই মহাসমাবেশ সফল করার জন্য রাজ্যের সমস্ত কৃষক, গ্রামীণ মজুর সহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে সংগঠন।