মিড–ডে মিল, ঢালাও পাশ, বয়স অনুসারে যখন খুশি স্কুলে ভর্তি ইত্যাদি কোনও ব্যবস্থার দ্বারাই স্কুল ছুট রোখা যাচ্ছে না৷ পেন্সিলে চড়ে ছাত্রছাত্রীর স্কুলমুখী ছবির রঙচঙে বিজ্ঞাপনে স্কুলের দেওয়াল, সংবাদপত্রের পাতা, টিভি চ্যানেলগুলো ছয়লাপ হয়ে গিয়েছিল এক সময়৷ কিন্তু তাতে কি কিছু লাভ হয়েছে? বাস্তব বলছে দেওয়ালের সেই বিজ্ঞাপনে যতদিনে ময়লার ছোপ ধরেছে, তার অনেক আগেই শিক্ষার অধিকার আইনের কার্যকারিতার রঙিন ফানুসটি চুপসে গেছে৷
এবছর ১৮ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে স্ট্যাটাস অফ এডুকেশন রিপোর্ট৷ ২০১৬ সালে ৫৮৯টি গ্রাম ভিত্তিক জেলার, ১৭,৪৭৩টি গ্রামের ৩,৫০,২৩২টি বাড়িতে ৫, ৬২,৩০৫টি ছাত্র ছাত্রীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে তৈরি হয়েছে এই রিপোর্ট৷ রিপোর্ট মোতাবেক ২০১৪ থেকে ২০১৬ তে সারা দেশে ৬–১৪ বছর বয়সীদের স্কুলছুট অল্প কিছু কমলেও– মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, বিহার, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা বেড়েছে৷ শুধু মধ্যপ্রদেশেই– ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে স্কুলছুট ৩.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫.৮ শতাংশ হয়েছে৷ ২০১৬ সালে ওই রাজ্যে ১৫–১৬ বছর বয়সীদের ২৩.৬ শতাংশ স্কুলছুট৷ এই একই সময়ে ১৫–১৬ বছর বয়সীদের স্কুলছুটের হার উত্তরপ্রদেশে ১৮.৭ শতাংশ, ছত্তিশগড়ে ১৭.৫ শতাংশ, গুজরাটে ১৯.৩ শতাংশ, রাজস্থানে ১৬.৫ শতাংশ৷
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে স্কুলছুটের সংখ্যাবৃদ্ধি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ শিক্ষা সম্পর্কে সরকারি দৃষ্টিভঙ্গিই এই অবস্থার জন্ম দিয়েছে৷ সরকারি বাগাড়ম্বরের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে সকলের জন্য শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যটিই৷
স্কুলছুটের মূল কারণ হিসাবে যে যে কারণগুলি উঠে এসেছে – পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা, স্কুলের অভাব, স্কুল থাকলেও শিক্ষকের অভাব, পরিকাঠামোর অভাব ইত্যাদি৷ কোনও সরকারই এইসব অভাব দূর করার দিকে নজর দেয় না৷ শিক্ষার গুণগত মানের দিকে নজর দেয় না, বরং পাশ–ফেল তুলে দেওয়ার মতো সর্বনাশা সিদ্ধান্ত ও ছাত্রস্বার্থবিরোধী নানা সিদ্ধান্তের দ্বারা নাম–কা ওয়াস্তে একটা শিক্ষা তারা সাধারণ মানুষকে দিতে চায়৷ এ ব্যাপারে কংগ্রেস–বিজেপিতে কোনও ফারাক নেই৷ এই দৃষ্টিভঙ্গিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই পরিসংখ্যানে৷