গুজরাটের নির্দল বিধায়ক জিগনেশ মেবানির সাম্প্রতিক একটি টুইটকে কেন্দ্র করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এবং জামিন আটকাতে পুনরায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ঘটনায় আসামের বিজেপি পুলিশের ও সরকারের মুখ পড়ল।
১৮ এপ্রিল জিগনেশ মেবানি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে একটি টুইট করেছিলেন। এই টুইটের পরিপ্রেক্ষিতে আসামের এক বিজেপি নেতা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০ এপ্রিল সেই মামলায় তাঁকে গুজরাট থেকে গ্রেপ্তার করে আসাম পুলিশ। পুলিশ হেফাজতে ৩ দিন এবং বিচারবিভাগীয় হেফাজতে ১ দিন থাকার পর ২৫ এপ্রিল তিনি জামিন পান। কিন্তু পরক্ষণেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় আরেকটি মামলায়। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বন্দি অবস্থায় এক মহিলা পুলিশ অফিসারের শ্লীলতাহানি করেছেন।
এই দ্বিতীয় মামলাটিই আসামের বিজেপি সরকারের মুখোশ খুলে দিয়েছে। বিজেপি কীভাবে পুলিশকে চাপ দিয়ে এরকম একটি মিথ্যা মামলা সাজাতে পারল, তা এই মামলার বিচারপর্বে উঠে এসেছে। গভীর আশঙ্কায় বিচারপতি বলেছেন, এটা বন্ধ করতে না পারলে, আসাম অচিরেই পুলিশ স্টেটে পরিণত হবে, যেখানে গণতন্ত্র, ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না।
ঠিক কী বলেছিলেন বিচারপতি? বলেছেন, জিগনেশের বিরুদ্ধে আনা মামলা পুরোপুরি ‘সাজানো’। দুই অফিসারের সামনে একজন ধৃত ব্যক্তি কীভাবে এক মহিলা পুলিশ অফিসারের শ্লীলতাহানি করতে পারে–এটা বিচারকের কাছে বিস্ময়কর ঠেকেছে। পুরো ঘটনাকে ভুয়ো উল্লেখ করে তিনি পুলিশের কিছু কুকীর্তি তুলে ধরেছেন। বলেছেন, ‘পুলিশ তাদের হেফাজতে থাকা অভিযুক্তকে কীভাবে চাপ দিয়ে দোষ স্বীকার করায় তা জানা আছে’, তিনি আরও বলেছেন, অভিযুক্তকে নিয়ে পুলিশের মধ্যরাতে বেরোনো ও পরে অভিযুক্তকে গুলি করে মারা বা জখম করা এখন অসমে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” গভীর উদ্বেগে বলেছেন, এখনই এর রাশ টানা দরকার। এ জন্য তিনি কিছু সুপারিশ করেছেন। বলেছেন, গুয়াহাটি হাইকোর্ট বিষয়টিকে জনস্বার্থ মামলা হিসাবে বিচার করে পুলিশকে বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলুক। যেমন অভিযুক্তকে ধরতে যাওয়া বা তাকে নিয়ে সফর করার সময় পুলিশের গায়ে বডি ক্যামেরা ও গাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হোক। একইভাবে সিসি ক্যামেরা লাগানো হোক সব থানায়।
এই সংস্কার হলে অবশ্যই পুলিশ কিছুটা সংযত হবে। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। পুলিশকে দলদাসের মতো ব্যবহার করে তাদের দিয়ে শাসক দল যে হীন কাজ করায়় তা বন্ধ করতে হলে এবং নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে দিতে হলে গণআন্দোলনের প্রবাহ সৃষ্টি করতে হবে। মানুষ যদি অধিকারবোধে সচেতন হয়, অধিকার হরণের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়, অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে রাজপথে নামে, সরকারের প্রতিটি কাজ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অর্থে ভাল না মন্দ তাঁর ভিত্তিতে বিচার করে জনমত ব্যক্ত করে, তা হলে যে সচেতন রাজনৈতিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি হবে, সেটাই এই ধরনের ফ্যাসিস্টরাজ কায়েমের বিরুদ্ধে কার্যকরী শক্তিতে পরিণত হবে।
গুজরাটের অভিযান ম্যাগাজিনের সংবাদিক জিগনেশ যেহেতু বিজেপির বিরুদ্ধে ভূমিকা নিয়েছেন, তাই তাঁকে হেনস্থা করতে বিজেপির এই ঘৃণ্য ভূমিকা। এর বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সর্বস্তরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। গণতন্ত্র ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার ওপর আঘাত এলে প্রতিবাদী কণ্ঠ যে সোচ্চার হচ্ছে, এটাই আজ অত্যন্ত আশার কথা।