‘প্রজা হয় শুধু রাজ-বিদ্রোহী, কিন্তু কাহারে কহি, অন্যায় করে কেন হয় না’ক রাজাও প্রজাদ্রোহী!’– প্রশ্ন করেছিলেন কাজি নজরুল ইসলাম।
দেশের নাগরিকদের জীবনের প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধতা না দেখানো সরকারের বিরুদ্ধে কোনও প্রশ্ন করলেই একের পর এক সাংবাদিক, সমাজকর্মী, প্রতিবাদী ছাত্র-যুবক মহিলা সহ বহু মানুষকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া, দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়ার যে সর্বনাশা ক্রিয়াকলাপ বিজেপি সরকার চালাচ্ছে তাতে এই প্রশ্ন আজ আবার নতুন করে উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন একটা অপদার্থ এবং জনবিরোধী সরকারকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার অধিকার নাগরিকদের থাকবে না? আর এ কথা বললেই কেন তা ‘রাজদ্রোহ’ হবে?
সম্প্রতি সরকারের সমালোচক, আদিবাসীদের অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে লড়াই করা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা ফাদার স্ট্যান স্বামীকে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে বন্দি অবস্থায় যে ভাবে সরকার কার্যত হত্যা করেছে, তারপর এই প্রশ্ন আরও জোরদার হয়ে উঠেছে। অবশেষে দেশের শীর্ষ আদালতকে পর্যন্ত এই প্রশ্ন তুলতে হয়েছে– স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও ব্রিটিশ আমলের ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ (সিডিশন) আইন চালু রাখার প্রয়োজন কী। ১৫ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে ১২৪-এ ধারাকে (রাষ্ট্রদ্রোহ সংক্রান্ত আইন) চ্যালেঞ্জ করে এক অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসারের দায়ের করা মামলায় এ কথা বলেছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি। এই ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ আইন যে প্রতিবাদ দমনে সরকারের হাতে একটা প্রধান হাতিয়ার তা আজ সারা দেশের মানুষ জানে। কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট জেনারেল পর্যন্ত এই সত্যকে একেবারে অস্বীকার করতে পারেননি। তাই তিনি একটু নরম সুরে আদালতে বলেছেন, আইনটা একেবারে বাতিল না করে এ ব্যাপারে একটা গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়া হোক, যাতে অপব্যবহার না হয়। প্রশ্নটা কিন্তু ব্যবহার অপব্যবহার নিয়ে নয়, প্রশ্নটা হল, ব্রিটিশ সরকারের তৈরি ১৮৬০ সালের রাজদ্রোহ (সিডিশন) আইন আজও কার্যকরী রাখা হবে কেন? ব্রিটিশ সরকার আইন করেছিল, সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ, অসন্তোষ কিংবা আনুগত্যের অভাবই হল রাষ্ট্রদ্রোহিতা। যে কোনও লেখা, বক্তব্য বা বিক্ষোভ যা সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি করে, কোনও বিক্ষোভ যদি সরকার বদলের ডাক দেয় তাহলেও তা এই আইনের কোপে পড়তে পারে। এর সর্বোচ্চ শাস্তি হল যাবজ্জীবন কারাবাস। স্বাধীন ভারতেও এই আইন সমানে কার্যকরী আছে। তার সুযোগে যে কোনও প্রতিবাদীকেই রাষ্ট্রদ্রোহী এবং দেশদ্রোহী বলতে পারছে সরকার। আদালতে এর ফয়সলা কী হবে, তা ভবিষ্যতই বলবে। কিন্তু আদালতের দিকে তাকিয়ে বসে না থেকে আজ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই আইন বাতিলের দাবিকে জোরদার করা দরকার।
এই বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের শুরু পর্যন্ত একাধিক মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নানা বেঞ্চও মত দিয়েছে যে, সরকারের সমালাচনাকে রাজদ্রোহ, দেশদ্রোহ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতা রক্ষার কথাও বিচারপতিরা বলেছেন। শীর্ষ আদালতের একটি বেঞ্চ এমনও বলেছে, রাষ্ট্রদ্রোহ কাকে বলে তার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা দরকার। যদিও এই সব রায় এবং পর্যবেক্ষণে রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত প্রায় চারশোর বেশি মানুষ যাঁদের অনেকে সাংবাদিক এবং সমাজকর্মী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী, তাঁদের কোনও উপকার হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই।
কারণ, কথায় কথায় প্রতিবাদীদের রাজদ্রোহ আইনে অভিযুক্ত করার ব্যাপারে অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে বিজেপি সরকার প্রায় চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনে এক বছরের বেশি জেলবন্দি থাকা জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং সিএএ বিরোধী প্রতিবাদীদের জামিন দিতে গিয়ে দিল্লি হাইকোর্ট বলেছে, প্রতিবাদ আর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সীমারেখাটাকে ঝাপসা করে দিচ্ছে সরকার।
২০১৪ সালে বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন হওয়ার পর থেকে ৭ হাজার ১৫০ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করা, বিক্ষোভে গাড়ির কাচ ভাঙা– এই ধরনের অভিযোগও আছে। সরকার বা কোনও নেতা-মন্ত্রীর সমালোচনা করার অপরাধে ৪০৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করায় মামলা হয়েছে ১৪৯ জনের বিরুদ্ধে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় রাষ্ট্রদ্রোহে অভিযুক্ত হয়েছেন ১৪৪ জন। সিএএ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় ২৫ জন, হাথরস ধর্ষণ কাণ্ডে সরকারের সমালোচনা করায় ২২ জন, পুলওয়ামায় সরকারের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তোলায় ২৭ জন– রাষ্ট্রদ্রোহ এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনে অভিযুক্ত (দ্য লিফলেট, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মিহির দেশাইয়ের প্রবন্ধ, ১০ জুন ২০২১)। রাষ্ট্রদ্রোহ আইন এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনকে সরকার ব্যবহার করছে শুধু বিরোধীদের জেলবন্দি করে রাখার জন্য। তার প্রমাণ, ২০১৪-‘১৯– এই পাঁচ বছরে মাত্র ছ’জনের শাস্তি হয়েছে। বেশিরভাগ মামলায় চার্জশিটও হয়নি। এমনকি কাশ্মীরেও কোনও চার্জশিট পাঁচ বছরের মধ্যে দিতে পারেনি পুলিশ (আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৯ জুলাই, ২০২১)। উত্তরপ্রদেশের মানবদরদী চিকিৎসক কাফিল খান সিএএ-র বিরোধিতা করে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দীর্ঘ কারাবাসের পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন। এরপরেও তাঁকে নানা মামলায় হেনস্থা করছে বিজেপি সরকার, কারণ তিনি উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম গলদ ধরিয়ে দিয়েছিলেন জনসমক্ষে। আদালত অপাতত তাঁকে রেহাই দিলেও সরকার যে রেহাই দিতে নারাজ তা নানা ঘটনাক্রমে পরিষ্কার। হাথরসে ধর্ষণকাণ্ডের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিক কাপ্পান সিদ্দিকি আজও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ মাথায় নিয়ে জেলে। তাঁর মামলার ফয়সালা শীর্ষ আদালত কবে করবে তা কেউ জানে না। বিজেপি সরকারও মামলাটা ঝুলিয়ে রাখতেই তৎপর। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনা করে রাষ্ট্রদ্রোহিতায় অভিযুক্ত হয়েছেন এক সাংবাদিক। বর্ষীয়ান সাংবাদিক বিনোদ দুয়া কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে এবং ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি গণহত্যায় বিজেপি সরকারের ভূমিকাকে সমালোচনা করে রাষ্ট্রদ্রোহে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি গণহত্যায় উস্কানিদাতা বিজেপি নেতাদের দিকে পুলিশ আঙুল তোলার সাহস পায়নি। কিন্তু সিএএ-র বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের এর জন্য দায়ী করে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সমর্থন করায় পরিবেশ-কর্মী তরুণী দিশা রবি সহ একাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ২০১৯ সালে ১৩৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ)-তে মামলা করা হয়েছে। এর অর্ধেকই হচ্ছে গো-রক্ষার অজুহাতে। সম্প্রতি দিল্লিতে ভ্যাকসিন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে পোস্টার মারার ‘অপরাধে’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশ বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজ্যে রাজ্যে বিশেষত উত্তরপ্রদেশে প্রতিবাদকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এমনকি তাদের যথেচ্ছ জেলে ভরার আইন তৈরি হয়েছে। করোনা মহামারি রোধে সরকারের ব্যর্থতার যে কোনও সমলোচনাকেই উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ‘ফেক নিউজ’ রোখার অজুহাতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে দমন করছে। দেশের যে পাঁচটি রাজ্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার শীর্ষে আছে তার চারটিই সরাসরি বিজেপি শাসিত। রাজ্যগুলি হল বিহার, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, ঝাড়খণ্ড এবং তামিলনাড়ু। আজ ভারতবাসীকে দেশপ্রেমের পাঠ দিচ্ছেন আরএসএস-বিজেপি নেতারা। এই আরএসএস স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিশ্বাসঘাতক, প্রতিক্রিয়াশীল বলেছে এবং ব্রিটিশের দালালি করেই চলেছে। তার আদর্শে পুষ্ট বিজেপি অন্যায়ের প্রতিবাদকে দেশদ্রোহিতা বলবে এ নতুন কথা কী? তাই আদালতের সাম্প্রতিক রায়ে কিছুটা আশার সৃষ্টি হলেও বেশিরভাগ প্রশ্নের মীমাংসা এতে হচ্ছে না।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা লোকমান্য তিলক থেকে শুরু করে শত শত স্বাধীনতা সংগ্রামীকে এই আইনে জেল খাটিয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী কবিতা লেখার অপরাধে জেল খেটেছেন কাজি নজরুল ইসলাম। গান্ধীজিও এই আইনে বন্দি হয়েছেন। এই আইনকে গান্ধীজি বলেছিলেন পেনাল কোডের ‘রাজা’ যা মানুষের স্বাধীনতা হরণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। স্বাধীনতার পর কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির বহু সদস্যই এই আইন বাতিলেরজন্য সওয়াল করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু তা বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েও রক্ষা করেননি। পঞ্চাশের দশকে এলাহাবাদ হাইকোর্ট এবং পাঞ্জাব হাইকোর্ট এই আইনকে অসাংবিধানিক বলে। কিন্তু ১৯৬২ সালে কেদারনাথ সিং বনাম বিহার সরকারের মামলায় রাজদ্রোহ আইনকে সিলমোহর দেয় সুপ্রিম কোর্ট। যদিও সেই রায়েও আদালত বলেছিল সরকারের সমালোচক এবং সাংবাদিকদের উপর এই আইন যাতে প্রযুক্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু যত দিন গেছে ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণির বিশ্বস্ত সেবাদাস হিসাবে সরকারগুলি ক্রমাগত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার জন্য সক্রিয় হয়েছে। ১৯৭৩ সালে কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজদ্রোহকে শাস্তিযোগ্য (কগনাইজেবল) অপরাধ হিসাবে পেনাল কোডে নতুন করে ফিরিয়ে আনেন। উদ্দেশ্য ছিল সমস্ত প্রগতিশীল এবং প্রতিবাদী মানসিকতার উপর লাগাম পরানো। সেদিন বামন্থার প্রতি, সমাজতন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ থেকে শোষণ জুলুমের বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়াতে চাইছিল, ফেটে পড়ছিল আন্দোলন। এই আন্দোলনকে টুঁটি টিপে মারার হাতিয়ার হিসাবে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল কংগ্রেস সরকার। তারপর যত দিন গেছে কংগ্রেস একের পর এক দমনমূলক আইন দেশের মানুষের উপর চাপিয়েছে। ইউএপিএ-র মতো চরম স্বৈরাচারী আইন তারাই চাপিয়ে গেছে। আজ বিজেপি ক্ষমতায় এসে এই গণতন্ত্র হরণের প্রচেষ্টাকে চরম জায়গায় নিয়ে গেছে। পুঁজিবাদের নিয়মেই যত বেশি বেশি করে মুষ্টিমেয় একচেটিয়া মালিকের হাতে পুঁজি কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, তত বাড়ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সংকট। ততই বুর্জোয়া রাষ্ট্রব্যবস্থাও গণতন্ত্রের বাইরের ঠাটবাটটুকু বজায় রেখে ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্টে্যর দিকে ঝুঁকছে। দুনিয়ার সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী দেশেই এটা ঘটছে।এই বৈশিষ্ট্য নিয়েই ভারতের শাসকরাও পুঁজিপতিশ্রেণির চরম শোষণ এবং সাম্রাজ্যবাদী আকাঙক্ষাকে নিরঙ্কুশ করতে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্রমাগত কেড়ে নেওয়ার পথে চলছে। বুর্জোয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা তার সূচনাপর্বে গণতান্ত্রিক শাসনের জন্য রাষ্টে্রর তিনটি স্তম্ভ– আইন বিভাগ, সামরিক বাহিনী ও প্রশাসনযন্ত্র এবং বিচার বিভাগের মধ্যে যে পার্থক্যটুকু রেখেছিল বুর্জোয়া ব্যবস্থা যত সংকটাপন্ন হয়েছে তত সে সীমারেখা ঘুচে গেছে। অন্য সব বিভাগের আপেক্ষিক স্বাধীনতা গিলে খেয়েছে রাষ্টে্রর প্রশাসনযন্ত্র। বিচারব্যবস্থা তার আপেক্ষিক স্বাধীনতা অনেকাংশেই হারিয়েছে।
আশার কথা, শাসক শ্রেণি চাইলেও এর বিরুদ্ধে দেশজোড়া প্রতিবাদের শক্তিকে পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। আদালতের এই রায় আসতে পেরেছে এই প্রতিবাদের শক্তি এখনও কার্যকরী বলেই। একটা কথা আজ পরিষ্কার বুঝতে হবে বিচারবিভাগের থেকেও যদি গণতান্ত্রিক এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা আদায় করতে হয়, তাহলে দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবেশ গড়ে তোলা দরকার। না হলে বিচারবিভাগের আপেক্ষিক স্বাধীনতাটুকুও রক্ষিত হতে পারে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শক্তি, প্রতিবাদের শক্তি বাড়লে তবেই বিচারব্যবস্থার কাছ থেকে গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে সদর্থক কিছু রায় অন্তত মানুষ আদায় করতে পারবে। আজও যে প্রতিবাদীরা জেলে পচছেন তাঁদের মুক্ত করতে গেলেও আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শক্তিকে আরও জোরদার করতে হবে।