70 Year 29 Issue 9 March 2018
স্বেচ্ছামৃত্যু পৃথিবীর বহু দেশে আইন স্বীকৃত৷ ভারতে দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছামৃত্যুর দাবি সমাজের কোনও কোনও অংশ থেকে উত্থাপিত হয়েছে৷ বহুবার সুপ্রিম কোর্ট স্বেচ্ছামৃত্যুর দাবি খারিজ করে দিলেও সম্প্রতি এক রায়ে তার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷ এই স্বীকৃতি প্রসঙ্গে বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বেশকিছু যুক্তির অবতারণা ঘটিয়েছেন৷
বিচারপতি সিক্রি বলেছেন, ব্যাপক দারিদ্রের কারণে যেখানে দেশের বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা নিতে অর্থনৈতিক ভাবে সমর্থ নন সে দেশের অপর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিষেবায় যাদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই তাদের এই খরচ সাপেক্ষ চিকিৎসা নিতে বাধ্য করা উচিত কি?
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, গরিব মানুষ বসবাস করেন যে দেশে, সেখানে ব্যয়সাপেক্ষ চিকিৎসা গ্রহণে বাধ্য করা কেন?
বিচারপতি সিক্রি আবার বলছেন, সংবিধানের ২১ নং ধারায় স্বাস্থ্যের অধিকার স্বীকৃত৷ যদিও এটা নির্মম সত্য যে দারিদ্রের কারণে দেশের প্রতিটি নাগরিক এই অধিকার ভোগ করতে পারেন না৷ অতএব যখন রাষ্ট্র কর্তৃক দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্যের অধিকার সুরক্ষিত নয় তখন তাঁদের মর্যাদার সাথে মৃত্যুতে বাধা দেওয়া উচিত কি?
অর্থাৎ বিচারপতিদের কথায় ভারতে যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে যেমন– ব্যাপক দারিদ্র, ব্যয়সাপেক্ষ বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবা, অপর্যাপ্ত সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা, অর্থনৈতিক ভাবে অসচ্ছল মানুষের ব্যয়বহুল চিকিৎসা পরিষেবা নিতে অসমর্থ হওয়া, দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্যের অধিকার ইত্যাদি রাষ্ট্র দ্বারা সুরক্ষিত নয়৷
এটাই আজ দেশের বাস্তব চিত্র৷ দেশের ২০ কোটি গ্রামীণ পরিবারের ১২ কোটি সরকারি সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত৷ দেশের ৪ লক্ষ পরিবার কাগজ কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন৷ ৬ লক্ষ পরিবার ভিক্ষাবৃত্তি করেন৷ পৃথিবীর বৃহত্তম বেকার বাহিনী ভারতবর্ষে৷ দেশের গ্রামীণ জনসাধারণের হাতে কাজ নেই৷ তাঁরা প্রতিদিন দেশের শহরগুলিতে ভিড় করেন কাজের আশায়৷ বাড়ছে অসংগঠিত ও পরিযায়ী শ্রমিক, নারী পাচার, শিশু পাচার৷ এই সার্বিক অর্থনৈতিক সংকটে বিপন্ন দেশ৷ এই সংকটে টিকে থাকতে মানুষ নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছে না৷ তাতে তার মানুষের গণ্ডি ক্রমশ ছোট হচ্ছে৷
রক্তের সম্পর্কের বিশ্বাস আস্থাও গভীরভাবে বিপন্ন হচ্ছে৷ সে চিত্রও উঠে এসেছে বিচারপতিদের বক্তব্যে৷ ‘স্বেচ্ছামৃত্যুর’ অধিকারের বিপদের দিক প্রসঙ্গে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বক্তব্য–‘‘আজকের বাস্তবতা হল, মধবিত্ত পরিবারে বৃদ্ধদের কেউ চান না৷ তাঁদের বোঝা হিসেবে ধরা হয়৷ তাই এই ধরনের উইলে নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে৷’
ফলে দেশের নেতা–মন্ত্রীদের ‘আচ্ছে দিন’, ‘সুদিন’, ‘ফিল গুড’ ইত্যাদি প্রচার যে বাস্তবে মিথ্যা, বিচারপতিদের বক্তব্যেই তা আবারও উঠে এল৷ স্বেচ্ছামৃত্যুর প্রসঙ্গ বিচারালয়ে উঠে এসে দেশের সুশাসনের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সামনে এনে দিল৷
সুমন দাস, যাদবপুর