কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, ভারতের ইতিহাস বদলে নতুন করে লিখবেন, কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু কেন তারা ইতিহাস পাল্টাতে এতটা মরিয়া ও বেপরোয়া? এর কারণ আরএসএস-বিজেপি চায় তথ্য-প্রমাণ নির্ভর, বস্তুতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার মধ্য দিয়ে যে ইতিহাস রচনার ধারা প্রবহমান তাকে পাল্টে দিয়ে তাদের মর্জিমাফিক ইতিহাস রচনার পথ প্রশস্ত করতে।
তথ্য-প্রমাণ ও যুক্তির মাধ্যমে বিচার-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে এতদিন যে ইতিহাস রচিত হয়ে এসেছে সে সব ইতিহাসকে সরিয়ে বর্তমান শাসক দল ক্ষমতার জোরে ধর্মভিত্তিক গল্প ও লৌকিক কাহিনীকে ভিত্তি করে কল্পিত ইতিহাসকেই সরকারি ভাবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে চাইছে। সরকারি মদতে শিক্ষাব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে মনের মাধুরী মেশানো কাল্পনিক ইতিহাস লেখা এবং তাকে পড়ানোর ও শেখানোর সুনির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা করছে তারা। আগামী দিনে ইতিহাস লেখার যাবতীয় সরকারি অর্থ যাবে সেই প্রচেষ্টায়। রাষ্ট্রীয় মদতে রচনা হবে মিথ্যা ও মনগড়া কল্পিত ইতিহাস। ভারতের ইতিহাস যে হিন্দু-মুসলিম যৌথ সাধনার ফসল তাকে তারা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চায়। হিন্দু রাজা-মহারাজাদের গৌরবগাথা ব্যতীত বাকি ইতিহাসকে শত্রুদের তৈরি ইতিহাস বলে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে।
এই মিথ্যা ইতিহাস তৈরির অপচেষ্টার পিছনে রয়েছে তীব্র মুসলিম বিদ্বেষের রাজনীতির জাল পেতে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করে ২০২৪ সালের লোকসভায় আবার ক্ষমতায় ফেরার ষড়যন্ত্র। বিজেপির ৮ বছরের শাসনে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর মতো কোনও কৃতিত্ব নেই। তারা সাধারণ মানুষকে শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতিই দিয়ে এসেছে। এখন তাদের মানুষের কাছে পৌঁছনোর একমাত্র অস্ত্র উগ্র হিন্দুত্ব। তাই ইতিহাসকে হিন্দুত্ববাদী পথে নিয়ে যেতে পারলে বিভেদমূলক রাজনীতির সামাজিক ভিত্তি দৃঢ় হয়। সেই লক্ষে্যই তারা স্কুলশিক্ষা জীবন থেকে ইতিহাসের পাঠ্য বইতে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পকে ছড়িয়ে দিতে চাইছে।
গোপাল সিংহ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়