‘দেশ এগোচ্ছে’ বলে প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপি নেতারা এবং তাঁদের অনুগত সংবাদমাধ্যম যে ক্রমাগত বলে চলেছে, তাতে যাঁরা বিশ্বাস করেন না, তাঁদের জন্য মোক্ষম প্রমাণ তুলে ধরেছে উপদেষ্টা সংস্থা নাইট ফ্রাঙ্ক। সংস্থাটি তাদের সমীক্ষার রিপোর্টে বলেছে, ভারতে অতি ধনী মানুষের (যাদের মোট সম্পদ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা) সংখ্যা ২০২২-এর তুলনায় গত বছরে ৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৩,২৬৩ জন। সংস্থাটি সমীক্ষার ফল উদ্ধৃত করে দাবি করেছে, পাঁচ বছরে (২০২৩-২০২৮) ভারতে সংখ্যাটা ৫০ শতাংশ বেড়ে হতে পারে ১৯,৯০৮ জন। এর পরও যদি কেউ বিজেপির উন্নয়ন তত্ত্বে বিশ্বাস না রাখেন তবে তিনি নির্ঘাত দেশদ্রোহী!
আর যদি কেউ এর পরও বলেন যে, না, এই উন্নয়ন শুধুমাত্র দেশের মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী ধনকুবেরের, দেশের ৯৯ ভাগ সাধারণ মানুষের নয় এবং তার প্রমাণ হিসাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য দপ্তরের তথ্য দেখিয়ে বলেন, যে, আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকে ২০১৪ সালে ভারতের অবস্থান যেখানে ছিল ৫৫, সেখানে ২০২৩ সালে ১২৫টি দেশের মধ্যে ভারত ১১১তম স্থান পেল কেন, তবে তার নামে একটা ইউএপিএ দেওয়াই যায়! আর মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ২০২৩ সালে বিশ্বের ১৫৫টি দেশের মধ্যে ভারত ১৪৩তম স্থানে– এই তথ্য দেখিয়ে কেউ যদি বলেন, এই তথ্যই প্রমাণ করে, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের এই দাবি মিথ্যা, তবে তিনি যে বিজেপি সম্পর্কে পক্ষপাতদুষ্ট তা নিয়ে নিশ্চয় কোনও সন্দেহ থাকে না! কিংবা কেউ যদি এনসিআরবি রিপোর্ট তুলে ধরে প্রশ্ন করে যে, এতই যদি উন্নয়ন তবে মোদি সরকারের আমলে (২০১৪ থেকে ’২২) ১,০০,৪৭৪ জন কৃষক আত্মহত্যা করল কেন? কেন প্রতি দিন গড়ে ৩০ জন কৃষক ও দিনমজুর আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন প্রধানত ঋণের ভারের জন্য? বিজেপি নেতারা কি তাঁদেরই পুলিশ-প্রশাসনের বানানো এনসিআরবি রিপোর্টটিকে বলবেন যে, ঠিক নয়!
অ’ফ্যাম রিপোর্টের কথাই ধরা যাক। এটি পুঁজিপতিদেরই একটি সংস্থা। অ’ফ্যামের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে– মাত্র ১ শতাংশ ধনকুবেরের হাতে রয়েছে ভারতের ৪০ শতাংশের বেশি সম্পদ, আর নীচের ৫০ শতাংশের হাতে রয়েছে মাত্র ১ শতাংশ সম্পদ। প্রধানমন্ত্রী কি বলবেন এই রিপোর্ট ভারতের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ? বিশ্বাস নেই, বলতেও পারেন!
আসলে প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপি নেতাদের কাছে দেশ মানে দেশের জনগণ নয়। তাঁরা দেশ বলতে বোঝেন দেশের মুষ্টিমেয় ধনকুবেরকেই। তাই তাদের উন্নয়নটাকেই এই নেতারা দেশের উন্নয়ন বলে দেখাতে চান। কিন্তু যে শিক্ষিত বেকার যুবক দোকান থেকে খাবার সংগ্রহ করে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে কোনও রকমে সংসারটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন, কিংবা সেই কৃষক পরিবারটি যার একমাত্র রোজগেরে মানুষটি ঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে, কিংবা সেই পরিবারটি যারা পরিবারের চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে গেছে, প্রধানমন্ত্রী কিংবা তাঁর দল তাদের কোনও ভাবেই এই উন্নয়নের গল্প বিশ্বাস করাতে পারবেন কি?