২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আবদুস সালাম মিলনায়তন, জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাসদ (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তৃত বক্তব্য রাখেন। এ দেশেও অনেকেই ঘটনার সত্যাসত্য জানতে চাইছেন। তাই আমরা এটি প্রকাশ করছি।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমাদের দল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র অভ্যন্তরীণ কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বিষয় আপনাদের মাধ্যমে বাম মহল সহ দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের আহ্বানে এখানে উপস্থিত হবার জন্য প্রথমেই আমি দলের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনারা নিশ্চয় ইতিমধ্যে নানা সূত্রে অবহিত হয়েছেন যে, দলের মূলনীতিবিরোধী অবস্থান ও ধারাবাহিকভাবে সাংগঠনিক নিয়ম-শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে আমাদের পার্টির কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী ও কেন্দ্রীয় নির্ধারিত ফোরামের ১৬ জন সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দল থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হওয়ার দুঃখজনক ঘটনা প্রসঙ্গে দলের বক্তব্য আমি এখানে তুলে ধরব।
আমাদের দল বাসদ (মার্কসবাদী), প্রতিষ্ঠার পর থেকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে একটি সর্বহারা শ্রেণির বিপ্লবী দল গড়ে তোলার সংগ্রাম করছে, যা আগামী দিনে এ দেশের শোষণমূলক পুঁজিবাদী আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে সমাজতন্ত্র কায়েমের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। বর্তমানে আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক হিসেবে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ও সাধারণ মানুষের জীবনের সমস্যা-সংকট নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। দেশে এখন যে ধরনের ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসন চলছে, তার বিরুদ্ধে লড়াইটা একটা সহজ কাজ নয়। আমাদের কর্মীরা দৃঢ় মনোবল ও সাহস রেখে বিভিন্ন এলাকায় এই কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা এখনও শক্তিতে ছোট, কিন্তু আমাদের এ বিশ্বাস আছে যে, সঠিক পথে আমরা যদি চলতে পারি, তাহলে গণআন্দোলনের পথে জনতার রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে আমরা ভূমিকা রাখতে পারব।
সম্প্রতি দলের অভ্যন্তরে কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী সহ কিছু নেতা-কর্মীর ব্যাপারে আমাদের সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির ১৬ ফেব্রুয়ারির সভায় দলের নির্ধারিত ফোরামের ১৬ জন সদস্যকে বহিষ্কার করা হয় এবং কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। তিনি এ নোটিসের কোনও জবাব দেননি। এরই মধ্যে তিনি, ১৬ জন বহিষ্কৃত নেতা-কর্মী ও তাদের সহযোগীরা মিলে বিভিন্ন জায়গায় বাসদ (মার্কসবাদী) নামে পৃথক কর্মকাণ্ড করছেন, মিডিয়াতে বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে মানুষের মধ্যে কিছু প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে, কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সাথে মতপার্থক্যজনিত ক্ষুব্ধতার শিকার হয়ে গত ৩ বছর ধরে পার্টির প্রায় সব সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দলের প্রতিটি হাউসে ভিন্ন বক্তব্য রেখেছেন, জেলা পর্যায়ে বা ইনফরমাল আলোচনায়ও বলেছেন। যত্র-তত্র দলের সমালোচনা করা, ঊর্ধ্বতন পার্টিবডির আলোচনা নিচের স্তরে শেয়ার করা, নতুন কর্মীদেরও ডেকে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বোঝানো, নেতৃত্বকে না জানিয়ে গোপন মিটিং করা– এসব কর্মকাণ্ড তিনি সহ দলের কিছু নেতা-কর্মী গত কয়েক বছর ধরে করে চলেছেন। এসব কর্মকাণ্ড একটি বিপ্লবী দলের শৃঙ্খলা ও আচরণবিধির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পার্টি বারবার তাদের বোঝানো ও সংশোধনের চেষ্টা করেছে, গত ৩ বছর ধরে নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে আদর্শগত আলোচনার প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ভিন্নমত নিরসনের চেষ্টা করে চলেছে।
কিন্তু, গত কয়েক মাস আগে থেকে হঠাৎ করেই তিনি সহ কিছু নেতা-কর্মী বলতে শুরু করেন, বাসদ (মার্কসবাদী), এর পূর্বে বাসদ-ও, কোনও পার্টি হিসেবেই গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে পার্টি নামে থাকা এই ব্যক্তিসমষ্টির শ্রেণিচরিত্র তারা Radical পেটিবুর্জোয়া মনে করেন, অর্থাৎ বাসদ (মার্কসবাদী) একটি পেটিবুর্জোয়া ফ্র্যাকশন। কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তা নিয়ে আমাদের আবেগ ছিল বা তা আমরা প্রচার করেছি, কিন্তু এর কোনও চর্চা-প্র্যাকটিস বা জীবনে পালন হয়নি। ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা পেটিবুর্জোয়া রাজনীতির চর্চা করে এসেছি, যা গত ৪০ বছর ধরে আমরা কেউ বুঝতে পারিনি। তাঁরা কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটি সহ দলের সকল কাঠামো ভেঙে দিয়ে ‘নতুন করে শুরু করা’র কথা বলে প্রকারান্তরে দল ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের এইসব বক্তব্য বাস্তবে দলের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করছে এবং ২০১৩ সালে বাসদ-এর অভ্যন্তরে মতবাদিক সংগ্রামকে একটা গ্রুপ কনট্রাডিকশন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী গত ১ বছরে কখনও বলেছেন দলে ‘পেটিবুর্জোয়া কর্মপদ্ধতি’ বিদ্যমান, কখনও পেটিবুর্জোয়া প্রবণতা বাড়ছে, কখনও পেটিবুর্জোয়া প্রবণতা প্রাধান্যে আছে, শেষ পর্যন্ত তিনি দলটা আর শ্রমিকশ্রেণির দল নয়, এটি একটি পেটিবুর্জোয়া দল– এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এর থেকে বোঝা যায়, পরিকল্পিতভাবে তিনি তাঁর বক্তব্য একের পর এক পরিবর্তন করেছেন। এসব কি একটা আদর্শিক সংগ্রাম, নাকি দলবিরোধী ও উপদলীয় কর্মকাণ্ডের অংশ?
কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীর সর্বশেষ বক্তব্য নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির দুটি সভায় তর্ক-বিতর্কে কমিটির বাকি ৬ সদস্য তাঁর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন এবং তাঁকে এই চিন্তা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। এই প্রেক্ষিতে গত ১০-১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ কেন্দ্রীয় নির্ধারিত সদস্য ফোরামের সভার শুরুতে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলা হয়। তাঁর বক্তব্যের ওপর নির্ধারিত সদস্যদের হাউসে কমরেডরা আলোচনা করেছেন ও মত দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটি, বর্ধিত ফোরাম ও নির্ধারিত ফোরামের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা তাঁর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আমরা এর মধ্যে দেখলাম যে, কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী দলের বিরুদ্ধে প্রেসের কাছে বক্তব্য রাখলেন, কয়েকটি জেলায় তিনি ও তার সহযোগীরাপ্রকাশ্যে পৃথক সভা করলেন। দলবিরোধী অবস্থান ও কর্মকাণ্ডের কারণে দলের কার্যপরিচালনা কমিটি গত ১৬ ফেব্রুয়ারির সভায় ১৬ জনকে এবং ২৩ ফেব্রুয়ারির সভায় কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম, যে দলকে তারা পেটিবুর্জোয়া বললেন, যে দলের সব বডি ভেঙে দিয়ে নতুন করে পার্টি প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বললেন, বহিষ্কার করার পর সেই দলের নাম ও পরিচিতিই তারা ব্যবহার করছেন।
বন্ধুগণ, কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী দীর্ঘদিন ধরেই দলের নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে সমালোচনা দলের নিচের স্তরে ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষোভ-বিক্ষোভ মিশে ছিল। কিন্তু আমরা তাঁর আচরণকে বড় করে দেখতে চাইনি, তাঁর বক্তব্যের রাজনৈতিক দিককে বিশ্লেষণ করেই সেটার ভুল-শুদ্ধ বিচার করতে চেয়েছি। আমাদের দলের অনেক ঘাটতি নিয়ে দলের বিভিন্ন ফোরামে আমরা নিজেরাই আলোচনা করেছি। কিন্তু, আমরা লক্ষ্য করেছি, রাজনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্রে তিনি বারবার তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। ২০১৭ সালে গৃহীত দলীয় একটি গাইডলাইনে বলা হয়েছিল ‘হায়দার ভাইয়ের পরে নেতা কে’ – এভাবে আগে থেকে নির্ধারণ করাটা ভুল। বিশেষ সময়ে পার্টি প্রয়োজন ও তুলনামূলক অগ্রবর্তী অবস্থান বিচার করে যৌথমতের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, সবার আলোচনার ভিত্তিতে গৃহীত এই গাইডলাইনটি কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী মেনে নিতে পারেননি। কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সাথে ব্যক্তিগত আলোচনায় এবং বিভিন্ন ফোরামে তিনি তাঁর অসন্তোষ ব্যক্ত করে বলেছেন, পরবর্তী নেতা কে, তা ঠিক করে যাওয়ার নজির বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে আছে। কার্য পরিচালনা কমিটির নেতারা তাঁকে বলেন, এ কথা ভুল এবং এ ধরনের আলোচনা মার্কসবাদবিরোধী। এর পরপরই ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে যৌথজীবনের সংগ্রামের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় পার্টি সেন্টার বিকেন্দ্রীকরণ করে নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে পার্টিমেস গঠনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তিনি কার্যপরিচালনা কমিটি অকার্যকর এই কথা তোলেন, নতুন কনভেনশনের দাবি করেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে তাঁর অনাস্থার কথা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেন। তাঁর মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতা এভাবে দলের নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নিচের স্তরে বিরোধিতা করতে থাকলে দলের পরিচালনা প্রক্রিয়াই হুমকির সম্মুখীন হয়।
এরপর থেকে তিনি ও তাঁর অনুগামী নেতা-কর্মীদের একটি অংশ কার্য পরিচালনা কমিটি ভাঙা দরকার– এটি প্রমাণে উদ্যোগী হয়ে পড়েন। দলের কাজকর্মের যা কিছু সমস্যা, নেতৃত্বের ঘাটতি এসবকে বড় করে দেখিয়ে ক্রমাগত নেতিবাচক প্রচার তাঁরা গত প্রায় ৩ বছর ধরে চালিয়ে এসেছেন। নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে এমনকি নানা অপপ্রচার চালিয়ে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী সহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনাস্থা, সন্দেহ, অবিশ্বাস সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দলের কিছু নেতা-কর্মীর তাত্ত্বিক বিভ্রান্তি, যারা মনে করছেন গত ৩২ বছর ও পরবর্তী ৬ বছর ধরে আমরা পেটিবুর্জোয়া দল করেছি। কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী আগে কখনও পেটিবুর্জোয়া পার্টিসংক্রান্ত কোনও কথা বলেননি। তিনি ও তাঁর অনুসারী অংশটি দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাদের প্রচারণার অংশ হিসেবে ওই বক্তব্যটি গ্রহণ করে ‘বিপ্লবী আকাঙক্ষা ও পেটিবুর্জোয়া কর্মপদ্ধতি’, ‘পেটিবুর্জোয়া প্রবণতা বা উপাদান’ এসব আলোচনা ইনফরমালি অনেকদিন ধরে করেছেন। তাঁর এসব কথার সূত্র ধরে কেন্দ্রীয় নির্ধারিত সদস্যদের ফোরামে প্রশ্ন উঠলে মার্চ ২০১৯-এ তিনি পার্টিতে ‘পেটিবুর্জোয়া প্রবণতা বাড়ছে বা প্রাধান্যে আসছে, কিন্তু পার্টি পেটিবুর্জোয়া নয়’, এমন আলোচনা করেন। এরপর হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটিতে আলোচনা না করে নিচের স্তরে গত কয়েকমাস আগে বলা শুরু করেছেন– ‘বাসদ (মার্কসবাদী) একটা Radical পেটিবুর্জোয়া ফ্র্যাকশন।’
এই ঘটনাক্রম খেয়াল করলে বোঝা যাবে– তাঁর পূর্বের বক্তব্য ও সাম্প্রতিক বক্তব্যে পার্থক্য ও ধারাবাহিকতার ঘাটতি কেন। তিনি যেহেতু ব্যক্তিগত অবস্থান প্রতিষ্ঠার আকাঙক্ষা ও ক্ষুব্ধ মন নিয়ে চলেছেন এবং সেটাকেই একটা রাজনৈতিক ভাষা দিচ্ছেন, ফলে তাঁর বক্তব্য বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। তাঁর বক্তব্য যত রাজনৈতিক মোড়ক দিয়েই উপস্থাপন করা হোক না কেন, এর উদ্দেশ্য বুঝতে কষ্ট হয় না। উদ্দেশ্য ছিল, কার্যপরিচালনা কমিটির ক্ষমতা খর্ব করা, তাঁর ও তাঁর সহযোগীদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা, না পারলে দলকে শ্রেণিচ্যুত ঘোষণা দিয়ে, নেতৃত্বকে অকার্যকর বলে পার্টির ঐক্যকে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত করা, অন্যদিকে সাংগঠনিক কাজে বাধা সৃষ্টি করা। তাঁর এই উদ্দেশ্য দলের অনেক কর্মী-সমর্থক ধরতে পারেননি। তারা কেউ বিভ্রান্ত হয়ে, কেউ নিজেদের তত্ত্বগত ভুল অবস্থান থেকে, কেউ দলের ধীর অগ্রগতি ও ঘাটতি দেখে হতাশ হয়ে, কেউ নিজেদের নানা বিক্ষুব্ধতা থেকে তাঁর সাথে যোগ দিয়েছেন। এভাবে, তিনি ও তাঁর সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে দলে একটা কোটারি গড়ে তুলেছেন এবং দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও কর্মসূচি প্রণয়নে বাধা সৃষ্টি করেছেন। এসবের পরিণতিতে দলকে রক্ষা করার লক্ষে্য তাদের বহিষ্কার করা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় ছিল না।
সাংবাদিক বন্ধুরা, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদসৃষ্ট আত্মকেন্দ্রিকতা-ব্যক্তিবাদ-ভোগবাদের তীব্র সাংস্কৃতিক আক্রমণের এই যুগে যৌথস্বার্থ-যৌথ চেতনার ভিত্তিতে একটি সঠিক কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলা ও পরিচালনা করা একটি কঠিন ও কষ্টকর সংগ্রাম। এ পথ সংকটবিহীন নয়, কিন্তু এটাই প্রকৃত পথ, এই বিশ্বাসেই আমরা চলি। চলার পথে বহুরকম সংকট আমাদের মোকাবেলা করতে হয়। রাষ্টে্র্রর আক্রমণ যেমন আছে, তেমনি দল গড়ে তোলার জটিল সংগ্রামের পথে হাঁটতে না পেরে পিছিয়ে পড়া, হতাশা-বিভ্রান্তি-বিক্ষুব্ধতার সমস্যাও থাকে। তবে সবকিছুর পরও আমাদের পার্টির মধ্যে একদল সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী গড়ে উঠছে, যারা সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে জীবন নিবেদন করছে। যাদের বহিষ্কার করতে আমরা বাধ্য হয়েছি, সেই নেতা-কর্মীদের আমাদের ত্যাগ করতে হল ও তাতে আমাদের সাংগঠনিক ক্ষতি কিছুটা তো হলই। কিন্তু এ বেদনাদায়ক ঘটনা আদর্শগত, সাংগঠনিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়ে গেল। আমাদের নেতা-কর্মীরা সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জনগণের মুক্তির লড়াইয়ে ভূমিকা রাখার সংগ্রাম চালিয়ে যাবে– দেশের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের কাছে দৃঢ়তার সাথে আমরা সেই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। এ দেশের শোষিত মানুষের মুক্তির সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার করতে আমাদের পার্টি বাসদ (মার্কসবাদী)-কে সমস্তরকম সহায়তা প্রদানের জন্যও আমরা জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুবিনুল হায়দায় চৌধুরী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেডস আলমগীর হোসেন দুলাল, মানস নন্দী, উজ্জ্বল রায় ও ফকরুদ্দিন কবির আতিক।