সদ্য সমাপ্ত অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি বিজেপি। বাধ্য হয়েছে এনডিএ শরিকদের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করতে।
নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বুক ঠুকে ঘোষণা করেছিলেন, অব কি বার ৪০০ পার। অর্থাৎ এনডিএ জোট এ বার ৪০০-র বেশি আসনে জয়ী হবে। বিজেপির জন্য তিনি ৩৭০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বিজেপির দখলে এসেছে মাত্র ২৪০টি আসন। প্রধানমন্ত্রীর অতি প্রত্যয়ী ঘোষণা সত্ত্বেও ফল এমন হল কেন?
প্রধানমন্ত্রী যত উঁচু গলাতেই তাঁর সরকারের সাফল্য ঘোষণা করে থাকুন না কেন, গত দশ বছরের বিজেপি শাসনে জনজীবনের সমস্যাগুলি কমা দূরের কথা, বাস্তবে ব্যাপক আকার নিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, ছাঁটাই, মজুরি কমে যাওয়া, শ্রম-সময় বেড়ে যাওয়া, শিক্ষা-চিকিৎসার খরচ বহুগুণ বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যাগুলি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের জীবনকে জেরবার করে দিয়েছে। অথচ সরকার এই সমস্যাগুলি সমাধানের পরিবর্তে সেগুলিকে আড়াল করতে দেশ জুড়ে মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে, বর্ণের ভিত্তিতে ভাগ করে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিতে চেয়েছে। দমন-পীড়ন চালিয়ে মানুষের বিক্ষোভগুলি বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একের পর বত্তৃতায় সাম্প্রদায়িক বিষ উছলে পড়েছে। সরকার বিরোধিতাকে দেশ বিরোধিতা হিসাবে দেগে দিয়ে প্রতিবাদীদের জেলে ভরা হয়েছে। এই সর্বব্যাপী সংকট থেকে উঠে আসা ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ভোটে।
লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে সংসদীয় বিরোধী দলগুলি শাসক এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে যে ‘ইন্ডিয়াক্স জোট গড়ে তুলেছিল প্রথম থেকেই তা ছিল যথেষ্ট নড়বড়ে। নেতৃত্ব দখলের জন্য কোন্দল, পারস্পরিক মতপার্থক্য, নির্দিষ্ট কর্মসূচির অভাবের কারণে এই জোট মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। তা সত্ত্বেও ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ নিজেদের উদ্যোগেই ব্যাপক ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। আবার উভয় জোটের নীতিহীনতা, শাসক হিসাবে অপশাসন, নেতাদের চুরি-দুর্নীতি, চরিত্রহীনতা, ঔদ্ধত্য, পুঁজিপতি-তোষণ দেখে একটা বড় সংখ্যক মানুষ এই দলগুলির সব কক্সটির উপরই আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এর প্রমাণ তাঁদের একটি অংশ ভোট দিতেই যাননি। অপর একটি অংশ ভোট দিতে গেলেও এই দলগুলির কাউকে না দিয়ে নোটাতে ভোট দিয়েছেন। ফলে বিজেপির যে পরাজয় মানুষ চাইছিলেন, তা আসন সংখ্যায় পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি।
যথার্থ বিকল্প হতে পারত বামপন্থী দলগুলির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন
সাধারণ মানুষ চাইছিল তাদের জীবনের সমস্যাগুলি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবে এমন কোনও সংগ্রামী দল বা জোট, যাকে তারা নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারে। একমাত্র বামপন্থী দলগুলিই ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটা সঠিক রাজনৈতিক বিকল্প গড়ে তুলতে পারত। একমাত্র এই পথেই শাসক পুঁজিপতি শ্রেণিরই পরস্পর বিকল্প দুটি জোট এনডিএ এবং ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা জনগণের একটি সংগ্রামী বিকল্প জোট দেশের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের সামনে উপস্থিত করা সম্ভব হত। জনগণের মধ্যে বিজেপি বিরোধী ক্ষোভ থেকে মনোভাবটা এমন ছিল যে, হারাতে পারি বা না পারি, বিজেপিকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। বাস্তবে সেটাই ঘটল, বিজেপি সংখ্যগরিষ্ঠতা হারাল। কিন্তু এটাই যদি একটা গণআন্দোলনের ভিত্তিতে হত, তবে বিজেপিকে আরও বেশি দুর্বল করা যেত।
এসইউসিআই-কমিউনিস্ট মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই চেয়েছিল– বিজেপির মতোই পুঁজিপতি শ্রেণির আর একটি বিশ্বস্ত দল কংগ্রেসকে নিয়ে নয়, বামপন্থী দলগুলি ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচনে লড়ুক। প্রস্তাব ছিল, শুধু নির্বাচনী জোট নয়, শ্রমিক-কৃষক সহ শোষিত মানুষের জীবনের সমস্যাগুলি নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলুক বামপন্থী দলগুলি এবং তার ধারাবাহিকতাতেই নির্বাচন এলে শ্রমিক-কৃষকের স্বার্থের ভিত্তিতে সেই জোট নির্বাচনী লড়াইয়ে নামুক। এর মধ্য দিয়ে যেমন বিজেপিকে আরও ব্যাপক ভাবে পরাস্ত করা সম্ভব হত তেমনই বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকেও পরাস্ত করা সম্ভব হত। একই সঙ্গে তা শাসক শ্রেণির ব্যাপক আক্রমণের সামনে শোষিত মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার বল এবং সাহস জোগাত।
সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সিপিএম নেতৃত্ব আন্দোলনের রাস্তায় যায়নি
বামপন্থীদের সামনে গণআন্দোলন গড়ে তোলার মতো বিষয়ের কিন্তু অভাব ছিল না। কৃষকস্বার্থ বিরোধী তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার ও নূ্যনতম সহায়ক মূলে (এমএসপি) আইনসম্মত করার দাবিতে কৃষক আন্দোলন গোটা উত্তর ভারত জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। কোনও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়াই কৃষকরা নিজেরাই আন্দোলনকে অনেক দূর নিয়ে যান। প্রায় এক বছর ধরে চলে সেই আন্দোলন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বাধ্য করেছে কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে। কিন্তু এই আন্দোলনটাকে যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেওয়া যেত, এবং তার মধ্যে বামপন্থীদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যেত, তা হল না। গণআন্দোলনের কত বড় সম্ভাবনা নষ্ট হল। এসইউসিআই-কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যে সক্রিয় ভাবে থেকে সাধ্যমতো এ কাজ করার চেষ্টা করেছে। বামপন্থী হিসাবে যাদের শক্তি অপেক্ষাকৃত ভাবে বেশি ছিল, সেই সিপিএম এ কাজে যথাযথ ভূমিকা পালন করল না। বরং তাদের দলের সাধারণ সম্পাদক আন্দোলন তীব্র করার পরিবর্তে কর্পোরেটের সঙ্গে বসে আপসে মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবিভাগে চার বছরের ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ নিয়েও আগুন জ্বলল। যুব সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। এই আন্দোলনকেও বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়া, অন্তত যেখানে বামপন্থী দলগুলির শক্তি বেশি সেগুলিতে সংঘবদ্ধ রূপ দেওয়া, সেটাও ঘটল না। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, ফসলের দাম না পাওয়া, শ্রমকোড– এগুলি জনজীবনকে কী ভাবে ব্যাহত করছে সেগুলো ধরে ধরে জনগণকে দেখানো, মানুষকে এর বিরুদ্ধে দাঁড় করানো, এর যতটা সুযোগ এসেছিল, দেশে যারা বৃহৎ বামপন্থী বলে পরিচিত তারা এটা করল না তাদের সংস্কারবাদী মানসিকতার জন্য। এই অবস্থায় ভোট এসে গেল। সংস্কারবাদী বামপন্থীরা তার সুযোগ নিয়ে কিছু সিট পেতে কংগ্রেসের হাত ধরল। বামপন্থার নাম নিয়ে যা আসলে সুবিধাবাদী রাজনীতিরই চর্চা।
পুঁজিপতি শ্রেণির আর এক বিশ্বস্ত দল কংগ্রেসকে নিয়ে বিজেপির রাজনীতির বিরোধিতা করা যায় না
পুঁজিপতি শ্রেণির অত্যন্ত বিশ্বস্ত দল হিসাবে কংগ্রেস দীর্ঘদিন দেশের শাসন ক্ষমতায় থেকে পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করে গেছে, তাদের অবাধ লুঠের সমস্ত সুযোগ করে দিয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের উপর মারাত্মক আক্রমণ হেনেছে কেন্দ্রীয় সরকারের যে উদারিকরণ নীতি তা কংগ্রেসের নেতৃত্বেই চালু হয়েছিল। দেশের পুঁজিপতি শ্রেণির পুঁজিকে আরও সংহত করাই ছিল এই নীতির উদ্দেশ্য। কংগ্রেসের দীর্ঘ অপশাসনে মানুষের ক্ষোভ যখন ফেটে পড়ছিল তখনই দেশের পুঁজিপতি শ্রেণি তাদের আর এক বিশ্বস্ত দল বিজেপিকে ব্যাপক প্রচার দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। সেই কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও বামপন্থী দলের ভোটের জোট গড়ে তুলে কি শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা যায়? কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মুখে আদানি-আম্বানিদের বিরুদ্ধে গরম গরম বত্তৃতা যে পুঁজিবাদী শোষণ-লুণ্ঠনের বিরোধিতা নয়, একচেটিয়া পুঁজির একটি বিশেষ অংশেরই শুধু বিরোধিতা, তা বুঝতে অসুবিধা হয় কি? দেশের মানুষ এক সময়ে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মুখে ‘গরিবি হঠাওক্স স্লোগান শুনেছিলেন। অভিজ্ঞতা দিয়ে সাধারণ মানুষ বুঝেছিলেন, তা ছিল শুধুই স্লোগান মাত্র। রাহুল গান্ধীর এই স্লোগানও তেমনই নিছক স্লোগানমাত্র। নির্বাচনী প্রচারেও রাহুল গান্ধী কিংবা এই জোটের অন্য নেতারা কেউ কোথাও বলেননি, তাঁরা ক্ষমতায় এলে বিজেপির জনস্বার্থবিরোধী নীতিগুলি প্রত্যাহার করে নেবেন। বলেননি, বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ যা আসলে দেশের মানুষের সম্পত্তি, বিজেপি শাসনে যা দেশের একচেটিয়া পুঁজির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সেগুলি তারা আবার ফিরিয়ে আনবেন। তবুও সিপিএমের মতো দলগুলি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে তুলল, যা রাহুল গান্ধীর মতো কংগ্রেস নেতাকেই আবার সামনে নিয়ে চলে এল। দেশজুড়ে কংগ্রেসের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেই যে এক সময় বামপন্থার উত্থান ঘটেছিল, সিপিএম সহ ভোটসর্বস্ব বাম দলগুলির নেতারা এই সত্যও ভুলে গেলেন।
বিজেপি ও ইন্ডিয়া জোট উভয়েরই রাজনীতি বুর্জোয়া রাজনীতি। এরা একে অপরের বুর্জোয়া বিকল্প। এই দুই জোটের একমাত্র বিকল্প হচ্ছে সর্বহারা রাজনীতি, সর্বহারা বিকল্প, শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে শোষিত জনগণের বিকল্প। তাই আজ সর্বহারা বিকল্প চাই। তার জন্য প্রথম চাই সংগ্রামী গণআন্দোলন, শ্রেণি সংগ্রাম। এর জন্যই এসইউসিআই-কমিউনিস্ট বামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ জোট গড়ে তুলতে চেয়েছে। চেয়েছে সিপিএম-সিপিআই-এর মতো বাম দলগুলি আন্দোলনে আসুক। নিছক কিছু সিট পাওয়ার লোভে এর সাথে তার সাথে ঐক্য নয়, ঐক্য চাই গণআন্দোলনের স্বার্থে, শ্রেণিসংগ্রামের স্বার্থে।
সিপিএমের সংস্কারপন্থী মানসিকতা অতীতেও বামপন্থী আন্দোলনের ক্ষতি করেছে
বামপন্থা তো একটা আদর্শ যার মূল কথা মেহনতি সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষায় আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা। যারা বিপ্লবী বামপন্থী, তারা এই সংগ্রামগুলিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে সর্বহারা বিপ্লবী আন্দোলনে উত্তরণ ঘটাতে চায়। আর যারা সংস্কারবাদী বামপন্থী, তারা মানুষের শোষণবিরোধী, সরকার বিরোধী মনকে সংসদীয় ভোটরাজনীতির মধ্যেই আটকে রাখতে চায়।
স্বাভাবিক ভাবেই বামপন্থার বিপ্লবী লক্ষ্য পূরণ হল না বামপন্থীদের একটা অংশের সংস্কারবাদী এবং ভোটসর্বস্ব মনোভাবের জন্য। সিপিএম নেতৃত্ব সংগ্রামী আন্দোলন যথার্থই চাইলে এসইউসিআই-কমিউনিস্টের প্রচেষ্টায় ২০১৪ সালে ৬টি বামপন্থী দলের যে জোট গড়ে উঠেছিল তা হঠাৎই, এমনকি এসইউসিআই-কমিউনিস্ট নেতৃত্বকে না জানিয়েই ভেঙে দিলেন কী করে।
এই আন্দোলন বিমুখ মানসিকতার জন্যই তারা এই একই আচরণ করেছিল ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি জে পি আন্দোলনের সময়ে। বিহার গুজরাট সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ইন্দিরা কংগ্রেসের দুর্নীতি, বেকারত্ব প্রভৃতির বিরুদ্ধে মানুষের বিক্ষোভ ব্যাপক ভাবে ফেটে পড়েছিল। যার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন লোহিয়াপন্থী জয়প্রকাশ নারায়ণ। সঙ্গে ছিল জনসংঘ, স্বতন্ত্রের মতো পার্টিগুলি।
সেই সময়ে এসইউসিআই-কমিউনিস্টের প্রতিষ্ঠাতা কমরেড শিবদাস ঘোষ বলেছিলেন, যেহেতু বিরাট অংশের সাধারণ মানুষ, যুব সমাজ এই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে গেছে এবং দাবিগুলি সাধারণ মানুষের জীবনের সংকট থেকে উঠে আসা, বামপন্থীদের উচিত দ্রুত এই আন্দোলনের মধ্যে যুক্ত হওয়া। সেদিনও সিপিএম সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে বলেছিল, ওর মধ্যে জনসংঘের মতো সাম্প্রদায়িক দল রয়েছে। কমরেড ঘোষ বলেছিলেন, সেই জন্যই তো বামপন্থীদের আন্দোলনে যুক্ত হয়ে দ্রুত নেতৃত্বকারী জায়গায় পৌঁছনো দরকার। না হলে এই সব প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলি জনগণের সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করবে। সিপিএম ও সহযোগী বামদলগুলি এই আন্দোলনের যোগ না দিলেও এসইউসিআই-কমিউনিস্ট সর্বশক্তি নিয়ে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
বৃহৎ বামপন্থীদের অনুপস্থিতির সুযোগে জনসংঘ এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার শক্তি বাড়িয়ে নেয় এবং জরুরি অবস্থার পরে প্রথমে জনতা দল পরে ভারতীয় জনতা পার্টি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। সিপিএম-সিপিআই সেদিন এই আন্দোলনে যোগ দিলে আজ বিজেপি এত সহজে বেড়ে উঠতে পারত না। এই ইতিহাস থেকে সিপিএম যে কোনও শিক্ষা নেয়নি, তা তাদের ভূমিকায় স্পষ্ট।
বিপ্লবী গণআন্দোলনই মুক্তির একমাত্র রাস্তা
এখন জনগণের সামনে করণীয় কী? ভোট মিটতে না মিটতেই জনগণের উপর নতুন করে আক্রমণ শুরু হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে বাড়ছে, দুধের দাম বাড়ানো হল, বিদ্যুতের দাম বাড়তে চলেছে, স্মার্ট মিটার বসিয়ে গ্রাহকদের লুঠ করার পরিকল্পনা প্রস্তুত। শ্রমকোড, দণ্ডসংহিতা আইন চালু করতে চলেছে মোদি সরকার। শাসক শ্রেণির এই পরিকল্পিত আক্রমণ প্রতিহত করতে শোষিত মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ অত্যন্ত জরুরি। এবং সেই আন্দোলনগুলি পরিচালনার সময় মানুষকে ধরাতে হবে যে এই সব কিছুই পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে তাদের পলিটিক্যাল ম্যানেজার হিসাবে সরকার করে চলেছে এবং এই সরকারটা জনগণের নয়, পুঁজিপতিদের সরকার। এই সরকারগুলোর থেকে দাবি আদায় করতে হলে সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে না, লড়াই করে আদায় করতে হবে। বামপন্থী আন্দোলনের তো এইটাই স্লোগান– বাঁচতে হলে লড়তে হবে। সেই লড়াইয়ের কথাটাই আজ ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শেখানো হচ্ছে, বাঁচতে গেলে আজ শাসক দলের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে। সব শাসক দলই আজ অনুদান দিয়ে দিয়ে মানুষকে শাসক দলগুলির মুখাপেক্ষী করে তুলছে। যে বিজেপি সরকার কৃষকদের জন্য ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবি মানেনি, সেই বিজেপিই সরকারে বসে কৃষকদের অনুদান ঘোষণা করছে। লড়াই করে দাবি আদায়ের বিষয়টাকেই ভুলিয়ে দিচ্ছে শাসক দলগুলি। সিপিএমের মতো দলগুলিও এই রাজনীতিরই চর্চা করে চলেছে।
এই অবস্থায় মানুষের সামনে আবার যুক্ত বামপন্থী গণআন্দোলনের রাস্তাকেই তুলে ধরতে হবে। সংস্কারবাদী বামপন্থী নেতৃত্ব যদি সেই আহ্বানে সাড়া না দেন তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন। কারণ সমস্যা জনগণকে ছেড়ে কথা বলবে না। সমস্যা তাদের জীবনকে গ্রাস করবে এবং তারা তা থেকে মুক্তি চাইবে। আর সেই মুক্তির রাস্তাটা বিপ্লবী গণআন্দোলন ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।