কেন্দ্রীয় বাজেটের ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ১ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন,
‘‘আর্থিক দারিদ্র এবং করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ যখন তাদের জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর জন্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক ভরতুকি ও অন্যান্য সহায়তা পাওয়ার প্রতীক্ষায় ছিল, তখন বিজেপি সরকারের বার্ষিক বাজেটে দেখা গেল, অর্থমন্ত্রী জনজীবনের কঠিন সমস্যাগুলির একটিকেও স্পর্শ করলেন না৷ চূড়ান্ত বেকারি, ক্রমবর্ধমান ছাঁটাই, কলকারখানা–শিল্পের ব্যাপক ক্লোজার, ভয়ানক মূল্যবৃদ্ধি, পেট্রোপণ্যের বিপুল দামবৃদ্ধি, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া– ইত্যাদি যেসব সমস্যা জনজীবনকে পীড়িত করে চলেছে, তার একটিরও উল্লেখ অর্থমন্ত্রীর বাজেট ভাষণে পাওয়া যায়নি৷ পরিবর্তে বাজেট ভাষণে পাওয়া গেল নিজেদের পিঠ–চাপড়ানো কিছু সন্দেহজনক পরিসংখ্যান এবং অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের ভুয়া দাবি৷ ‘আত্মনির্ভর ভারত’ তৈরির নামে বাজেটে দ্রুত প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রের আরও বেসরকারিকরণের রোডম্যাপ তুলে ধরা হয়েছে, যা থেকে সামাজিক কল্যাণ এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিমা ও ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রও বাদ যায়নি৷
প্রসঙ্গত, দেশের অন্নদাতা এবং জনসংখ্যার ৭০ শতাংশেরও বেশি কৃষকসমাজ কীভাবে প্রবল শীত, সরকারি হামলা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে ঐতিহাসিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, গোটা দেশ তা দেখছে এবং জনগণও বিপুল ভাবে তাকে সমর্থন জানাচ্ছে৷ কর্পোরেট স্বার্থবাহী তিনটি কালা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে ইতিমধ্যেই ১৫৩টি মূল্যবান প্রাণ বলি হয়েছে৷ অথচ, কৃষকদের ন্যায্য দাবি অবহেলা করার সরকারি স্বৈরাচারী মনোভাবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে এই আন্দোলন সম্পর্কে উচ্চবাচ্য করেননি৷ পরিবর্তে তিনি গত এক বছরে কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া হয়েছে বলে কিছু পরিসংখ্যান দিয়েছেন, যা প্রশ্ণের ঊর্ধ্বে নয়৷ এর দ্বারা তিনি কৃষকদের প্রতি সরকার কতটা সহানুভূতিশীল তা দেখাবার চেষ্টা করলেও কঠোর বাস্তব তার সম্পূর্ণ বিপরীত এবং জনগণ তা জানে৷
প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি ও ব্যাঙ্কে সুদের ক্রমহ্রাস মধ্যবিত্ত করদাতাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ করলেও প্রত্যক্ষ কর কাঠামোয় কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি৷ সুতরাং কেন্দ্রীয় বাজেট এ–কথা পরিষ্কার করে দিল যে, এ সরকার দেশি–বিদেশি একচেটিয়া পুঁজিগোষ্ঠীর শ্রেণিস্বার্থের সেবা করতেই দায়বদ্ধ– যে শ্রেণি সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এমনকি অতিমারির সময়েও তাদের সম্পদ বহু গুণ বাড়িয়ে নিয়েছে৷ ফলে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ আসলে একটি মধুর বাক্য যা দিয়ে কর্পোরেট নির্ভর ভারতের আসল বাস্তবকে আড়াল করার চেষ্টা হল৷
জনগণের চরম এই দুর্দশার দিনেও শাসক পুঁজিপতি শ্রেণির দ্বারা নির্দেশিত এই জনবিরোধী বাজেটের আমরা তীব্র নিন্দা করছি এবং ভুক্তভোগী দেশবাসীকে বিজেপি সরকারের বিশ্বাসঘাতকতা ও স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানাচ্ছি৷’’