২০১৯–এর কেন্দ্রীয় বাজেট সংসদে পেশের পরপরই ৫ জুলাই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এস ইউ সি আই (সি)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ নিম্নলিখিত বিবৃতি দেন৷
মেহনতি জনগণ, বিশেষত দুর্দশাক্লিষ্ট শ্রমিক–কৃষকদের জীবন–জীবিকা ধ্বংসকারী সমস্যাগুলিকে কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে মহা আড়ম্বরে সংসদে যে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করা হল তা শুধুই বিপুল মিথ্যা দাবি, রীতিমাফিক প্রতিশ্রুতি, কারচুপি ভরা পরিসংখ্যান, বিরক্তিকর বাগাড়ম্বর এবং দুর্বল অংশের মানুষের জন্য সাজানো উদ্বেগে পূর্ণ৷ বাস্তবে এই বাজেট হল ধনীকে আরও ধনী এবং গরিবকে আরও গরিব করার লক্ষ্যে সযত্নরচিত আরও একটি পরিকল্পনা৷ বাজেট ভাষণ শুনে মনে হয় দেশের মানুষ ও অর্থনীতি– সব কিছুই বহাল তবিয়তে রয়েছে৷ সর্বোচ্চ বেকারি, ভয়ঙ্কর মূল্যবৃদ্ধি, লক্ষ লক্ষ মানুষকে কর্মহীন করে দিয়ে প্রায় ৭ লক্ষ কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়া, ফসলের উপযুক্ত দাম না পেয়ে প্রায়শই চাষির ফসল নষ্ট করে দেওয়া, এমনকী চরম হতাশায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া– বাজেটে এসবের কোনও উল্লেখই নেই৷ এমনকী যে ভয়ঙ্কর জলসংকটে ব্যাপক অংশের খরাপীড়িত মানুষ এবং বেশ কয়েকটি বড় শহর জর্জরিত, তারও কোনও উল্লেখ নেই বাজেটে৷ এসবের পরিবর্তে ৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করা সংস্থার কর্পোরেট কর কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে দেওয়ার কথা গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছে সরকার৷ বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলি এর পর তাদের ব্যবসা ছোট ছোট সংস্থায় ভেঙে নিয়ে কম সুদের সুবিধা ভোগ করবে৷ একইভাবে তথাকথিত ‘স্টার্ট আপ’ সংস্থার জন্য করছাড়ের যে ঢালাও ব্যবস্থা করা হয়েছে তাতে এবার মুনাফার লোভে পুঁজির মালিকরা পিছনের দরজা দিয়ে নানা নতুন জায়গায় টাকা ঢালবে৷ অপরিশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক দাম কমতে থাকার সুবিধা ক্রেতা জনগণকে দেওয়ার পরিবর্তে পেট্রল–ডিজেলের খুচরো বিক্রির উপর বাজেটে ১ শতাংশ সেস চাপানো হয়েছে যা সমস্ত পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে৷ বিপরীতে, যে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে এখন বেসরকারি ব্যবসায়ীদেরই রমরমা, সেখানে আমদানি শুল্কে ছাড় দিয়ে তাদের মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে৷ চড়া দামের কারণে এলপিজি এবং বিদ্যুতের ব্যবহার ক্রমাগত গ্রামীণ দরিদ্রদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে এ কথা জানা সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রী এই পরিষেবার সুযোগ পাওয়া না–পাওয়া জনগণের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল বলে মন্তব্য করেছেন৷ বাস্তবে, বাজেটের সমস্ত ঘোষণাগুলিই শুধুমাত্র পুঁজিপতি ও ব্যবসায়ীদের মুনাফার সুবিধার জন্য, জনসাধারণের জীবনধারণের সুবিধার জন্য নয়৷
স্বভাবতই শিল্পপতি–মহল, শেয়ার ব্যবসায়ী, শাসক একচেটিয়া কারবারিদের বেতনভুক অর্থনীতির পণ্ডিতদের দল এই বাজেটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷ কিন্তু খেটে–খাওয়া মানুষকে এর সর্বনাশা পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে৷ কারণ বিজেপির মতো শাসক শ্রেণির বিশ্বস্ত রাজনৈতিক ম্যানেজাররা পুঁজিবাদের ক্রমাগত তীব্র হতে থাকা যে সংকটগুলি আড়াল করতে চায়, তার বোঝা বহন করতে হয় মেহনতি জনতাকেই৷ তাই ক্রমবর্ধমান এই অর্থনৈতিক আক্রমণের বিরুদ্ধে তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে৷