রামনবমীতে আমাদের মা–ঠাকুমাদের ঘরের মধ্যে ব্রত উদযাপন করতে দেখেছি৷ কিন্তু কপালে গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে, গেরুয়া বসন পরে, অস্ত্র হাতে রাস্তায় এভাবে বাইক মিছিল দেখিনি৷ এ যেন রামের নামে এক অঘোষিত হুঙ্কার৷ বিজেপি আসার আগে কি হিন্দুরা অত্যাচারিত ছিল না? উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা নিম্নবর্ণরা অত্যাচারিত হয়েছে৷ আজও হচ্ছে৷ গোবলয়ে দলিত হত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা৷ বুদ্ধদেবকে নতুন একটা ধর্ম সৃষ্টি করতে হত না যদি হিন্দু ব্রাহ্মণরা অত্যাচারী না হত৷ ভারতে হাজার হাজার মন্দির থাকা সত্ত্বেও, হাজার একটা দেবতা থাকার পরেও রামচন্দ্রই একমাত্র কেন হিন্দুদের আদর্শ হবে সেটাই বুঝতে পারলাম না৷ যিনি নিজের স্ত্রীকেও পর্যন্ত অগ্নিপরীক্ষা দিতে বাধ্য করেছিলেন, বেদ জ্ঞান লাভ করার অপরাধে এক শূদ্র ঋষিকে হত্যা পর্যন্ত করেছিলেন৷
এই রামচন্দ্র কোনও দিন বাঙালির আদর্শ ছিলেন না৷ বাঙালির আদর্শ তো চৈতন্যদেব৷ যিনি জাতপাতের বেড়া ছিন্ন করে সারা বাংলাকে প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়েছিলেন৷ ভালোবাসা আর সহনশীলতাই ছিল বাঙালির আবেগ৷ এখন সেই বাঙালি জয় শ্রীরাম কথাটাও বাংলায় বলছে না৷ বলছে জ্যায় শ্রীরাম৷ আমরা কি তবে ছিন্নমূল হচ্ছি? আমরা কি ভুলতে বসেছি বাংলা ভাষার উৎকর্ষতা৷ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র সহ বহু স্বনামধন্য সাহিত্যিকের সাহিত্য বাঙালিকে বিশ্বে একটা আলাদা পরিচিতি দিয়েছে৷
আমাদের সংস্কৃতি সৌভ্রাতৃত্ববোধের সংস্কৃতি৷ আমাদের জাতি বা সম্প্রদায়গত কোনও বিরোধ নেই৷ সেই শিক্ষা বিবেকানন্দ আমাদের দিয়েছেন৷ ‘দরিদ্র অজ্ঞ মুচি মেথর আমার ভাই’– এই শিক্ষা, এই সংস্কৃতিই বাঙালির৷ ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান’– এই আমাদের আবেগ৷ আমরা কোনও সাম্প্রদায়িক বিভেদের সংস্কৃতি বহন করি না৷ তাই কোনও শক্তি আমাদের সাম্প্রদায়িক ঐক্য বিনষ্ট করতে পারবে না৷
একটা সাম্প্রদায়িক দল বিভিন্ন ভাবে আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করার নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে৷ যাদের আগে কখনও বাংলার রাজনীতিতে দেখা যায়নি, আজ তারাই বাংলার ভবিষ্যৎ নির্ধারকের ভুমিকা নিতে চাইছে৷ তাদের আজ বাংলার সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে৷
সূর্যকান্ত চক্রবর্তী, তমলুক