বাংলাদেশে সম্প্রতি যে নির্বাচন ঘোষিত হয়েছে, তাকে প্রহসন আখ্যা দিয়ে বাসদ (মার্ক্সবাদী)-র সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা বলেন, আওয়ামি লিগ সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন একতরফা ভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। বাসদ (মার্ক্সবাদী) সহ বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বিরোধী দলগুলির অধিকাংশই এই তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। আপেক্ষিক অর্থে তদারকি সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে প্রায় সকল বিরোধী দল ও জনগণ আন্দোলনরত থাকলেও এই গণদাবিকে উপেক্ষা করে আওয়ামি লিগ সরকার আর একটি সাজানো নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে।
২০১৪ সালে একতরফা ও ২০১৮ সালে পুলিশ, প্রশাসন, রাষ্ট্রযন্ত্র ও দলীয় বাহিনী দিয়ে ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে আওয়ামি লিগ ক্ষমতাসীন হয়েছে। স্বাধীনতার পর এখনও পর্যন্ত এ দেশের শাসক বুর্জোয়া শ্রেণি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে কোনও গণতান্ত্রিক কাঠামো দেয়নি। যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সাংবিধানিক পদ ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে দলীয়করণ করেছে। ফলে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গড়ে ওঠেনি। দেশে দলীয় সরকারের অধীনে ৫৩ বছরে যতবার নির্বাচন হয়েছে, ততবারই ক্ষমতাসীন দল কারসাজি করে জয়ী হয়েছে।
অতীতের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা ও বর্তমান জুলুমের শাসনে এটা ইতিমধ্যেই দেশের জনগণের কাছে স্পষ্ট– আওয়ামি লিগ সরকারের অধীনে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক এবং গ্রহণযোগ্য হবে না। যে গণতান্ত্রিক ও শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে, অসংখ্য প্রাণের আত্মাহুতি ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল– শহিদদের স্বপ্নের সেই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আজ কী করুণ পরিণতি! কোথায় তা হলে গণতন্ত্র? কোথায় স্বাধীনতা?
দেশের বৃহৎ পুঁজিপতি ও ব্যবসায়ীদের সমর্থনে ভারত, চিন, আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়া, জাপানের মতো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো বাংলাদেশের সার্বভৌত্বকে লঙ্ঘন করে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। এই শক্তিগুলোর কেউ আওয়ামি লিগের পক্ষে, কেউ বিএনপি-র পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা গণতন্ত্রের বুলি আউড়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। বাস্তবে তারা বাংলাদেশের বাজারে নিজেদের লগ্নিকে সুরক্ষিত ও বৃদ্ধি করতে চাইছে। আমরা এই সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে করতে হয়, তা হলে একতরফা নির্বাচনের আয়োজন বাতিল, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের অধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র রক্ষাকবচ হচ্ছে গণআন্দোলন। গণতান্ত্রিক এই দাবি তখনই আদায় হতে পারে যখন লক্ষ লক্ষ জনগণ সঙ্ঘবদ্ধ, সচেতন, ঐক্যবদ্ধ, দীর্ঘস্থায়ী লড়াই গড়ে তুলবে। একটা রাজনৈতিক দল, কিংবা জোট আন্দোলন করে এই দাবি আদায় করতে পারবে না। শুধুমাত্র অধিকার অর্জন নয়, অধিকার রক্ষা করার শর্তও হচ্ছে জনগণের ঐক্যবদ্ধতা ও গণআন্দোলন। যদি জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে না ওঠে, গণআন্দোলনের শক্তি গড়ে না ওঠে– তা হলে যে বড় দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন– সে আওয়ামি লিগ সরকারের মতোই ফ্যাসিবাদ কায়েম করবে। তাই স্বাধীন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন প্রত্যেক ব্যক্তি ও সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান– আওয়ামি লিগ সরকারের অধীন একতরফা নির্বাচনকে সর্বাত্মক বয়কট করুন।