আমাদের অনুরোধে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট এই লেখাটি পাঠিয়েছে৷
গত এপ্রিলে বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে ক্ষমতাসীন সরকার বর্বর হামলা চালায়৷ ৮ এপ্রিল রাত ১০টায় শাহবাগের চিত্র : ব্যবহৃত রাবার বুলেট আর টিয়ারগ্যাসের ফাঁকা শেল পড়ে আছে রাস্তায়৷ শাহবাগ থেকে পুরো ক্যাম্পাসে একই অবস্থা৷ বৃষ্টির মতো ছোঁড়া হয়েছে রাবার বুলেট৷ করা হয়েছে অকথ্য লাঠিচার্জ৷ বুকে, পিঠে, চোখে লেগে মারাত্মক আহত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ততক্ষণে হাসপাতালে৷ ছডিয়ে ছিটিয়ে আছে ইট, কাঠ, পাথর, বাঁশ৷ স্থানে স্থানে ধোঁয়ার কুণ্ডলী৷ যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র৷
যাদের উপর পুলিশ এবং শাসক দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ দিয়ে এমন নির্যাতন চালানো হল, কিংবা কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর ভাষায় যারা ‘রাজাকারের বাচ্চা’, তারা আসলে কারা? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গিরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশিরভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলির যে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী এই আন্দোলন করেছে, তারা প্রায় সবাই দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন–মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ শিক্ষিত হয়ে একটা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া এদের বড় প্রয়োজন, এটা তাদের প্রতি পরিবার–পরিজনের প্রধানতম প্রত্যাশা৷ তারাই নেমেছিল এই আন্দোলনে একটি যৌক্তিক দাবি তুলে ধরে৷ দাবিটি ছিল বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের৷ কিন্তু অন্য আরও অনেক দাবির মতো তাদের দাবির প্রতি সরকার এতদিন কর্ণপাত করেনি৷ বিপরীতে আন্দোলনকারীদের ‘জামাত–শিবির কর্মী’, ‘বিএনপি–র স্বার্থরক্ষাকারী’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতাকারী, ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ ইত্যাদি বলে আন্দোলনকে ভাঙারই ষড়যন্ত্র করেছে৷
শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল৷ কেন না বাংলাদেশে সরকারি তথ্য মতেই প্রায় ৪ কোটি ৮২ লক্ষ বেকার৷ প্রতি বছর শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে ১২–১৫ লক্ষ যুবক–যুবতী৷ নতুন কর্মসংস্থান প্রায় নেই, সরকারি চাকরির সুযোগ ভীষণ কম৷ বেশিরভাগ বেসরকারি চাকরিতে অর্থনৈতিক–সামাজিক নিরাপত্তা বলে প্রায় কিছু নেই৷ তাই তরুণ–তরুণীরা হন্যে হয়ে সোনার হরিণ হয়ে ওঠা সরকারি চাকরির জন্য ছোটে৷ এরকম অবস্থায় জেলা কোটা, নারী কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, উপজাতি কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা ইত্যাদি প্রায় ২৫৮ ধরনের কোটার ব্যবস্থা রেখেছে সরকার৷ শতাংশের হিসাবে তা ৫৬ শতাংশ৷ মেধার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ আছে মাত্র ৪৪ শতাংশ৷ অর্থাৎ সাধারণের চেয়ে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদেরই সুযোগ বেশি৷ ফলে বৈষম্য বেড়েছে প্রকটভাবে৷ অথচ কোটা প্রথা চালু হবার পিছনে কারণই থাকে বৈষম্য দূর করা৷ কোটাকে বলা হয় ’পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশন’৷ অর্থাৎ আপাত অর্থে বৈষম্য মনে হলেও এটা আসলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর বৈষম্য দূর করারই একটি প্রক্রিয়া৷ কিন্তু এমনটা হয়নি বাংলাদেশে৷ তাই কোটা প্রথা সংস্কারের দাবি উঠেছে৷ দেশের সকল প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদও এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন৷ কিন্তু টনক নড়েনি সরকারের৷
১৯৭২ সাল থেকে চালু হওয়া কোটা প্রথায় অন্যান্য কোটার সাথে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ ছিল৷ আজও আছে৷ সেদিন কেবল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের জন্য এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, এখন ঘোষণা করা হয়েছে তাদের নাতি–পুতিরাও এই সুবিধা পাবে৷ এই কোটার হার ৩০ শতাংশ৷ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতেই নাকি সরকার এটি করেছে৷ কিন্তু এই ব্যবস্থা চালু করে আওয়ামী লীগ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাস্তবে অপমানই করেছে৷ মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে করেছে বিতর্কিত৷ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’কে পরিণত করেছে সুবিধার বস্তুতে৷ অর্থাৎ কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছে মানে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সে সরকারি সুবিধা ভোগ করার যোগ্য! এর মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিভক্তি টানা হয়েছে৷ অথচ যাঁরা দেশের জন্য সবকিছু উৎসর্গ করে যুদ্ধে গিয়েছিলেন তাঁরা কেবল নিজের পরিবার–পরিজনের কথা ভেবে তা করেননি৷
মুক্তিযোদ্ধা কারা– সেটাও কি ঠিক করতে পেরেছে সরকার? যিনি অস্ত্র নিয়ে সম্মুখ সমরে ছিলেন তিনি যেমন যুদ্ধ করেছেন, তেমনি যিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন তিনিও এই সংগ্রামের অংশীদার৷ অল্প কিছু রাজাকার–আলবদর ছাড়া কোটি কোটি জনগণ প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে এই সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন৷ ৩০ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছেন, ২ লক্ষ নারীকে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে৷ স্বীকৃতি দিতে হলে তো এঁদের প্রত্যেককেই দিতে হবে৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও সরকারই তা করতে পারেনি৷ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাও সঠিকভাবে নির্ণীত হয়নি৷ একেক সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পাল্টে একেকরকম হয়েছে৷ ১৯৮৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তালিকা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৬৯ হাজার ৮৩৩৷ অথচ বর্তমান সরকারের প্রথম দিকের একটি তালিকায় ২ লাখ ২ হাজার ৩০০ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রকাশিত হয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে ভুয়ো মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন – এই মর্মে আপত্তি দাখিল হয়েছে ৬২ হাজার৷ (তথ্যসূত্র : প্রথম আলো, ১২ এপ্রিল) এভাবে কোটার লোভে ভুয়ো মুক্তিযোদ্ধা দিয়ে তালিকা ভরানো কেবল ভয়াবহ দুর্নীতির উদাহরণই নয়, আত্মত্যাগী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অপমানও৷
এমন অন্যায্য কোটা প্রথার বিরুদ্ধে লক্ষ শিক্ষার্থী রাস্তায় নামে৷ প্রথমে ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ’–এর নামে কোটা আন্দোলন শুরু হলেও ক্রমেই তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সারা দেশে ছডিয়ে পড়ে৷ এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রদের দাবির মুখে গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদের এক প্রশ্নোত্তর পর্বে কোটাব্যবস্থা নিয়ে বক্তব্য রাখতে বাধ্য হন৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ছাত্র–জনতার আকাঙক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি৷ শিক্ষার্থীরা কোটা প্রথা সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা পুরোপুরি বাতিলের কথাই বলেছেন৷ তাঁর পুরো বক্তব্য ছিল স্ববিরোধিতায় পূর্ণ৷ এমন একটি ন্যায্য আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন৷ সবচেয়ে বড় ব্যাপার, তাঁর এই ঘোষণার ফলে প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনসাধারণের জন্য স্বীকৃত যে অধিকার ছিল তাও সংশয়ের মধ্যে পড়ে গেছে৷ সংবিধানের ২৯(৩) নম্বর অনুচ্ছেদ এমনকী ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ গণপরিষদ বিতর্কে পঙ্গু ও নিহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য যে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের কথা বলা হয়েছে তাও হুমকির মধ্যে পডেছে৷ বর্তমানে দেশের বৈষম্যমূলক আর্থ–সামাজিক প্রেক্ষাপটে কোটা প্রথা পুরোপুরি বিলোপ সাধনের সুযোগ নেই৷ এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করে একটা যৌক্তিক সংস্কারের কথাই আন্দোলনকারী এবং বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন৷ কিন্তু তা না করে যদি কোটা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয় তাহলে প্রকৃত অর্থেই যারা কোটার সুবিধা পাওয়ার যোগ্য তাদের সাথে অন্যদের দ্বন্দ্বের সুযোগ তৈরি হবে৷
কোটা আন্দোলন অনেক আঁকা–বাঁকা পথে এগিয়েছে৷ ছাত্রলীগ সারা দেশে আন্দোলনের বিরোধিতা করলেও, হামলা–নির্যাতন করলেও পরে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর বিজয় মিছিলও করেছে৷ ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ’ নামের ব্যানারে কেন্দ্রীয় কমিটি আন্দোলনকে সঠিক খাতে পরিচালিত করতে পারেনি৷ ৯ এপ্রিল আন্দোলন যখন উত্তুঙ্গ অবস্থায়, তখন তারা সরকারের সাথে বৈঠক করে এক মাসের জন্য কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখার ঘোষণা করে৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির এই নির্দেশ বিপুল অংশের শিক্ষার্থীরা মেনে নেয়নি৷ তারা এরপরও আন্দোলন চালিয়ে গেলে এবং সারাদেশে একযোগে শিক্ষার্থীরা নেমে পড়লে কেন্দ্রীয় কমিটি তার আগের অবস্থানে থাকতে পারেনি৷ শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ কোটা বাতিলের অযৌক্তিক ঘোষণা করার পরও তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলন শেষ করার ঘোষণা করেছে৷ এই আন্দোলনে নেতৃত্বের একটি অংশের মধ্যে শুরু থেকেই সরকারকে খুশি করে দাবি আদায় করার প্রবণতা দেখা গেছে৷ ব্যানারে, স্লোগানে ছিল তারই ছাপ৷ কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি৷ সরকারের নির্মম দমন–পীড়ন ঠিকই আন্দোলনকারীদের উপর নেমে এসেছে৷ মাঠের লডাইয়ে থেকে অনেকেই তখন সরকারের প্রকৃত স্বরূপটি বুঝতে পেরেছে৷ এক পর্যায়ে আন্দোলন সরকার বিরোধিতার দিকেই ধাবিত হয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছাত্রদের দাঁড়ানো, মতিয়া চৌধুরী সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীদের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের জোরালো প্রতিবাদের মধ্যে এই পরিবর্তন বোঝা যায়৷ সরকার এই পরিস্থিতি বাড়তে দিতে চায়নি৷ তড়িঘড়ি করে কোটা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে৷
৫৬ শতাংশ কোটা থাকা যেমন অন্যায্য তেমনি সম্পূর্ণরূপে কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়াও অসঙ্গত৷ এটাই করেছে দেশের সরকার৷ এভাবে সবসময়ই জনগণের সাথে চালাকি, ধোঁকাবাজি অথবা জবরদস্তি করেই তারা দেশ পরিচালনা করে৷ ফলে জনগণকে বারবার প্রতিবাদ–প্রতিরোধের রাস্তায় নামতে হয়৷ তবে একটা কথা সবসময় মনে রাখা দরকার, সকলের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সহ জনগণের সর্বাঙ্গীন বিকাশ এই শোষণমূলক ব্যবস্থায় সম্ভব নয়৷ এই ব্যবস্থা কেবল মুনাফা–লাভ বোঝে৷ সেই লাভ সমষ্টির নয়, ব্যক্তির৷ এখানে ব্যক্তিগত মুনাফার সৌধ গড়ে তুলতেই শিল্প–কলকারখানার সংখ্যা, উৎপাদনের সীমা নির্ধারিত হয়৷ সকল মানুষের মধ্যে সুযোগের সমতা এখানে বিবেচ্য হয় না৷ এই ব্যবস্থার ধারক–বাহক আওয়ামী লীগ–বিএনপি–জামাত– জতীয় পার্টি৷ এদের দ্বারা কখনওই বেশিরভাগ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ তাই তো দেশে একদিকে বিপুল প্রবৃদ্ধির গল্প শোনা গেলেও ৮০ হাজার বেকার প্রতি বছর নতুন করে যুক্ত হয়৷ উন্নয়নশীল দেশের তকমা গায়ে লাগলেও ৪৭ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত যুবক থেকে যায় বেকার৷ প্রতিনিয়ত বাড়ে কোটিপতি আর গৃহহীন মানুষের সংখ্যা৷ এই ব্যবস্থাটার নাম পুঁজিবাদ৷ একে পাল্টে সবক্ষেত্রে উৎপাদনের সামাজিক মালিকানার পত্তন আজকের দিনে মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের একমাত্র পথ৷
কোটা আন্দোলন একটা ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলল৷ সেই অর্থে এটি একটি সংস্কারমূলক আন্দোলন৷ কোটা আন্দোলন দেখিয়েছে সাধারণ মানুষের অসাধারণ ক্ষমতার নমুনা৷ যুক্তির শক্তি আর সাহসের সাথে ঐক্যবদ্ধ হলে যে কোনও দমন–পীড়ন–নির্যাতন যে রুখে দেওয়া যায়, এই আন্দোলন তেমন দুর্দমনীয় শক্তির মূর্তায়ন৷ জনগণের কষ্ট হয়েছে সত্যি৷ কিন্তু তবুও এ আন্দোলনে ছিল তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন৷ পথচারীরা আন্দোলনকারীদের জল, খাবার দিয়েছে৷ জানিয়েছে তাদের আবেগের কথা৷ আন্দোলনকারীরাও জরুরি সেবা নিতে যাওয়া যাত্রীদের, অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীদের রাস্তা ছেড়ে দিয়ে চলাচলে সহযোগিতা করেছে৷ আন্দোলন যে উচ্চ সংস্কৃতির জন্ম দেয়, তাও দেখা গেছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে–মেয়েরা রাতভর একসাথে রাজপথে থেকেছে৷ কিন্তু শোনা যায়নি কোনো লাঞ্ছনা–অপমানের কথা৷ স্লোগানে মুখরিত ছিল ক্যাম্পাস৷ একে দাঁডিয়েছে অন্যের প্রয়োজনে৷ এই আন্দোলন করতে গিয়ে দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ–তরুণী কিছুটা হলেও চিনেছে রাষ্ট্রের স্বরূপ, দেখেছে শাসকের নিপীড়ন৷ একইভাবে উপলব্ধি করেছে যৌথভাবে লডাইয়ের শক্তি৷ এই আন্দোলনেই উন্মোচিত হয়েছে শাসকের অনুগত তথাকথিত সুশীল সমাজ, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ধামাধরা শিক্ষক সমাজ, মাথা বিক্রি করা বুদ্ধিজীবীদের স্বরূপ৷ এই আন্দোলনের তাই অনেক অর্জন৷ নানা দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে দাঁডিয়ে যে তারুণ্য আজ সংস্কারের জন্য দাবি তুলছে, সেই হয়তো একদিন সবকিছু নিয়ে দাঁড়াবে ব্যবস্থাটিরই আমূল পরিবর্তনের জন্য৷ সেই দিনের জন্যই এ দেশের নিপীড়িত মানুষের, সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের যত অপেক্ষা৷ সেই ক্ষণ যত এগিয়ে আসবে, ততই ছাত্র–জনতার মুক্তির পথ ক্রমেই পরিস্ফূট হতে থাকবে৷ (বানান অপরিবর্তিত)
(৭০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ২৭ এপ্রিল, ২০১৮)