বাংলাদেশের ঘটনা প্রসঙ্গে বাসদ (মার্ক্সবাদী)

ফাইল ফটো, কলকাতা

চট্টগ্রামের ঘটনার প্রেক্ষিতে ২৭ নভেম্বর ২০২৪, বাসদ (মার্ক্সবাদী)-র বক্তব্যঃ

সরকারের প্রতি আহ্বান– সকল রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সম্মিলিত সভা আহ্বান করুন।

জনগণের প্রতি আহ্বান– নিজেদের সংযত রাখুন, গণআন্দোলনের ঐক্য সুসংহত রাখুন।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী)-র কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা এক বিবৃতিতে বলেন, গত কাল ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে সংর্ষের ঘটনায় একজন আইনজীবীর নিহত হওয়ার ঘটনায় আমরা নিন্দা জানাই। একই সাথে দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

গত কালের এ সংঘর্ষ উদ্বেগজনক। আমরা দেখছি যে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু সংখ্যক সাধারণ মানুষও হিন্দু ও মুসলমানে বিভক্ত হচ্ছেন এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রাখছেন। এই প্রচারের বিরুদ্ধে সকল সচেতন মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

পরাজিত আওয়ামি লিগ ও তাকে আশ্রয় দেওয়া সাম্রাজ্যবাদী ভারতের বিজেপি সরকার ঐক্যবদ্ধ। তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে গণঅভ্যুত্থানের সময় গড়ে ওঠা ঐক্য ও সংহতি নষ্ট করতে চায়। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের চেতনা তা ছিল না। এই অভ্যুত্থানে হিন্দু ও মুসলমান নির্বিশেষে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবেপ্রাণ দিয়েছেন একটা গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য। তাদের রক্তের দাগ এখনও মুছে যায়নি। তারা এই ধরনের বিভক্তি ও বিদ্বেষের বাংলাদেশ দেখতে জীবনদান করেননি। সামাজিক ঐক্যের চাইতে সম্প্রদায়গত ঐক্যে বিভক্তি বাড়বে, সামাজিক পরিবেশে বিদ্বেষ ছড়াবে– এই কথাটি আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে আগেই উল্লেখ করেছিলাম। এই পদক্ষেপগুলোর প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে। গত দুই দিনে হিন্দু সংগঠনগুলোর মানববন্ধন ও সমাবেশেও হামলা হচ্ছে, যেটা আগে হয়নি। হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়াশীল লোকেরা পরস্পর বিষোদগার করছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষদের জীবন ও সম্পদ হুমকির মুখে পড়ছে যেমন, তেমনি সাধারণ পেশাজীবী জনতাও নিরাপত্তাহীন হচ্ছেন। গত কাল আইনজীবী হত্যার ঘটনা সে আলামতই (ইঙ্গিত) দিচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে গণঅভ্যুত্থানে গড়ে ওঠা ঐক্য।

সরকারের নাজুক (দুর্বল) ভূমিকার কারণে পরাজিত শক্তিগুলো বিভিন্ন ঘটনার সুযোগ নিতে পারছে। অভ্যুত্থানকারী শক্তিগুলোর সাথে মতামত বিনিময় করা, ঐক্য সৃষ্টি করার বিপরীতে আমলাতান্ত্রিক পথে রাষ্ট্র পরিচালনা করার পথে তাঁরা এগিয়েছেন। উগ্র ইসলামপন্থীদের বিভিন্ন কার্যকলাপকেও তাঁরা থামাতে পারেননি। যে সতর্কতা নিয়ে এই সকল বিষয় সমাধান করা দরকার ছিল, তা করতে এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব সহ দেশের অসংখ্য সমস্যা নিয়ে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলা যেখানে প্রয়োজনীয়, সেখানে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্তির চক্রান্তে অনেকেই না বুঝে পা দিতে যাচ্ছেন। আমরা আশা করব তাঁরা এই কঠিন মুহূর্তে নিজেদের সংযত রাখবেন ও মুক্ত মনে বিষয়গুলো ভেবে দেখবেন।

আমরা সরকারকে অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক দল এবং সকল ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলিকে নিয়ে সম্মিলিত সভা আয়োজনের আহ্বান জানাচ্ছি। সকলকে আস্থায় নিয়ে ও তাঁদের সহযোগিতার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।