সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো ৬ মার্চের মধ্যে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য প্রকাশ না করে আরও কয়েকমাস সময় চাইছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। সুপ্রিম কোর্ট সে আর্জি খারিজ করে ১২ মার্চেই বন্ডের তথ্য প্রকাশ করতে বললেও, স্টেট ব্যাঙ্ক কী করবে, এ লেখা তৈরি হওয়া পর্যন্ত তা জানা নেই।
সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ডকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে তার তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দেওয়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন এবার অন্তত কাদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়েছে বিজেপি তা প্রকাশ হয়ে যাবে। অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার বিজেপির মুখোশ খুলবে। কিন্তু সময়সীমার দু’দিন আগেই ৪ মার্চ স্টেট ব্যাঙ্ক সুপ্রিম কোর্টেকে জানায় ৩০ জুন পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। যার অর্থ লোকসভা ভোটের আগে এ তথ্য ব্যাঙ্ক জানাবে না। কাকে বাঁচাতে বা কার নির্দেশে ব্যাঙ্কের এই ‘ধীরে চলো’ নীতি?
কেন এত সময় প্রয়োজন? ব্যাঙ্কের কাজ কি এখন হাতে লিখে হয়? ২০১৭-১৮-তে স্টেট ব্যাঙ্ক নির্বাচনী বন্ড বিক্রি ও ভাঙানোর জন্য বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল। তারপর ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ২২, ২১৭টি বন্ড। কারা, কত টাকার বন্ড কিনেছে, কোন দল তা ভাঙিয়ে টাকা তুলেছে এ সংক্রান্ত সব তথ্যই ব্যাঙ্কের কম্পিউটারে নথিভুক্ত আছে। এ টুকুর প্রিন্ট নিতে এবং সুপ্রিম কোর্টকে জানাতে বা সংবাদমাধ্যমের কাছে তুলে ধরতে চার মাস সময় লাগবে কোন হিসাবে? স্টেট ব্যাঙ্ক কি সরকারের নির্দেশ ছাড়া এ কাজ করতে পারে? তা হলে নির্বাচনী বন্ডের ‘ডাল মে’ কি সবটাই ‘কালা’? পুঁজিপতিরাই বা কেন বড় বড় সংসদীয় দলগুলিকে কোটি কোটি টাকা দেয়? এর কারণ, টাকা দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে তাঁরা নিজেদের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করে। পার্লামেন্টে পুঁজিপতিদের স্বার্থের পরিপূরক বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করা, দেশের ভিতরে এবং বাইরে তাদের পুঁজি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা এবং পণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার রাজনৈতিক এজেন্ট হিসাবে ভূমিকা পালন করার কাজটি সরকার করে থাকে। ২০১৭-’১৮ থেকে ২০২২-’২৩-এর মধ্যে ছ’বছরে রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছিল। এর মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৬৫৬৪ কোটি টাকা। কংগ্রেস পেয়েছিল ১১৩৫ কোটি টাকা, তৃণমূল কংগ্রেস ১০৯৬ টাকা।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) বিগত বছরগুলিতে কর্পোরেট ফান্ডিং নিয়ে যে সমস্ত তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে এর সিংহভাগ টাকা গেছে বিজেপির তহবিলে। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের তহবিলে বাকিটা গেছে। নির্বাচনী বন্ডের তথ্য সামনে এলে সাধারণ মানুষের কাছেও পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে এই সংসদীয় দলগুলি আসলে কাদের দল, কাদের টাকায় চলে, কাদের স্বার্থ রক্ষা করা তাদের কাজ। এই বিষয়টি গোপন করতেই কেন্দ্রীয় সরকারের চাপে স্টেটব্যাঙ্ক তথ্য জানাতে গড়িমসি করছে কি?