পশ্চিমবঙ্গের ১২টি জেলা আর্সেনিক আক্রান্ত৷ এর মধ্যে মালদার ৯টি ব্লক, মুর্শিদাবাদের ২৩টি, নদিয়ার ১৭টি, বর্ধমানের ৮টি, উত্তর ২৪ পরগণার ২১টি, দক্ষিণ ২৪ পরগণার ১২টি, হাওড়ার ৭টি, হুগলির ১১টি ব্লক মারাত্মক আর্সেনিক দূষিত৷ এই ১০৮টি ব্লক ছাড়াও বহু পৌরসভা এবং কলকাতা কর্পোরেশনের ৭৮টি ওয়ার্ড মারাত্মক আর্সেনিক দূষিত৷ বাকি ৩টি জেলা– দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর ও কোচবিহারে একটি করে ব্লকে আর্সেনিক কম মাত্রায় হলেও পাওয়া গেছে৷ এ রাজ্যের ৯৫ লক্ষের বেশি মানুষ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন–হু) নির্ধারিত স্বাভাবিক মাত্রার (১ লিটার জলে ০.০১ মিলি গ্রাম আর্সেনিক) বেশি আর্সেনিক যুক্ত জল খেতে বাধ্য হচ্ছেন৷ স্বাভাবিকের থেকে ৫ গুণ বেশি আর্সেনিকযুক্ত জল খেতে বাধ্য হচ্ছেন প্রায় ৪৬ লক্ষ মানুষ৷ আর্সেনিক বিষে আক্রান্ত হয়ে ৫ লক্ষাধিক মানুষ ইতিমধ্যেই ভীষণভাবে অসুস্থ৷ সন্তানসম্ভবা মা ও বহু শিশু আক্রান্ত৷ ১৫০০–র বেশি মানুষ ইতিমধ্যে মারা গেছেন৷ বহু মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী৷ মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে৷ এই সব মানুষ সরাসরি আর্সেনিকযুক্ত জল পান করে ও রান্নায় ব্যবহার করে আর্সেনিক আক্রান্ত হচ্ছেন৷ এই গুরুতর সমস্যা সমাধানে পূর্বতন সিপিএম সরকারের মতো বর্তমান তৃণমূল সরকারও মারাত্মক উদাসীন৷
১৯৯৫ সালের শেষদিকে কিছু বিজ্ঞানকর্মীর উদ্যোগে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি পানীয় জলে আর্সেনিকের পরিমাণ পরীক্ষা করতে গিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগণার গোবরডাঙায়৷ সেখানে গাইঘাটা ব্লকের বিষ্ণুপুর গ্রামের জলে মিলেছিল অধিক মাত্রায় আর্সেনিক৷ গ্রামে সার্ভে করে পাওয়া গেল বহু আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী৷ রবীন বিশ্বাস তাঁদেরই একজন৷ তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে৷ আর্সেনিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রবীন বিশ্বাসকে পরীক্ষা করে সাথে আসা বিজ্ঞানকর্মীকে আস্তে আস্তে বলেছিলেন, ‘ওঁর ক্যানসার হয়েছে’৷
ক্যানসার শব্দ শুনেই রবীন হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন, ‘আমার মৃত্যু অবধারিত৷ আমার পরিবারের কী হবে? আমার ছেলে–মেয়েদের কে দেখবে? আমার টিউবওয়েলের জলে আর্সেনিক বিষ আছে একথা আগে বললেন না কেন? তা হলে কি প্রতিদিন আমি বিষ জল খেতাম? দশ বছর আগে জানতে পারলে কি আমার ক্যানসার হতো? কেন দশ বছর আগে ওই বিষজল খেতে নিষেধ করা হল না আমাকে?’
আজ আর রবীন বিশ্বাস নেই৷ আর্সেনিক জনিত ক্যানসারেই তাঁর মৃত্যু ঘটে৷ তাঁর ভাই মনোরঞ্জন বিশ্বাসও আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় মারা যান৷ আরেক ভাই ভীম বিশ্বাস আর্সেনিকজনিত ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী৷ ওই গ্রামে আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় আরও অনেকে মারা গেছেন৷ শুধু এই গ্রামেই নয়, আর্সেনিক আক্রান্ত জেলাগুলিতেও আরও ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়৷ এর পরেও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা আজও সরকার করেনি৷ আর্সেনিক আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও হয়নি৷ এর দায় কি পুর্বতন সিপিএম সরকার এবং বর্তমানের তৃণমূল সরকার অস্বীকার করতে পারে?
স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের চর্মরোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ কে সি সাহাই প্রথম আর্সেনিক দূষণের ব্যাপারটি সরকারের নজরে আনেন৷ তার আগে তিনি উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান করেন ও রোগীরা যে টিউবওয়েলের জল খেতেন ও রান্নার কাজে ব্যবহার করতেন, তা পরীক্ষা করে দেখেন ওই জলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক আছে৷ তাঁর অনুসন্ধানের ফলেই জানা যায় পশ্চিমবঙ্গে মানবদেহে আর্সেনিক দূষণের কারণ ভূগর্ভ থেকে টিউবওয়েলের মাধ্যমে জল তুলে নেওয়া৷ তিনি তাঁর অনুসন্ধানের রিপোর্ট ১৯৮৪ সালে সিপিএম রাজ্য সরকারের কাছে পেশ করেন৷ কিন্তু সরকার আর্সেনিক দূষণের এরূপ ভয়াবহ রিপোর্ট পাওয়ার পরও শুধু নিশ্চুপ থাকে তাই নয়, আর্সেনিক দূষণ সম্পর্কে কোনও কথা যাতে জনসমক্ষে না আসে তার সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা করে৷ কিন্তু অন্ধ হলেই কি প্রলয় বন্ধ হয়? সরকারের এই মনোভাব এবং উদাসীনতার জন্যই আর্সেনিক দূষিত জল পান ও ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুমিছিলে পা মিলিয়েছেন৷
শুধু ডাঃ কে সি সাহাই নন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের ডিরেক্টর ডঃ দীপঙ্কর চক্রবর্তী ও তাঁর সহকর্মীরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পানীয় জলে আর্সেনিক বিষক্রিয়া ও তার বিস্তারের উপর ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষা চালান৷ ১৯৯৫ সাল থেকে কলকাতার ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি বিভিন্ন গ্রামে জল পরীক্ষা ও আর্সেনিক বিষক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুরু করে৷ ১৯৯৬ সালে গড়ে ওঠে আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি৷ এই কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলায় পানীয় জলে আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষা, আর্সেনিক আক্রান্তদের চিহ্ণিতকরণ শিবির, চিকিৎসকদের জন্য আক্রান্তদের চিকিৎসা সংক্রান্ত শিক্ষাশিবির, আলোচনা সভা সহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়৷ সরকারের কাছে দাবি জানানো হয় আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সরবরাহের৷ তবুও সরকার উদাসীন৷ অনেকে ভাবতে থাকেন যে, আর্সেনিক দূষিত অঞ্চলে বসবাস না করলেই হয়তো আর্সেনিক বিষের ছোবল থেকে বাঁচা যাবে৷ কিন্তু এ ভাবনাও সঠিক নয়৷ আজ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আর্সেনিক দূষিত অঞ্চলে যে খাদ্যশস্য ও শাক–সবজি উৎপন্ন হচ্ছে তা আসছে আর্সেনিক দূষিত নয় এমন অঞ্চলের মানুষের কাছে৷ এই খাদ্য গ্রহণের ফলে তাঁরাও আর্সেনিক বিষে আক্রান্ত হচ্ছেন৷ তাই আর্সেনিক কবলিত অঞ্চলে বসবাস না করলেও আর্সেনিক বিষের ছোবল থেকে বাঁচার উপায় নেই৷
আর্সেনিক দূষণ চোখ বুজে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই৷ সঠিক বিজ্ঞানসম্মত পথে একে মোকাবিলা করতে হবে৷ কিন্তু এ দায়িত্ব কার? বিগত রাজ্য সরকার আর্সেনিক দূষণ নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত জনসচেতনতা গড়ে তোলার পরিবর্তে একটা ‘চুপ চুপ’ ভাব নিয়ে চলেছিল যাতে তা প্রকাশিত না হয়৷ ডাঃ কে সি সাহা, ডঃ দীপঙ্কর চক্রবর্তী, ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি, আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি সহ যাঁরাই আর্সেনিক দূষণ নিয়ে কাজ করেছেন এবং দূষণের বাস্তব চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন, তাঁদের বক্তব্যকে সরকার কোনও গুরুত্বই দেয়নি৷ সংবাদপত্রে যে সাংবাদিকরা এ সম্পর্কে লিখেছেন, তাঁদের সম্পর্কেও একই তাচ্ছিল্যের মনোভাব নিয়ে চলেছে৷ তাঁরা মনে করেছেন, সিপিএম সরকারকে কালিমালিপ্ত করার জন্যই যেন এই বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানকর্মী ও সাংবাদিকরা কাজ করছেন৷ ফলে আর্সেনিক দূষণ মোকাবিলার সঠিক বিজ্ঞানসম্মত পথ, যা এই বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানকর্মীরা দেখিয়েছিলেন, তা সরকার গ্রহণ করেনি৷
বর্তমান তৃণমূল সরকারও পূর্বসূরির পথ অবলম্বন করে চলেছে৷ আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধে কার্যকরী উদ্যোগ তারা এখনও গ্রহণ করেনি৷ ফলে আর্সেনিক দূষণের সমস্যা যে তিমিরে ছিল এখনও সেই তিমিরেই৷ তারা এখনও আর্সেনিকমুক্ত জলের জন্য গভীর নলকূপ ও ফিল্টারের উপর নির্ভর করছে৷ অথচ বার বার পরীক্ষা করে আজ প্রমাণিত যে, গভীর নলকূপের জল প্রথম দিকে আর্সেনিকমুক্ত থাকলেও কিছু দিনের মধ্যেই জলে আর্সেনিকের মাত্রা বাড়তে থাকে এবং দূষিত হয়ে পড়ে৷ প্রায় কোনও ফিল্টারই আর্সেনিকযুক্ত জল পরিশোধিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (হু) নির্ধারিত ০.০১ মিলি গ্রাম/লিটার আর্সেনিকের মাত্রায় আনতে সক্ষম হয়নি৷ শুধু তাই নয় বেশিরভাগ ফিল্টারের রক্ষণাবেক্ষণ সঠিক হয়নি এবং এই ফিল্টারের অত্যধিক আর্সেনিক যুক্ত বর্জ্য আবার ভূস্তরে ফিরে এসেছে৷
কিন্তু কেন এই আর্সেনিক দূষণ? আগে তো এই দূষণ ছিল না গাঙ্গেয় অববাহিকার ভূস্তর তৈরি হয়েছে লক্ষ লক্ষ বছর আগে৷ এই ভূস্তরে আর্সেনিক পাইরাইটিস সহ বিভিন্ন রূপে আর্সেনিক আকর (যৌগ) ছিল৷ এই আর্সেনিক আকরগুলো ছিল জলে অদ্রাব্য৷ তাই জলের সাথে আর্সেনিক পাওয়া যেত না৷ সবুজ বিপ্লবের নামে পুঁজিবাদী মুনাফালোভীরা সর্বোচ্চ মুনাফার স্বার্থে পরিবেশগত ভারসাম্যের কথা না ভেবেই সহজ পন্থা হিসাবে ভূগর্ভস্থ জলকে ব্যাপকভাবে তুলে কৃষিকাজে ব্যবহার করে৷ এই মাত্রাতিরিক্ত জল উত্তোলনের ফলেই ভূস্তরের পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে এবং ভূস্তরের আর্সেনিক আকর অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়ায় ভেঙে মূলত আর্সেনাইট ও আর্সেনেট যৌগ উৎপন্ন করেছে৷ এই আর্সেনাইট ও আর্সেনেট যৌগ জলে দ্রাব্য হওয়ার ফলে তারা জলের সাথে মিশে যাচ্ছে৷ তাই ভূগর্ভস্থ জলের সাথে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক উঠে আসছে৷ এই আর্সেনিক বিষ পানীয় জল, রান্নায় ব্যবহৃত জল ও আর্সেনিকযুক্ত জলে উৎপন্ন খাদ্যশস্য ও শাক–সবজির মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে এবং বিশ শতকের মারণব্যাধি ‘আর্সেনিকোসিস’–এর জন্ম দিচ্ছে৷
পশ্চিমবঙ্গে আর্সেনিক সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে কৃষিকাজে ভূগর্ভের জল বেশি উত্তোলনের ফলে৷ তাই আর্সেনিকমুক্ত জলের জন্য আমাদের ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভর করা উচিত নয়৷ আর্সেনিক বিশেষজ্ঞরাই বলেছেন, আর্সেনিকমুক্ত জলের জন্য ভূপৃষ্ঠস্থ জল ব্যবহার করা উচিত৷ ভূপৃষ্ঠের জল কৃষিকাজে পরিশোধিত করে পান ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা প্রয়োজন৷ একমাত্র এই পথেই আর্সেনিক দূষণ মোকাবিলা সম্ভব৷ পশ্চিমবঙ্গে ভূপৃষ্ঠস্থ মিষ্টি জলের অভাব নেই৷ এখানে বছরে গড়ে প্রায় ২০০০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়৷ প্রায় ৪০০০ বর্গ কিলোমিটার মিষ্টি জলাভূমি (নদী, বাওড়, খাল, বিল) আছে৷ জলাভূমির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও গভীরতা বৃদ্ধি করে মিষ্টি জলকে আরও বেশি ধরে রাখা যায়৷ বন্যার প্রবণতাও খানিকটা কমানো সম্ভব৷ তাই এই বিষয়ে চাই সূদূরপ্রসারী সামগ্রিক পরিকল্পনা৷ এই কাজ কোনও ব্যক্তি বা কোনও বেসরকারি সংস্থা তথা এনজিও–র পক্ষে করা সম্ভব নয়৷ এই কাজের দায়িত্ব নিতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে যৌথভাবে৷
যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রথমেই আর্সেনিকদূষিত অঞ্চলে মেডিক্যাল টিম পাঠিয়ে আর্সেনিকদূষিত নলকূপ চিহ্ণিতকরণ, আক্রান্তদের চিহ্ণিত করে তালিকা প্রস্তুত করা প্রয়োজন৷ আক্রান্তদের নিয়মিত রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রোটিন ও ভিটামিন যুক্ত খাবার এবং আর্সেনিক মুক্ত জল সরবরাহ করা দরকার৷ সমীক্ষায় জানা গেছে, গরিব মানুষ বেশি আর্সেনিক বিষে আক্রান্ত হয়৷ কারণ তাঁরা সরাসরি নলকূপের জল পান করে এবং কম প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করে৷ আর্সেনিক আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ব্লক ও জেলা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে৷ আর্সেনিক বিষে আক্রান্ত হয়ে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক সাহায্য করার ব্যবস্থা করতে হবে৷ পরিবারের উপার্জনশীল ব্যক্তির মৃত্যু হলে পরিবার প্রতিপালনের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে৷
পরিশেষে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী অশোকনগরের বাবুলাল তফাদারের কথা উল্লেখ করা দরকার৷ তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাড়ির মাটির তলায় আজ যদি সোনার খনি পাওয়া যেত, তবে সরকার কি চুপ করে বসে থাকত৷ কিন্তু আজ আমার বাড়ির মাটির তলায় বিষ পাওয়া গেছে৷ তাই সরকারের কিছু করণীয় নেই! আমরা কি আর্সেনিক বিষের ছোবলে এক এক করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ব? আমাদের বাঁচানোর জন্য কেউ কিছু করবে না’!
আর্সেনিক দূষণের হাত থেকে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য চাই সংঘবদ্ধ আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ আন্দোলন৷ এই প্রতিরোধ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হবে সমাজের সকল অংশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে৷ এই প্রতিরোধ আন্দোলনই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে বাধ্য করবে আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধে বিজ্ঞানসম্মত পথ গ্রহণ করতে ও বিংশ শতাব্দীর মারণ ব্যাধি ‘আর্সেনিকোসিসের’ হাত থেকে সমাজকে মুক্ত করতে৷ সরকারের ঘুম ভাঙাতে এ ছাড়া বিকল্প কোনও রাস্তা নেই৷
(৭১ বর্ষ ৮ সংখ্যা ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮)