‘‘…উৎপাদন যন্ত্রের দখল সমাজ নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মধ্য দিয়ে পণ্য উৎপাদনের অবসান ঘটে, একই সাথে অবসান ঘটে উৎপাদকের উপর উৎপাদিত দ্রব্যের কর্তৃত্বও। সামাজিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে নৈরাজ্যের জায়গায়প্রতিষ্ঠিত হয় উৎপাদনের সুশৃঙ্খল, সুনির্দিষ্ট সংগঠন। ব্যক্তির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম বিলুপ্ত হয়ে যায়। তখনই প্রথম বারের জন্য আসে সেই সময় যখন একটা বিশেষ অর্থে মানুষ অবশিষ্ট প্রাণীজগত থেকে নিজেকে চূড়ান্তভাবে বিচ্ছিন্ন করে; নেহাতই পশুর মতো জীবন কাটানোর অবস্থা থেকে তার উন্নয়ন ঘটে যথার্থই মানুষের মতো বেঁচে থাকার মতো পরিস্থিতিতে। জীবনধারণের যে সামগ্রিক পরিমণ্ডলের মধ্যে মানুষ এতদিন জীবন কাটিয়ে এসেছে এবং যে অবস্থাটা এতদিন পর্যন্ত মানুষের উপর কর্তৃত্ব করেছে, সেই সমস্ত ক্ষেত্রই এখন চলে আসে মানুষের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণে। এই প্রথম মানুষ প্রকৃতির সত্যিকারের সচেতন প্রভু হয়ে ওঠে। কারণ আজ সে পরিণত হয়েছে তার নিজস্ব সামাজিক সংগঠনের মালিকে। মানুষের নিজস্ব সামাজিক ক্রিয়া এতদিন যে নিয়মের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, যা একটা বাইরের প্রাকৃতিক নিয়মের মতোই তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এত দিন তার উপর কর্তৃত্ব করেছে, এবার মানুষ তাকে সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করে কাজে লাগাবে এবং স্বভাবতই, তার উপর সে-ই কর্তৃত্ব করবে। মানুষের নিজস্ব যে সামাজিক সংগঠন এতদিন প্রকৃতি ও ইতিহাসের দ্বারা আরোপিত এক আবশ্যিকতারূপে তার বিরুদ্ধে কাজ করে এসেছে, আজ তা হয়ে দাঁড়িয়েছে তারই স্বাধীন ক্রিয়ার ফল। মনুষ্য নিরপেক্ষ বাইরের যে শক্তি এতদিন ইতিহাসকে নিয়ন্ত্রণ করত, তা মানুষের নিজের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। শুধু এই সময় থেকেই মানুষ ক্রমে আরও বেশি সচেতনভাবে নিজেই নিজের ইতিহাস রচনা করবে, শুধু এই সময় থেকেই– মানুষ যে সামাজিক ভিত্তিগুলি গড়ে তুলেছে, তা প্রধানত এবং ক্রমাগত আরও বেশি পরিমাণে তার কাঙ্খিত ফল দিতে থাকবে। প্রয়োজনের রাজত্ব থেকে স্বাধীনতার রাজত্বে মানুষের উত্তরণ ঘটবে।”
– সমাজতন্ত্রঃ কাল্পনিক ও বৈজ্ঞানিক