বেতনবৃদ্ধির দাবিতে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন ‘জেনারেল কনফেডারেশন অফ লেবার’ (সিজিটি)-র ডাকে ১৮ অক্টোবর ফ্রান্স জুড়ে ধর্মঘট পালন করলেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। শহরে শহরে বিক্ষোভ মিছিলে সামিল হলেন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত হাজার হাজারে মানুষ। লাল পতাকায় সেজে উঠল রাজপথ। দু’দিন আগে ১৬ অক্টোবর মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে মিছিল করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ। ১৮ তারিখ সেই আন্দোলনেরই ধারাবাহিকতায় দেশ স্তব্ধ করে দিলেন বিক্ষোভকারীরা।
‘‘গোটা ইউরোপ একদিকে মূল্যবৃদ্ধির আগুনে পুড়ছে। অন্যদিকে আকাশছোঁয়া মুনাফা লুটছে বড় বড় শিল্পপতিরা। কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কথা উঠলেই মালিকরা বলছে, টাকা নেই। ইউরোপের সর্বত্র তাই ক্ষোভে ফুঁসছে শ্রমিক-কর্মচারীরা”– বললেন ফিলিপ্পে মার্তিনেজ, সিজিটি-র সাধারণ সম্পাদক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেল ও গ্যাসের দাম অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় বিপুল মুনাফা লুটছে ফ্রান্সের তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলি।
এদিকে খেটে-খাওয়া মানুষ মূল্যবৃদ্ধির চাপে জেরবার হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পরিমাণে বেতন বাড়াতে রাজি হচ্ছেন না কোম্পানি-মালিকরা। কয়েকমাস আগে দ্বিতীয়বারের জন্য সরকারি পদে বসেছেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ। কিন্তু দেশের খেটে-খাওয়া মানুষের দুর্দশা ঘোচাতে তাঁর সরকারের কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
ঠিক একই অবস্থা ভারতের শ্রমিকদেরও। বৃহৎ পুঁজির মালিক কয়েকজনের মুনাফাযখন আকাশ ছুঁচ্ছে, তখন সামান্য মজুরিতে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন দেশের বিপুল সংখ্যক মেহনতি মানুষ। সরকার নির্বিকার। গরিবি, বেকারিতে জেরবার মানুষের ক্ষোভ প্রতিদিন ফেটে পড়ছে দেশের এখানে-ওখানে।
প্রবল ক্ষোভ ফ্রান্সের শ্রমিকদের বুকেও। শ্রমিক সংগঠন সিজিটি-র নেতৃত্বে ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবিতে তাই জোরদার আন্দোলনে নেমেছেন সেখানকার শ্রমিক-কর্মচারীরা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ফ্রান্সের তৈল শোধনাগারগুলির কর্মীরা বেতনবৃদ্ধির দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। যার প্রভাব পড়েছে গোটা দেশে। তাঁদেরই ডাকে সাড়া দিয়ে রেল ও অন্যান্য পরিবহণ ব্যবস্থার কর্মচারী, ট্রাক ও বাস কোম্পানির শ্রমিক, হাইস্কুলের শিক্ষক, সরকারি হাসপাতালের কর্মীরা সহ ফ্রান্সের শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ এ দিনের ধর্মঘটে সামিল হন।
দেশ জুড়ে ধর্মঘটের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। গ্রেফতার হন অনেকে। আহত বেশ কিছু জন।