ফুটবলে জিতল ন্যায়বিচারের দাবি

ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান স্পোর্টিং-এর হাজার হাজার সমর্থক রাস্তায় নেমে গিয়েছেন। হাতে হাত ধরে হাঁটছেন। গায়ে জার্সি, হাতে পোস্টার, কারও হাতে প্রিয় ক্লাবের পতাকা, কারও হাতে জাতীয় পতাকা। পুলিশ বেধড়ক মারছে। গোটা বাইপাস জুড়ে ব্যারিকেড। জার্সি গায়ে দেখলেই আটক করছে। ফুটবলপ্রেমীরা পুলিশের ভ্যান ঘেরাও করে আটক হওয়া সমর্থকদের ছাড়িয়ে নিচ্ছে। অঝোর বৃষ্টি, লাঠি উপেক্ষা করে দফায় দফায় মিছিল হচ্ছে। ফুটবল যেন হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষা।

সাধারণত কলকাতা ময়দানে এই দুই প্রধানের মধ্যে ম্যাচকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকদের মধ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ১৮ আগস্টের ডার্বিতে একটাই স্বর– আর জি করের বিচার চাই– ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। প্রশাসন থেকে জানানো হয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে না পারার কারণে এই ম্যাচ বাতিল করা হচ্ছে। অথচ ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ফুটবলপ্রেমী সমর্থকরা ন্যায় বিচারের লড়াইয়ে যখন নেমেছেন, তখন তাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্রীড়াপ্রেমীরা স্বভাবতই প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশের অভাবে ডার্বি বাতিল হল, তা হলে আন্দোলন দমন করতে হাজার হাজার সশস্ত্র পুলিশ এল কোথা থেকে? যে সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল, দর্শকদের কথায়, ৫০টা ডার্বি ম্যাচ সেই পুলিশ দিয়ে করানো যেত। আসলে এ দিন যুবভারতীর রাজপথে এক ঐতিহাসিক খেলা প্রদর্শিত হল জাস্টিস বনাম ইনজাস্টিসের। একদিকে বন্দুক, লাঠি, রবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস হাতে ধর্ষকের রক্ষাকারী পুলিশ, ব়্যাফ, কমব্যাট ফোর্স অন্য দিকে প্ল্যাকার্ড হাতে জনতা। মোহনবাগানের জার্সি পরে এক তরুণ কাঁধে নিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের সমর্থককে। সে কাঁধে বসে আওয়াজ তুলছে– ‘আমার বোনের বিচার চাই।’‘দুই গ্যালারির একই স্বর, জাস্টিস ফর আর জি কর।’ সেই মুহূর্তে নপুংসকের দল ঝাঁপিয়ে পড়েছে জনতার উপর, নির্মমভাবে লাঠি চালিয়ে রক্তাক্ত করেছে। তবুও লড়তে আসা জনতা লড়াই থেকে পিছিয়ে আসেনি। এ লড়াই তাদের ঘরের মা-বোনেদের ইজ্জত রক্ষার লড়াই। স্লোগান উঠেছে ‘বিচার চাই বিচার চাই, আর জি করের বিচার চাই। আমার বোনের বিচার চাই।’ এই দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় খালি-পায়ে বুট পরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফুটবল মাঠে লড়াইয়ের কথা। গোরা ফুটবলাররা যেমন করে বুটের আঘাতে রক্তাক্ত করে ভেবেছিল খালি-পায়ে খেলতে আসা গোষ্ঠ পাল, শিবদাস ভাদুড়িদের হারিয়ে দেবে– কিন্তু পারেনি। তেমনি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে পুলিশ রক্তাক্ত ক্রীড়াপ্রেমী ছাত্র যুবক-যুবতী বৃদ্ধদেরও প্রতিবাদী আন্দোলন থেকে সরাতে পারেনি। ডজন খানেক গোল খেয়ে পরাজিত ইনজাস্টিস, জয়ী হয়েছে জাস্টিসের পক্ষে লড়তে আসা জনতা। বিজয়ী জনতা স্লোগান তুলেছে– যে রাষ্ট্র ধর্ষকদের আড়াল করে, সেই রাষ্ট্রই ধর্ষক।