চাষিদের জন্য বিজেপি সরকারের ফসল বিমা যোজনার প্রচারই সার৷ ঋণ মকুব, ফসলের ন্যায্য দাম, উপযুক্ত সেচের দাবিতে কৃষকরা আন্দোলন করলে জুটছে পুলিশের লাঠি–গুলি৷ দিকে দিকে চলছে কৃষকদের আত্মহত্যার মিছিল৷ তাতে সহানুভূতি দূরের কথা, মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের কৃষিমন্ত্রী বালকৃষ্ণ পতিদার ইন্দোরে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, কৃষকরাই শুধু আত্মহত্যা করে এমন নয়, ব্যবসায়ীরা, পুলিশ অফিসাররা, অন্যান্য উচ্চপদস্থ অফিসাররাও আত্মহত্যা করে৷ তিনি বলেছেন, কৃষক আত্মহত্যা সারা দুনিয়ার সমস্যা৷ যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, সেই শুধু বলতে পারে এর কারণ কী৷ আমরা কেবলমাত্র তা আন্দাজ করতে পারি৷
সত্যিই কি তাই? মন্ত্রী মহাশয় স্বীকার না করলেও কৃষকদের আত্মহত্যার কারণ অজানা নয় কারও৷ ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে সর্বস্বান্ত কৃষক৷ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দু’বেলা সংসার চালানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে৷ অসহায় কৃষক পরিবার নিয়ে পথে বসতে বাধ্য হচ্ছেন৷ বীজ–সার–কীটনাশক কিনতে যা খরচ হচ্ছে, সেচের জন্য বিদ্যুতের বিল মেটাতে যা খরচ হচ্ছে, তা উঠছে না ফসল বিক্রি করে, লাভ তো দূরের কথা৷ তাই চাষিদের মুখ বিষণ্ণ৷ হাসি নেই৷
এ হেন বিষণ্ণ কৃষকদের হাসি ফিরিয়ে আনতে অবশ্য তৎপর হয়ে উঠেছেন বিজেপি নেতারা৷ তবে তা কৃষকদের চাষের সমস্যার সমাধান করে নয়৷ হাসি হাসি মুখে সেলফি তুলে কৃষকদের ফেসবুক পোস্ট বা ট্যুইট করার পরামর্শ দিয়েছে মোদি সরকার৷ ‘কৃষক কল্যাণ’ কর্মশালা করে এই উপদেশ দিয়েছেন তাঁরা৷ কিন্তু এই কৃত্রিম হাসিতে ঢাকা পড়বে কি তাদের দুর্দশা চিত্র?
হাসিমুখের বিজ্ঞাপনে কি দূর করা যাবে চাষিদের বিষণ্ণতা? এপ্রিলের শেষেই হরিয়ানার রোহতকের রাস্তায় ট্রাক্টর ভর্তি টমেটো ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন চাষিরা৷ ফসলের দাম নেই৷ চাষের খরচটুকুও উঠছে না৷ ৩ মে মহারাষ্ট্রের সাত জেলায় চাষি ও পশুপালকেরা এক সপ্তাহ ধরে বিজেপি নেতাদের বাড়ির সামনে বিনামূল্যে দুধ বিলি করেছেন, দুধের উপযুক্ত দাম না পাওয়ার প্রতিবাদে৷ দেড় মাস আগে এই মহারাষ্ট্রেই লক্ষাধিক চাষি ফসলের ন্যায্য দাম, বীজ–সার–সেচের দাবি জানিয়ে পদযাত্রায় নেমেছিলেন৷ দেশের নানা প্রান্তে ছোট–বড় কৃষক বিক্ষোভ অব্যাহত৷ সরকার বুর্জোয়াদের সেবাদাস৷ তাই চাষির সমস্যা সমাধানের কোনও উদ্যোগ নেই৷ শুধু ভঙ্গি দিয়ে চোখ ভোলানোর মতো সেলফি তত্ত্ব আওড়াচ্ছে বিজেপি সরকার৷ প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং কর্মশালা করে হাসিমুখের সেলফি ছড়িয়ে দিতে বলেই দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকদের মলিন মুখ ঢাকা যায় না৷
(৭০ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা ১৮ মে, ২০১৮)