উৎপাদনের খরচের দেড়গুণ দামে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সরকারকে ফসল কেনার দাবি তুলল এ আই কে কে এম এস। ১৫ জুলাই দেশের ১৮টি রাজ্যে জেলা, মহকুমা, ব্লক ও গ্রাম স্তরে বিক্ষোভ, ডেপুটেশন, অবরোধ প্রচারসভা ইত্যাদির মাধ্যমে হাজার হাজার কৃষকের অংশগ্রহণে পালিত হল দাবি দিবস।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ৭১টি ব্লকে এই দাবিগুলি সহ ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্লক অফিসে বিক্ষোভ ডেপুটেশন হয়। কোচবিহারে খেতে কাজ করার সময় কিছুক্ষণ কাজ বন্ধ রেখে কৃষক ও খেতমজুররা বিক্ষোভ সভায় যোগ দেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বাদাম চাষিরা বাদাম পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান এবং বসিরহাটে পাট চাষিরা পাট পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান। এ দিন কাটোয়া স্টেশন থেকে সুসজ্জিত মিছিল মহকুমা শাসক দপ্তরে যায় এবং দাবিপত্র পেশ করে। চাষিরা দাবি তোলেন, মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধে অবিলম্বে সর্বাত্মক রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করতে হবে। তাদের আরও দাবি চাষির কাছ থেকে সরাসরি ফসল কিনে সরকারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিক্রি করতে হবে যাতে চাষি ও আমজনতা উভয়ই ফড়ে ও অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা পায়।
তাদের আরও দাবি, এমএসপি-কে আইনসঙ্গত করতে হবে, সমস্ত কৃষি মজুরদের সারা বছরের কাজ ও উপযুক্ত মজুরির ব্যবস্থা করতে হবে, সংশোধিত বিদ্যুৎ বিল ২০২৩ বাতিল করতে হবে এবং কোনও মতেই স্মার্ট মিটার চালু করা চলবে না, কৃষিঋণ মকুব করতে হবে এবং ষাটোর্ধ্ব কৃষক ও খেতমজুরদের উপযুক্ত পরিমাণে পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে, সস্তা দরে চাষিদের সার বীজ তেল সহ চাষের উপকরণ সরবরাহ করতে হবে এবং চাষের কাজে বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ দিতে হবে, খরা-বন্যা-ভাঙন প্রতিরোধে উপযুক্ত ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করে তা দ্রুত কার্যকর করতে হবে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চাষির (ভাগ ও লিজ চাষি সহ) ফসলের ক্ষতিতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য কার্যকরী ফসল বিমা চালু করতে হবে।
এই দাবিগুলি নিয়ে গ্রামে গ্রামে ব্যাপক প্রচার শুরু হয়। দাবি সংবলিত স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর শুরু হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর দিল্লির তালকোটরা স্টেডিয়ামে কৃষক খেতমজুরদের মহা পঞ্চায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে এবং ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি সম্বলিত স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভের সাথে বলেন, পাটের প্রকৃত এমএসপি হওয়া উচিত কুইন্টাল প্রতি ১৩ হাজার টাকা, অথচ কেন্দ্রীয় সরকার পাটের এমএসপি নির্ধারণ করেছে কুইন্টাল প্রতি মাত্র ৬০০০ টাকা। এখন পাট ওঠার মুখে এই দামেও চাষিরা পাট বিক্রি করতে পারছেন না। জেসিআই পাট কিনতে নামছে না। কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেট স্বার্থে ফুড প্যাকেজের জন্য (বিশেষ করে চিনির ক্ষেত্রে) পরিবেশ দূষণকারী সিনথেটিকের ব্যবহার অনুমোদন করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে পশ্চিমবাংলায় ৪০ লক্ষ পাট চাষি পরিবার বিপন্ন। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের ভূমিকাও ন্যক্কারজনক। তারা এক কেজি পাটও কেনে না। বাস্তবে তারা পাটকল মালিক ও ফড়েদের স্বার্থ রক্ষা করছে। এরই পথ বেয়ে কৃষকদের উপর নেমে আসছে কর্পোরেটের আক্রমণের থাবা। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মালিক তোষণকারী নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন কৃষকরা। সংযুক্ত কিসান মোর্চা আগামী ৯ আগস্ট ‘কর্পোরেট হটাও’ দিবসের ডাক দিয়েছে। কৃষকরা দেশব্যাপী আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে এ আই কে কে এম এস এর ডাকে কৃষক-খেতমজুরদের ঐতিহাসিক মহাপঞ্চায়েতকে সর্বাত্মক সফল করার উদ্যোগ গ্রহণ করছে।