ন্যায় বিচারকে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রকৃত ভারতীয়দের বিদেশি হিসাবে ঘোষণা প্রক্রিয়া আজও চলছে আসামে। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় সমিতি। রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন জেলায় ফরেনার্স ট্রাইবুনাল কর্তৃক একতরফাভাবে রায়দান ও অন্যান্য ত্রুটিপূর্ণ এবং ভ্রান্ত নোটিস প্রদানের বিরুদ্ধে ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে করিমগঞ্জের জেলাধিপতির মাধ্যমে স্মারকপত্র পাঠিয়েছেন।
এই স্মারকপত্রে অত্যন্ত জোরালো ভাবে বলা হয় যে এটা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে আসামের বিভিন্ন ফরেনার্স ট্রাইবুনাল একতরফাভাবে তথাকথিত বিদেশি ঘোষণা অবিরত করে চলেছে এবং তার সঙ্গে যেগুলো পূর্ণ বিচারের মাধ্যমে রায়দান হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক। এভাবে একটা বিরাট সংখ্যক নাগরিককে বিদেশি ঘোষণা করা হচ্ছে এবং সেই অনুসারে তাদের সমস্ত ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে যা মৃত্যুদণ্ড থেকেও মারাত্মক। প্রকৃতপক্ষে ঘোষিত বিদেশিরা বেশিরভাগই অত্যন্ত গরিব মানুষ এবং সত্যিকার অর্থে ভারতীয় নাগরিক।
‘নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় সমিতি, অসম’-এর অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অরুণাংশু ভট্টাচার্য জেলাধিপতির অফিসের সামনে ক্ষোভের সাথে বলেন, নাগরিকত্ব একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং এটা নিয়ে সরকারের ছেলেখেলা করা উচিত নয়। যে প্রক্রিয়ায় ফরেনার্স ট্রাইবুনাল নাগরিকত্বের বিচার করছে সেটা বাস্তবিকই আইনের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। কারণ বিদেশি নোটিশ পাঠানোর আগে যথার্থ কোনও তদন্তও হচ্ছে না। আর বর্ডার পুলিশ যদি বা কোনও তদন্ত করেও থাকে তা হলেও তার যথার্থ তদন্ত রিপোর্ট হচ্ছে না। যথার্থ তদন্ত রিপোর্ট ছাড়া ফরেনার্স ট্রাইবুনালের প্রোসিডিং চলতে পারে না। তিনি আরও বলেন নাগরিকত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আধা বিচারবিভাগীয় সংস্থা (কোয়াসি জুডিশিয়াল বডি) হিসাবে ফরেনার্স ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া চালানো কোনওমতেই উচিত নয়।
সমিতির দাবি, ১) ফরেনার্স ট্রাইবুনাল এর পরিবর্তে বিশেষ বিচারবিভাগীয় আদালত গঠন করে পূর্ণাঙ্গ বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্বের বিচার করতে হবে। ২) ডি ভোটারের নতুন নোটিস প্রদান বন্ধ করতে হবে। ৩) ভিত্তিহীন তথাকথিত বিদেশি নোটিস দেওয়া বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
স্মারকপত্র প্রদান কালে প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুনীত রঞ্জন দত্ত, পরিমল চক্রবর্তী, তুষার দাস, বিষ্ণু দত্ত পুরকায়স্থ, গোপাল পাল, অজয় চৌধুরী, প্রীতি লাল দাস প্রমুখ।