মাধ্যমিকের প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়ে সংবাদের শিরোনামে উঠেছিলেন জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি সুভাষনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিদয়াল রায়৷ সম্প্রতি ডি আইয়ের রিপোর্টে তাঁকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে৷
সরকারি শিক্ষারত্ন খেতাব প্রাপ্ত তৃণমূলের এই শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রীতিমতো চক্র তৈরি করে প্রতিদিন পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নের প্যাকেট খুলে উত্তর জানিয়ে দিয়েছেন নিজের স্কুলের এক মেধাবী ছাত্রকে৷ তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তিনি অঙ্কের অবজেকটিভ প্রশ্নপত্র সলভ করে নাকি ওই স্কুলের এক অশিক্ষক কর্মীর মেয়েকে দিয়েছেন হলের ভেতরেই৷ কারা অভিযোগ করেছেন? অভিযোগ করেছেন ওই স্কুলেরই শিক্ষক বিশ্বজিৎ রায়৷ অন্যতম অভিযোগকারী এস আই অব স্কুল বিশ্বনাথ ভৌমিক৷ সংবাদে এও প্রকাশিত, হরিদয়ালবাবুর এই অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিও ক্লিপিংসও নাকি তৈরি করেছেন ওই স্কুলের কোনও শিক্ষক৷ এবং তা নাকি তুলেও দেওয়া হয়েছে মধ্য শিক্ষা পর্ষদের হাতে৷
তা হলে, অভিযুক্ত শিক্ষক ক্নিনচিট পেলেন কীসের ভিত্তিতে? এখানেই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সঙ্গে প্রশ্নফাঁস তদন্তের একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলের যে সন্ত্রাসের ঝটিকা বিরোধী দলের প্রার্থীদের সমূলে উপড়ে দিচ্ছে, প্রশ্নফাঁস তদন্তেও অনুরূপ সন্ত্রাসের গন্ধ৷ অভিযোগকারী বিশ্বজিৎ রায় তদন্ত কমিটিকে নাকি জানিয়েছেন তাঁর মানসিক অবস্থা তখন ভাল ছিল না৷ তাই রাগের বশেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিনি ওই অভিযোগ করেছিলেন৷
বিশ্বজিৎবাবুর রাগ পড়ল কোন শীতল হাওয়ায়? শোনা যাচ্ছে, অভিযোগকারী শিক্ষক এবং এস আই থেকে শুরু করে যারা প্রশ্নপত্র কেলেঙ্কারি এবং খাতা লোপাটের অভিযোগ জানিয়েছিলেন পর্ষদের কাছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং প্রভাবশালী মহল থেকে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে হুমকি, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ দেওয়া হচ্ছে যাতে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়৷ বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয় প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে৷ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে৷ এখন পরীক্ষার অন্তর্তদন্ত করে কার কতটুকু লাভ হবে’ (আনন্দবাজার পত্রিকা–৩০.০৩.২০১৮)
কেন শিক্ষামন্ত্রী তদন্ত চাইছেন না? সঠিকভাবে তদন্ত হলে শাসকদলের আরও রাঘববোয়াল জালে পড়বে– এই আশঙ্কা থেকেই কি প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারি ধামাচাপার অপচেষ্টা? ময়নাগুড়ির বিশিষ্ট মানুষজন নাগরিক চেতনা নামে একটি সংস্থা তৈরি করে বিডিও–র মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এক স্মারকপত্র পাঠিয়ে অবিলম্বে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন৷ শাসক দল যদি প্রশ্নফাঁস দুর্নীতিকে এভাবে প্রশ্রয় দেয় তা হলে আগামী দিনে মাধ্যমিক পরীক্ষা একটা প্রহসনে পরিণত হবে৷
(৭০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ২৭ এপ্রিল, ২০১৮)