২০২১ সালে ভারতে গরিবি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে। করোনা অতিমারির কারণে এবং বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দারিদ্র ভয়ঙ্কর অবস্থায় পৌঁছচ্ছে। ‘ইউনাইটেড নেশন ইউনিভার্সিটি’-র একটি সমীক্ষা বলছে, বিশ্ব ব্যাঙ্ক নির্ধারিত দারিদ্র সীমার সংজ্ঞা (দৈনিক প্রায় দুশো তেতাল্লিশ টাকায় জীবনধারণ) অনুযায়ী ভারতের ষাট শতাংশ (প্রায় ৮১ কোটি ২০ লক্ষ) মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করেন। লকডাউনের পরবর্তী পর্যায়ে তা পৌঁছে গেছে প্রায় ৯২ কোটিতে। এই অবস্থায় কোনও পর্যালোচনা ছাড়াই নভেম্বরে মোদি সরকার প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা বন্ধ করে দিয়েছে। লকডাউনের পরে রুটিরুজি হারানো মানুষের জন্য এই প্রকল্প চালু হলেও প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়ার আগে জনসাধারণের পরিস্থিতি নিয়ে কোনও সমীক্ষা হয়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে থাকা সংস্থা ‘ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর গবেষণায় জানা গেছে, অতিমারির দরুন ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্রের শিকার হবেন। অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮ ভাগের এক ভাগ (সেন্সাস বুরোর ইন্টারন্যাশনাল ডেটা বেস জানাচ্ছে, বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটির মতো) বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন।
২ ফেব্রুয়ারি খাদ্যমন্ত্রক সংসদে জানিয়েছে, খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় থাকা মানুষকে সুরাহা দিতে এপ্রিল থেকে মাসে মাথা পিছু বাড়তি পাঁচ কেজি চাল-গম বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছিল। এতে দেশের প্রায় ৮০.৪৩ কোটি মানুষ, পশ্চিমবঙ্গের ৬ কোটি মানুষ সুবিধা পেয়েছেন। প্রশ্ন হল দেশ এখনও করোনামুক্ত নয়, অর্থনীতিতে তার ধাক্কাও চলছে। বহু মানুষ কাজ ফিরে পাননি, ছাঁটাই হয়েছেন অনেকে। তা হলে সরকার কিসের ভিত্তিতে ধরে নিল, বিনামূল্যে বাড়তি চাল-গমের আর প্রয়োজন নেই।
গরিব দরদের কথা বলে যে সরকার, তারা গরিব মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নেয় কী করে? এরা আবার ‘আত্মনির্ভর ভারতের’ গল্প শোনায়!