সংসদীয় নির্বাচন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ঈশ্বরপ্রেরিত দূত বলে প্রচার করেছেন। এর তীব্র প্রতিবাদ করে মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের সভাপতি অধ্যাপক বিনায়ক নার্লিকার ও সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ভবানী শঙ্কর দাস এক বিবৃতিতে বলেন,
তিনি প্রাকৃতিক ভাবে জন্মগ্রহণ করেননি, তিনি ঈশ্বর-প্রেরিত দূত, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য কেবল অবৈজ্ঞানিকই নয়, নিকৃষ্ট ও স্থূল রুচির পরিচয়। দেশ যখন সংসদীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং বাকি কেন্দ্রগুলিতে ভোটাররা তাঁদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন, তখন দেশের সর্বোচ্চ পদ থেকে এই ধরনের কুসংস্কারমূলক অপপ্রচার অবমাননাকর এবং বিশ্বের সামনে দেশের গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনার মাপকাঠিকে অবনমিত করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ যুক্তিবাদী চিন্তাশীল জনগণের পক্ষ থেকে আমরা দাবি জানাই প্রধানমন্ত্রী নিঃশর্তভাবে এ ধরনের অযৌক্তিক মান্ধাতার আমলের দাবি প্রত্যাহার করবেন।
তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রচার চলছে। ‘১০,০০০ বছর আগে’ গণেশের মাথায় প্লাস্টিক সার্জারি হয়েছিল, মহাভারতে কৌরব মাতা গান্ধারীর ১০০ সন্তান প্রমাণ করে ‘সেই সময়ে’ ক্লোনিং ছিল– এই জাতীয় কথা ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের বিজ্ঞানী মহলকে শোনানো হল। কোভিড অতিমারিতে যখন কোটি কোটি দেশবাসী বিপন্ন, তখন তালি-থালি বাজিয়ে, প্রদীপ জ্বালিয়ে কোভিড প্রতিরোধ হবে বোঝানো হল, কোভিড প্রতিষেধক হিসাবে গোবর এবং গোমূত্র ব্যবহারের প্রচার করা হয়েছিল।
কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনন যা আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই বিরাজ করছে, এই ধরনের কু-মন্তব্য তাতে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে। এটি নবজাগরণের অগ্রদূত ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের চিন্তাভাবনা এবং সংগ্রামের পরিপন্থী। রাজনৈতিক ক্ষমতায় টিকে থাকার হীন উদ্দেশ্যে এসব করা। এই ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পৌরাণিক কাহিনীকে সত্য ঐতিহাসিক ঘটনা বলে দেখানোর আমরা তীব্র বিরোধিতা করি।
একটি যুক্তিবাদী, প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ, সামাজিক, স্বাস্থ্যসংগঠন হিসাবে আমাদের মত, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তাঁর প্রচার বাহিনী ক্রমাগত আমাদের দেশের নবজাগরণ ও গৌরবময় স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বোচ্চ সেকুলার নীতি-নৈতিকতাকে অবমাননা করে চলেছে। ঈশ্বরপ্রেরিত দূত হিসাবে এসে স্বয়ং ঈশ্বরেরই ইচ্ছা বাস্তবায়ন করছি, ২০৪৭ অবধি নিজেকে অতি-মানব হিসাবে উপস্থাপনা করার অপচেষ্টার অর্থ হল, ধূর্ততার সাথে তাঁর অনুসৃত সমস্ত জনবিরোধী নীতির দায় ঝেড়ে ফেলা, নিজে আরও ২৩ বছর ক্ষমতার শীর্ষে থাকার বাসনা। নতুন শিক্ষানীতি ২০২০-র মাধ্যমে তারা ইতিমধ্যেই ইতিহাসের বিকৃতি, শিক্ষার সকল স্তরে পরীক্ষামূলক ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারার মৌলিক বিষয়গুলিকে ধ্বংস করার জন্য বুলডোজার চালাচ্ছে, যার বিরুদ্ধে রেনেসাঁর অগ্রদূত এবং আপসহীন স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীদের নীতি অনুসরণ করে লড়াই জরুরি।