প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খ্রিস্টমাস সপ্তাহ পালনের জন্য একটি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। খ্রিস্ট ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রবীণরা ছিলেন গ্রুপে। গ্রুপে রাখা হয়েছিল খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে।
একজন প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ধর্মের, বর্ণের, সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে এই ধরনের অনুষ্ঠান করতেই পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যদি হন নরেন্দ্র মোদি, যিনি খ্রিস্টধর্মের উপর উগ্র হিন্দুত্ববাদী বহু আক্রমণ দেখেও রাজধর্ম পালন না করে হিমালয়ের মতো মৌন থাকেন, তাঁর উদ্যোগে খ্রিস্টমাস সপ্তাহ পালন সন্দেহ জাগায়, প্রশ্ন তোলে– হঠাৎ কেন তাঁর এই উদ্যোগ? অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ এবং ২২ জানুয়ারি তাঁর উদ্বোধন প্রস্তুতি নিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রী এত ব্যস্ত তখন এই প্রয়াসের উদ্দেশ্যই বা কী? আগ বাড়িয়ে খ্রিস্টপ্রীতির হেতুই বা কী?
প্রশ্ন শুধু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে উঠেছে তা নয়, এই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যেও উঠেছে। এই প্রয়াসের মধ্যে শুভ উদ্দেশ্যের সন্ধান না পেয়ে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে গেছে। তিন হাজারের বেশি খ্রিস্টান ব্যক্তিত্ব পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান করতেই পারেন কিন্তু ‘আমাদের নামে নয়’।
তাঁরা এক যৌথ প্রতিবাদপত্র লিখেছেন। সেখানে তাঁরা বলেছেন, ২০১৪ থেকে সারা দেশেই খ্রিস্টানদের উপর শাসক দলের আক্রমণ ধারাবাহিকভাবে হয়েছে। খ্রিস্টানদের স্কুল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গির্জা ধ্বংস করা হয়েছে। সাধারণ নাগরিক অধিকারগুলি থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যে ধর্মান্তরণ বিরোধী আইন করা হয়েছে, তা খ্রিস্টানদের ধর্মাচরণ, ধর্মীয় প্রচার করার মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হচ্ছে। খ্রিস্টধর্মের বহু মানুষকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে জেলে পোরা হয়েছে। ২০২৩-এর মে থেকে মণিপুরে খ্রিস্টানদের উপর একটানা আক্রমণ চলছে। দ্ব্যর্থহীনভাবে তাঁরা বলেছেন, কেন্দ্র ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত ছাড়া এ আক্রমণ ঘটতে পারে না।
তা হলে হঠাৎ কেন এই খ্রিস্টপ্রীতি? কারণ শিয়রে ভোট। মন্দির রাজনীতি, মুসলিম বিদ্বেষ আর খ্রিস্টপ্রীতির ভণ্ডামি– এই ত্র্যহস্পর্শ ভোট রাজনীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কারণ দশ বছরে মোদি সরকার এমন কিছু করেনি যার দ্বারা জনগণ আনন্দে বিজেপিকে ভোট দিতে যাবে। তাই একদিকে ভোট কেনার সরকারি প্রকল্প ঘোষণা, অন্য দিকে ধর্মের নামে মেরুকরণই মোদি সরকারের নির্বাচনী কৌশল। লক্ষণীয় দিকটি হল, এই ভণ্ডামি মানুষ ধরতে পারছে। প্রধানমন্ত্রীর গড়া কমিটি থেকে তিন হাজারেরও বেশি সদস্যের পদত্যাগেই তা স্পষ্ট।
(তথ্যসূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ, ০৫-০১-২০২৪)