করোনা অতিমাবির ভয়াবহ বিপদ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর। জন্য অনলাইন দাবিপত্রে স্বাক্ষর করতে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ দেশের জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। দাবিপত্রটি নিম্নরূপ :
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
করোনা অতিমারির মারাত্মক প্রথম অভিঘাত কাটিয়ে উঠার আগেই দ্বিতীয় অভিঘাত এসে পড়ল। প্রথম আক্রমণেই করোনা হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীকে কোরে পরিণত করেছে। আপনার সরকার এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তখন আপনি নিজে নমস্তে ট্রাম্প’ উৎসবে মত্ত ছিলেন। ইতিমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পৌঁছানোর সতর্কতা ইউরোপের দেশগুলি থেকে পাওয়া যাচ্ছিল এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আপনি বেশ খানিকটা সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু আপনি কিছুই করলেন না। কারণ সেই সময়ে আপনি ব্যস্ত ছিলেন কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে রামমন্দির নির্মাণে, সেন্ট্রাল ভিস্টার রূপায়ণে এবং পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের নেশায় মশগুল হয়ে। দেশ এখন দেখছে মৃত্যুর মিছিল। কেউ জানে না কোথায় গিয়ে এই মিছিল শেষ হবে।
দেশের সর্বত্রই এখন হাসপাতাল, বেড, আইসিইউ, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, ওষুধ, চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মীর অভাব। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে এবং আরও বহু লক্ষ মানুষ মারা যাবে। বহু মানুষ এমনকি হাসপাতালের গেটে, রাস্তায় পড়ে মারা যাচ্ছে। শ্মশান এবং কবরস্থানগুলিতে মৃতদেহের স্থূপ, বাইরে মৃতদেহের দীর্ঘ সারি। বহু মানুষের অন্তেষ্টি অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেখানে সেখানে। এমনকি পথ-কুকুরে পড়ে থাকা মৃতদেহ খুবলে খাচ্ছে। যে দেশ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের বড়াই করে এই হচ্ছে সেই দেশের নজিরবিহীন ভয়ঙ্কর চেহারা। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কি অনিবার্য ছিল? একে কি কোনও ভাবেই এড়ানো যেত না? এই অপরাধজনক অবহেলা এবং অমানবিকতার জন্য দায়ী কে? এখন যখন করোনা অতিমারির দ্বিতীয় | ঢেউ গোটা দেশকে গ্রাস করেছে এবং ক্রমাগত আরও ছড়িয়ে পড়ছে, তখনই তৃতীয় ঢেউ ওঠার মারাত্মক আশঙ্কা কড়া নাড়ছে।
আরও মারাত্মক ক্ষতি রুখবার জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায়, এমনকি সেনাবাহিনী নামিয়ে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি কার্যকর করার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি— ১) নগর ও শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চয়েতে হাসপাতাল তৈরি করতে হবে, ২) যথেষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মী, প্রয়োজনীয় পরিমাণে অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, বিনামূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা করে প্রতিটি হাসপাতালকে সুসজ্জিত রাখতে হবে, ৩) সেনা হাসপাতালগুলিকে সাধারণের জন্য খুলে দিতে হবে, ৪) সকলের জন্য বিনামূল্যে ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করতে হবে, ৫) ওষুধ, অক্সিজেন প্রভৃতি নিয়ে কালোবাজারি যে কোনও মূল্যে বন্ধকরতে হবে।
আমরা জানি উপরোক্ত ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। তার জন্য আমাদের প্রস্তাব— ক) অক্সফাম রেকর্ড অনুযায়ী অগণিত দেশবাসীর মধ্যে ১০০ জন ভারতীয় বহু শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৬৩ জনই ২৯ লক্ষ কোটি টাকার মালিক। এই জাতীয় বিপর্যয়ের মোকাবিলায় জন্য তাঁদের প্রত্যেককে ৫০ শতাংশ অর্থ দান করার জন্য বলা হোক, খ) রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, কেন্দ্র এবং সব রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের এক বছরের বেতন, যা তাঁরা জনগণের দেওয়া অর্থ থেকেই পেয়ে থাকেন, তা তাঁরা এই খাতে ব্যয় করুন, গ) পিএম কেয়ার্স ফান্ড প্রকাশ্যে আনা হোক এবং | অতিমারি মোকাবিলায় এর পুরো টাকা ব্যয় করা হোক, ঘ) শিক্ষাখাত ছাড়া অন্য সব খাতের বাজেট কমিয়ে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বাড়ানো হোক। এই প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত বিশেষ অর্থভাণ্ডার উপরোক্ত প্রয়োজনে ব্যবহার করা ছাড়াও কর্মচ্যুত শ্রমিক, বেকার এবং দরিদ্র মানুষদের আর্থিক সাহায্যদানে ব্যয় করা হোক। এটাই এই সময়ের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন। আশা করি আপনি আমাদের এই আবেদনে সাড়া দেবেন।