70 Year 30 Issue 16 March 2018
এস ইউ সি আই (সি)–র রাজ্য সম্পাদক কমরেড সৌমেন বসু ৮ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেন, কেন্দ্রীয় সর্বশিক্ষা আইনের পাশ–ফেল সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করার প্রস্তাব লোকসভায় পাশ করাবার একাধিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও, দেখা গেল, আবার এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সংবাদপত্রে বলেছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে নাকি পাশ–ফেল ফেরাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
সংবাদপত্রের এই ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে কেন্দ্রের এ হেন সিদ্ধান্তের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নাকি সহমত৷ এ রাজ্যের জনগণের কাছে রাজ্য সরকারের প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল চালু করার জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতির এই লঙঘন অত্যন্ত নিন্দনীয়৷
তিনি বলেন, এ রাজ্যের আপামর জনগণ জানেন, পূর্বতন সিপিএম ফ্রন্ট সরকারের আমলে প্রাথমিকে ইংরেজি ও পাশ–ফেল প্রথা বাতিল করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল হিসাবে একমাত্র এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাব্রতীদের সমর্থন নিয়ে ও জনগণকে যুক্ত করে আন্দোলন করে আসছে৷ আন্দোলনের চাপে ২০০১ সালে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার দাবি সি পি এম সরকার মেনে নিতে বাধ্য হয়, কিন্তু প্রাথমিক স্তরে পাশ–ফেল ফেরায়নি৷
ইতিমধ্যে ২০০৯ সালে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার সর্বশিক্ষার নামে আইন এনে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ–ফেল তুলে দেয় এবং ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসে বিজেপি সরকারও এই আইন চালু রেখেছে৷ এর ফলে দেশের কোটি কোটি ছাত্রদের শিক্ষাজীবনে ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে চলেছে৷ পশ্চিমবঙ্গের দৃষ্টান্ত সারা দেশের সামনে তুলে ধরে প্রথম শ্রেণি থেকে পাশফেল চালুর দাবিতে আমরা জনমত গড়ে তুলেছি৷ পশ্চিমবঙ্গে এই আন্দোলন সর্বব্যাপক রূপ নেয়৷
তৃণমূল সরকার এই ন্যায্য দাবিতে কর্ণপাত না করায় গত বছর ১৭ জুলাই প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল ফেরানোর দাবিতে আমরা সারা বাংলা সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করি৷ ৮ জুন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এই ধর্মঘটের সিদ্ধান্তের কথা জানাই৷ রাজ্যব্যাপী ধর্মঘটের প্রচারে জনসমর্থন ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়৷ এই পরিস্থিতিতেই ১৩ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী টেলিফোনে আমাদের জানান যে, তৃণমূল সরকারও প্রাথমিক স্তরেই পাশ–ফেল ফেরাতে চায়৷ তিনি আরও জানান, এই মর্মে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবিও জানিয়েছেন, আবারও চিঠি দিচ্ছেন৷ আমাদের দলকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী অনুরোধ করেন৷
পরের দিন তিনি আমাদের চিঠি দিয়েও একই কথা জানান৷ মন্ত্রী মহাশয়ের এই সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে আমরা ১৭ জুলাইয়ের ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা করি৷ তারপরেও দু’বার আমাদের দল রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি দিয়ে শিক্ষার চরম সর্বনাশের কথা জানিয়ে অতি দ্রুত প্রথম শ্রেণি থেকে পাশফেল প্রথা চালুর দাবি জানায়৷ এরপর ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭ শিক্ষামন্ত্রী বিকাশভবনে রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে একটি বৈঠক করেন পাশ–ফেল কোন শ্রেণি থেকে চালু করা উচিত, সে সম্পর্কে মতামত গ্রহণের জন্য৷ সেখানে উপস্থিত কংগ্রেস ও সিপিএমের প্রতিনিধিরা বাদে অন্য সকলেই প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল ফেরাবার সুনির্দিষ্ট অভিমত দেন৷
শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করবেন৷ তারপর দুই মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী কোনও ঘোষণা করেননি৷ বরং দীর্ঘ সময় নীরব থাকার পর কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ এখন রাজ্যের সহমত উল্লেখ করে বলছে, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ–ফেল চালু করবে৷ আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি এটা জনস্বার্থের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা৷ এর বিরুদ্ধে আমরা আবারও আন্দোলন গড়ে তুলব৷ কমরেড সৌমেন বসু বলেন, বর্তমানে পরীক্ষা পর্ব চলছে৷ এই পর্ব শেষ হলেই আমরা প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ–ফেল চালুর দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি নেব৷ আমরা জানি এ রাজ্যের জনগণ ও শিক্ষাব্রতীগণ এই আন্দোলনকে সর্বান্তকরণে সফল করবেন৷