এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ১৬ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন,
নোট বাতিল ও জিএসটি– এই দুই আঘাতে জনগণের অর্থনৈতিক জীবন তছনছ করে দেওয়ার পর কর্পোরেট পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার আর এক মারাত্মক আঘাত হানতে চলেছে৷ এই সরকার ২০১৭–র ১০ আগস্ট সংসদে এনেছে ‘ফিনান্সিয়াল রেজলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইনসিওরেন্স বিল, ২০১৭ (এফআরডিআই বিল)৷ এই বিলে আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির আর্থিক সংকট দূর করতে একটি নবগঠিত কর্পোরেশনকে সাধারণ আমানতকারীর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার, ‘স্থির’ সুদের হার পরিবর্তন করার, ব্যাঙ্ককে সঞ্চিত আমানত তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করার, সঞ্চিত আমানতকে স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত ব্যাঙ্কের শেয়ারে বা ক্যাপিটাল মার্কেটে বিমায় পরিণত করার (শেয়ার বাজারের চরম অনিশ্চিত ওঠা–নামার প্রভাবে এই টাকা ফিরে পাওয়ারও এমনকী কোনও নিশ্চয়তা থাকবে না) ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷
স্পষ্টতই, আমানতকারীর স্বার্থ সুরক্ষার নামে এই বিল ব্যাংকে সঞ্চিত আমানতকে চরম অরক্ষিত অবস্থায় ঠেলে দেবে এবং কোনও ব্যাংক আর্থিক দুরবস্থায় পড়লে তার গ্রাহকদের আমানত রক্ষা করার দায়িত্ব থেকে সরকারকে অব্যাহতি দেবে৷ এর দ্বারা কার্যত এই বিল জনগণের সঞ্চিত অর্থ কেড়ে নিয়ে আর্থিক ভাবে দুর্বল বা দেউলিয়া হয়ে পড়া ব্যাংকগুলিতে নতুন করে পুঁজি ঢালার বা ‘বেল আউট’ করার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে সরকারকে৷ প্রস্তাবিত বিলে একেই ‘বেল ইন’ বলে চিহ্ণিত করা হয়েছে যার অর্থ হল, দেশের মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ ইচ্ছামতো ব্যবহার করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আর্থিক দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করার অভ্যন্তরীণ কৌশল৷ বলা বাহুল্য, মুষ্টিমেয় কয়েকজন বৃহৎ পুঁজিপতির ইচ্ছাকৃত ও অন্যায় ঋণখেলাপের কারণে ক্রমবর্ধমান ‘নন পারফর্মিং অ্যাসেট’ বা ‘খারাপ ঋণ’জনিত পরিস্থিতি সামাল দিতেই এই বিল তৈরি করা হয়েছে৷ জনগণের টাকা লুঠ করে সরকার এইসব ঋণখেলাপি শিল্পপতিদের ভরতুকি দিতে চায়৷
অপরাধী শাসক একচেটিয়া পুঁজিপতিদের নগ্ণভাবে বেল আউট করার ও পুঁজিবাদী সংকটের সমস্ত বোঝা সরাসরি সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের শেষ রক্তবিন্দুটুকু পর্যন্ত নিংড়ে নেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার৷ এই সরকারের এ হেন সর্বনাশা আক্রমণ রুখে দিতে প্রত্যেক দেশবাসীর কাছে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাই৷