প্রতিরক্ষা খাতে এ বারের বাজেটে রেকর্ড পরিমাণ বরাদ্দ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগের বারের তুলনায় ৯.৫৫ শতাংশ বাড়িয়ে এ বার তা করা হয়েছে ৬.৮ লক্ষ কোটি টাকা। এই প্রতিরক্ষা মানে কার প্রতিরক্ষা? নিশ্চয়ই দেশের? দেশ মানে যদি দেশের মানুষ হয়, তবে সেই মানুষকে রক্ষা করাই তো দেশরক্ষা! অর্থাৎ শত্রুপক্ষের আক্রমণ যদি ঘটে, তা থেকে রক্ষা করাই শুধু নয়, দেশের মানুষের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা-কর্মসংস্থানের সুবন্দোবস্ত করে যথাযথ ভাবে তার জীবনমান রক্ষা করাই যথার্থ দেশরক্ষা। তা কি দেখা যাচ্ছে?
দেশের মানুষের বর্তমান অবস্থাটা ঠিক কেমন? যে কোনও দেশে শিশু ও কিশোরদের ভবিষ্যতের নাগরিক আখ্যা দেওয়া হয় এবং দেশের শাসক নেতা-মন্ত্রীদের মুখে নিয়মিতই তা নিয়ে বিস্তর বাগাড়ম্বর শোনা যায়। দেশের সেই ভবিষ্যতের নাগরিকরা কী ভাবে বেড়ে উঠছে? রাষ্ট্র কি তাদের সমস্ত দিক থেকে সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠার দায়িত্ব পালন করছে? দেখা যাক।
নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের লোকসভায় দেওয়া এক তথ্যে জানা যাচ্ছে, দেশের ৫ বছর বয়সের নীচের শিশুদের ৫০ শতাংশ স্থায়ী অপুষ্টির শিকার। ৩৬ শতাংশ শিশুর উচ্চতা কম এবং ১৭ শতাংশ শিশু কম ওজনের। যে মায়েরা এই শিশুদের জন্ম দেন, লালনপালন করেন তাঁদের অবস্থাটা ঠিক কেমন? তথ্য অনুযায়ী, ১৫-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের ৫৭ শতাংশ রক্তাল্পতা এবং অপুষ্টিতে ভুগছে। এই অপুষ্টি দূর করতে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
মিড ডে মিলের কথা ধরা যাক। এ বারের বাজেটে সেই খাতে বরাদ্দ মাত্র ০.২৬ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২,৫০০ কোটি টাকা। মূল্যবৃদ্ধি যে ভাবে ঘটছে এবং টাকার দাম নামছে, তাতে বাস্তবে বরাদ্দ কমানোই হয়েছে। শিশু, কিশোরী, গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের পুষ্টির জন্য যে অঙ্গনওয়াড়ি ব্যবস্থা, সেই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে মাত্র ৭৬০ কোটি টাকা। জনসংখ্যা এবং মূল্যবৃদ্ধির বিচারে এটিও বাস্তবে কমানোই।
তা হলে এই সব খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না বাড়িয়ে প্রতিরক্ষা খাতে এমন ব্যাপক বরাদ্দ কেন? মূলত অত্যাধুনিক অস্ত্র, এয়ারক্রাফট, যুদ্ধবিমান কিনতে এই বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা খরচ হওয়ার কথা। ভারতীয় সেনার হাতে আধুনিক মানের অস্ত্র তুলে দেওয়ার পাশাপাশি, যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্যও নাকি এই বিপুল বরাদ্দ। এর দ্বারা নাকি ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে। সরকারের লক্ষ্য, বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় ভাবে অস্ত্র-গোলাবারুদ তৈরি করা। পাশাপাশি, ওই বরাদ্দ ব্যবহার হবে বিদেশ থেকে জেট প্লেন, সাবমেরিন, ড্রোনের মতো আধুনিক অস্ত্র কেনার কাজে।
এই যে বিরাট রণসম্ভার, বিরাট যুদ্ধ প্রস্তুতি, এই যে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে মারণাস্ত্র তৈরি, সে-সব কার জন্য? ভারতের সামনে কি কোনও যুদ্ধ হুমকি রয়েছে? চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত ছোটখাটো কিছু মতপার্থক্য ছাড়া তেমন কোনও হুমকি বাস্তবে নেই। দুই দেশের বাণিজ্য সংক্রান্ত আমদানি-রফতানিরও কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি। এ থেকেই স্পষ্ট যে, সমস্যা তেমন গুরুতর নয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে সমস্যাই ঘটে থাকুক তা ভারতের কাছে কোনও হুমকি হিসাবে ধরা যায় না। দুই দেশের আমদানি-রফতানিও যথারীতি স্বাভাবিক রয়েছে। পাকিস্তান থেকেও কোনও যুদ্ধ হুমকির কথা শোনা যায়নি। তা হলে?
এই ‘তা হলে’র মধ্যে রয়েছে এই যুদ্ধ প্রস্তুতির আসল তত্ত্ব। সমস্ত পুঁজিবাদী দেশের মতোই ভারতও আসলে আজ দাঁড়িয়ে আছে সামরিক অর্থনীতির উপর। ‘সামরিক অর্থনীতি’ কথাটির অর্থ কী? সাধারণ ভাবে মানুষের প্রয়োজনকে ভিত্তি করে দেশের জমিতে এবং কলে-কারখানায় যে উৎপাদন হয়, তার কেনা-বেচা এবং আমদানি-রফতানিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে অর্থনীতি। আর পুঁজিবাদী অর্থনীতি মানে হল বাজার অর্থনীতি, যার ভিত্তি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। কিন্তু পুঁজিবাদী তীব্র শোষণের ফলে দেশের বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের কেনার ক্ষমতাই নেই। ফলে শিল্প এবং ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে দেখা দিচ্ছে তীব্র মন্দা। দেশের শিল্পক্ষেত্রের যে উৎপাদন ক্ষমতা, তার বড় অংশই অকেজো হয়ে পড়ে থাকছে। কারণ উৎপাদন ক্ষমতার সবটা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন করলে তা বিক্রি না হয়ে গুদামে জমে থাকছে। জীবনের জরুরি প্রয়োজনগুলি জোটাতেই মানুষ হিমসিম খাচ্ছে– শিল্প ও ভোগ্যপণ্য কিনবে কী করে? ফলে উৎপাদন শিল্পে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। এই অবস্থায় অর্থনীতিতে কৃত্রিম তেজি ভাব তৈরি করতে সরকার প্রতিরক্ষা এবং সামরিক শিল্পের বাজারটি, যা এত দিন পুরোপুরি রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র হিসাবেই ছিল, সেটিকে এখন বেসরকারি পুঁজিপতিদের জন্য খুলে দিয়েছে। অর্থাৎ সরকার নিজে যেমন রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলিতে উৎপাদিত যুদ্ধ সরঞ্জাম বিশ্বের বাজারে বিক্রি করে মুনাফা করছে তেমনই বেসরকারি পুঁজির মুনাফার জন্যও একই ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
বেসরকারি উৎপাদকদের থেকে ভোগ্যপণ্য কিনে নিয়ে সরকার সেই বাজারকে চাঙ্গা করতে পারে না, কিন্তু প্রতিরক্ষা সামগ্রী কিনে সেই বাজারকে সরকার কৃত্রিম ভাবে হলেও চাঙ্গা রাখতে পারে। তাই বেসরকারি পুঁজি এখন ভোগ্যপণ্যের পরিবর্তে সামরিক শিল্পে খাটছে। বেসরকারি শিল্পে উৎপাদিত অস্ত্র সহ নানা যুদ্ধসামগ্রী কিনে নিয়ে কৃত্রিম ভাবে উৎপাদন শিল্পকে চাঙ্গা রাখতে সরকার সামরিক খাতে ব্যয় প্রতি বছর বাড়িয়েই চলেছে। এই হল অর্থনীতির সামরিককীকরণ। কিন্তু অর্থনীতিকে স্থায়ী ভাবে সামরিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন করতে হলে যুদ্ধের উন্মাদনা তৈরি করা দরকার। তা না হলে প্রতিরক্ষা খাতে এই বিপুল ব্যয়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্য বঞ্চিত অভুক্ত মানুষ ক্ষুব্ধ হবে, তাদের মনে প্রশ্ন উঠবে। তাই বড় যুদ্ধ না হলেও সীমান্তকে কেন্দ্র করে হোক, বা অন্য কোনও ভাবে হোক, ছায়াযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করে সরকার মানুষকে তাতিয়ে রাখার চেষ্টা করে। এ জন্য কখনও প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে কাউকে বেছে নিয়ে শত্রু হিসাবে দেখায় এবং একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিবেশ তৈরি করে। আবার কখনও তাদের মধ্যেই বেশ কিছু দেশকে বেছে নিয়ে তাদের ত্রাতা সেজে নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে তাদের অস্ত্র বিক্রি করে। কখনও কোনও একটি দেশের মধ্যে দুটি শত্রুপক্ষ খাড়া করে গৃহযুদ্ধ বাধায় এবং দু’পক্ষকেই অস্ত্র বিক্রি করে।
মহান স্ট্যালিন দেখিয়ে গিয়েছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ছোট-বড় সব দেশই বাজার সঙ্কট থেকে রেহাই পেতে সামরিক অর্থনীতির দিকে ঝুঁকছে। এ দেশে মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক শিবদাস ঘোষ গত শতকের সাতের দশকের শুরুতেই দেখিয়েছিলেন কী ভাবে পিছিয়ে পড়া দেশ হওয়া সত্তে্বও ভারত যুদ্ধ অর্থনীতির দিকে, সামরিক শিল্পের দিকে ঝুঁকছে এবং দেশে একটা শিল্পপুঁজি-আমলা-মিলিটারি চক্র গড়ে উঠছে। আজ তো সামরিক শিল্পই ভারতে প্রধান শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারণ, যুদ্ধাস্ত্র শুধু নির্মাণ করলেই হয় না, প্রয়োজন তা নিয়মিত বিক্রি করা। তার জন্য দরকার যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির বাজারের। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি বিদেশ সফরের সঙ্গী হন দেশের অস্ত্র উৎপাদকরা এবং সমস্ত বৈদেশিক চুক্তির অন্যতম অংশ হিসাবে থাকে অস্ত্র আমদানি-রফতানির চুক্তি। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আলিঙ্গন করেন, আবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকেও জড়িয়ে ধরেন। তাই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলতে বলতেই তিনি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরঞ্জাম জুগিয়ে চলেন। দীর্ঘ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নীতির অঙ্গ হিসাবে যে ভারত চিরকাল প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার দাবির পক্ষে থেকেছে, আজ সেই নীতিকে দু’পায়ে মাড়িয়ে ভারতীয় অস্ত্র উৎপাদকদের মুনাফার জন্য ইজরায়েলে অস্ত্র সরবরাহের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে ভারত সরকার।
আমেরিকা সহ অন্যান্য বনেদি পুঁজিবাদী দেশগুলির মতোই ভারতও এই ভাবে ক্রমাগত অর্থনীতির সামরিকীকরণ ঘটাচ্ছে এবং অস্ত্র নির্মাণ ও ব্যবসার উপর জোর দিচ্ছে। অস্ত্র উৎপাদন শিল্প ভারতে প্রধান শিল্পের জায়গা নিচ্ছে এবং ভারত ক্রমাগত অস্ত্র রফতানিতে বিশ্বে প্রথম সারিতে জায়গা নিতে চাইছে। তাই বাজেটে শিশুদের খাদ্যের ব্যবস্থা হয় না, মায়েদের পুষ্টির ব্যবস্থা হয় না, দেশের মানুষের জন্য শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যবস্থা হয় না, অথচ প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ক্রমাগত বেড়ে চলে এবং সেই বরাদ্দ অর্থে ভারতীয় একচেটিয়া পুঁজি ফুলে-ফেঁপে লাল হয়ে যায়।
২০২০-২১ আর্থিক বছরেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আত্মনির্ভরতার হাওয়া তুলে বেসরকারি প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেয়। টাটা, মাহিন্দ্রা, এল অ্যান্ড টি, রিলায়েন্স সহ দেশের ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০০টি বেসরকারি কোম্পানি এখন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির সঙ্গে যুক্ত। বেসরকারি ক্ষেত্রে অস্ত্র উৎপাদন এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য সরকার প্রয়োজনীয় অস্ত্রের একটা ভাল অংশ এ বার বেসরকারি উৎপাদকদের থেকে সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অর্থবর্ষে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র থেকে যে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকার অস্ত্র সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৭ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বেসরকারি অস্ত্র উৎপাদকদের থেকে কেনার জন্য। ২০২৫-২৬ এ এই পরিমাণ বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভারত গত অর্থবর্ষে আমেরিকা, ফ্রান্স সহ বিশ্বের ১০০টি দেশে অস্ত্র রফতানি করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন ২০২৯-এর মধ্যে ভারত বিদেশে ৫০ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র রফতানি করবে। অস্ত্রের বৈদেশিক বাণিজ্য গত ১০ বছরে বেড়েছে ৩০ গুণ।
গোটা বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদী অর্থনীতির চালকের আসনে যাঁরা বসে রয়েছেন তাঁরা কেউ সাধারণ মানুষ নন, সাধারণ মানুষের নেতা নন, সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা তাঁদের ভাবনার মধ্যে নেই। শুধুমাত্র একচেটিয়া মালিকদের আরও মুনাফার জোগাড় কী ভাবে করে দেওয়া যাবে তার ব্যবস্থা করতেই তারা ব্যস্ত। তাই ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের জন্য এঁদের কারও কোনও উদ্যোগ নেই। প্যালেস্টাইনে নারী-শিশু সহ প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের আহত হওয়া এবং বিস্তীর্ণ এলাকার ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গুঁড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার পরও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি কেউই যুদ্ধ বন্ধের জন্য উদ্যোগ নেয় না। বাস্তবে আমেরিকা, ইউরোপ সহ সমস্ত বড় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রই এই যুদ্ধ থেকে লাভবান হয়ে চলেছে। যুদ্ধ এই দেশগুলির অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলছে। স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি অস্ত্রশিল্পকে চাঙ্গা রাখতেই ভারত একই রকম ভাবে অর্থনীতির সামরিকীকরণের রাস্তায় এগিয়ে চলেছে। সেই কারণেই বাড়ছে ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ। ফলে এটা পরিষ্কার যে, প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল বরাদ্দ বৃদ্ধির সঙ্গে ভারতীয় জনগণকে রক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই। এর দ্বারা ওরা প্রতিরক্ষা দিতে চায় একমাত্র মুমূর্ষু পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে।
কিন্তু আমরা যারা সব দেশেই সাধারণ মানুষ, খাদ্যের অভাবে, বস্ত্রের অভাবে শিক্ষা-চিকিৎসার অভাবে অমানুষের জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছি, তারা কি এটাই চলতে দেব? এর বিরুদ্ধে দাঁড়াব না? এর প্রতিবাদ করব না? মুষ্টিমেয় কয়েকজন অস্ত্র ব্যবসায়ীর হাতে বিশ্বের মানুষের ভাগ্যকে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকব আর হা-হুতাশ করব?
মহান লেনিন বহু দিন আগেই দেখিয়ে গিয়েছেন– যত দিন সাম্রাজ্যবাদ থাকবে তত দিন যুদ্ধও থাকবে। কিন্তু যুদ্ধকে আশ্রয় করে পুঁজিবাদী অর্থনীতি টিকে থাকার চেষ্টা করলেও তা সাময়িক। এতে যে সঙ্কট কাটবে না প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ। পুঁজিবাদী অর্থনীতি তার নিজস্ব নিয়মেই প্রতি মুহূর্তে সঙ্কটের জন্ম দিয়ে চলেছে। যতদিন সমাজতন্ত্র বিরোধী শিবির হিসাবে ছিল তত দিন যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির পক্ষে গ্যারান্টি হিসাবে তার উপস্থিতি ছিল। তত দিন হয় কথায় নয় কথায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি এ ভাবে অন্য দেশের উপর চড়াও হয়ে গণহত্যা ঘটাতে পারত না। বিশ্বের প্রতিটি শান্তিকামী মানুষকে তাই আজ সাম্রাজ্যবাদী লোভ, বর্বরতা, অমানবিকতার বিরুদ্ধে শান্তির যথার্থ শক্তি সমাজতন্ত্রের পক্ষেই দাঁড়াতে হবে, পুঁজিবাদ বিরোধী সংগ্রামে শামিল হতে হবে।