১৮৮৩ সালে বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের মহান শিক্ষক ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস রচনা করেন ‘প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতা’৷ এতে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের আলোকে প্রকৃতিবিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বগত সমস্যাগুলির সর্বাঙ্গীণ ব্যাখ্যা দেন তিনি৷ রচনার মুখবন্ধে সমগ্র বিষয়টি চুম্বকে তুলে ধরেছিলেন এঙ্গেলস৷ তাঁর জন্মের দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষে মুখবন্ধটি প্রকাশ করা হল৷ এবার তৃতীয় কিস্তি৷
(৩)
আমাদের এই মহাজাগতিক দ্বীপ, যার প্রান্ত ঘিরে রয়েছে ছায়াপথের নক্ষত্রমণ্ডলীর বেড়া, সেখানে অগণিত সূর্য ও সৌরজগত গড়ে ডঠছে ঘূর্ণ্যমান দীপ্তিমান বাষ্পপুঞ্জের সংকোচন ও শীতলতাপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে৷ এই বাষ্পপুঞ্জের গতির নিয়ম হয়ত ধরা পড়বে আরও কয়েক শতক ধরে তারাদের প্রকৃত গতি পর্যবেক্ষণের পর৷ স্বভাবতই এর বিকাশ সর্বত্র সমান গতিতে হয়নি৷ কিছু কিছু কৃষ্ণ বস্তুপিণ্ড– যা গ্রহ নয়, তাই তাকে নির্বাপিত নক্ষত্র বলে ধরা হচ্ছে– তার অস্তিত্বের কথা জ্যোতির্বিজ্ঞানের জানার আওতায় আসছে (ম্যাডলার)৷ অন্যদিকে (সেকির মতানুযায়ী) বাষ্পীভূত নীহারিকাপুঞ্জের একাংশ আমাদের নক্ষত্রমণ্ডলের মধ্যে রয়েছে অসম্পূর্ণ সব সূর্যের আকারে, এর ফলে– ম্যাডলার যা বলেন– এই অনুমান বাতিল হয় না যে, অন্য নিহারীকাগুলি হল সুদূরবর্তী স্বতন্ত্র মহাজাগতিক দ্বীপপুঞ্জ, যার বিকাশের আপেক্ষিক স্তরটি নির্ণীত হতে পারে স্পেকট্রোস্কোপ দ্বারা৷
কীভাবে একটা স্বতন্ত্র নীহারিকা থেকে সৌরজগত গড়ে ডঠেছে তা লাপ্লাস যেমন বিশদ ও চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন তা আজও অতুলনীয়৷ পরবর্তীকালের বিজ্ঞান তাঁর কথাকে ক্রমেই বেশি করে সমর্থন করেছে৷
এইভাবে স্বতন্ত্র এক একটা জ্যোতিষ্ক যা তৈরি হল, সূর্য তথা তার গ্রহ ও উপগ্রহ– এই সবের মধ্যে প্রথমে পদার্থের যে গতিরূপটার প্রাধান্য থাকে তাকে আমরা বলি তাপ৷ সূর্যের মতো প্রচণ্ড ডত্তপ্ত বস্তুপিণ্ডে রাসায়নিক যৌগের ডপস্থিতির প্রশ্নই উঠতে পারে না৷ এই অবস্থায় তাপ কীভাবে বিদ্যুৎ বা চৌম্বক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে তা ক্রমাগত সৌর পর্যবেক্ষণের পরই দেখা যাবে৷ এ কথা আজ প্রমাণিত বললেই চলে যে, সূর্যের মধ্যে যে যান্ত্রিক গতি আছে তার উদ্ভব একান্তই তাপের সঙ্গে অভিকর্ষের সংঘাত থেকে৷
বস্তুপিণ্ডের ভর যত কম হয় তত দ্রুত তা শীতল হয়৷ উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ ও উল্কাপিণ্ড প্রথম ঠাণ্ডা হয়ে যায়, যেমন আমাদের চাঁদ বহু আগেই নির্বাপিত হয়েছে৷ গ্রহগুলি তুলনায় ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়৷ কেন্দ্রীয় বস্তুপিণ্ডটি সবচেয়ে ধীরে ঠাণ্ডা হয়৷
ক্রমশ ঠাণ্ডা হওয়ার সাথে সাথে বস্তুর গতির বিভিন্ন রূপগুলির পারস্পরিক ক্রিয়ায় শক্তির রূপান্তর ঘটে এবং সেগুলি একে একে প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে৷ ক্রমে একটা পর্যায় আসে যখন রাসায়নিক আকর্ষণ দেখা দিতে থাকে, পূর্বের রাসায়নিকভাবে অভিন্ন উপাদানগুলি একের পর এক রাসায়নিকভাবে বিভিন্ন হয়ে উঠতে থাকে, রাসায়নিক ধর্ম অর্জন করে ও পরস্পর যৌগিক মিলনে বাঁধা পড়ে৷ তাপ ক্রমশ কমার সাথে সাথে রাসায়নিক যৌগগুলিরও রূপান্তর ঘটতে থাকে৷ এই প্রক্রিয়া কেবল পৃথক পৃথক মৌলগুলিকেও প্রভাবিত করে তাই নয়, বিশেষ বিন্যাসে সংযোজিত মৌলগুলিকে প্রভাবিত করে৷ নতুন পরিস্থিতিতে গ্যাসীয় পদার্থের কিছু অংশ তরল ও পরে কঠিন আকার নেয় এবং এভাবে উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গেও তা বদলায়৷
একটা স্তরে এসে গ্রহের কঠিন বহিরাবরণ গড়ে ওঠে এবং ডপরিতলে যখন জল সঞ্চিত হয় তখন কেন্দ্রীয় জ্যোতিষ্ক্ থেকে প্রাপ্ত তাপের তুলনায় বেশি হারে গ্রহের নিজস্ব আভ্যন্তরীণ তাপ কমতে থাকে৷ তৈরি হয় এমন বায়ুমণ্ডল, যা আজ আমরা যাকে আবহাওয়া বিজ্ঞান বলি, তার আওতায় পড়ে৷ গ্রহের ডপরিতল হয়ে ওঠে ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ক্ষেত্র, সেখানে ভূগর্ভের জ্বলন্ত তরলের ধীর ক্ষীয়মাণ বাহ্যিক ফলাফলের চেয়ে আবহমণ্ডলের অধঃক্ষেপজনিত স্তর ক্রমবর্ধমান প্রাধান্য পেতে থাকে৷
শেষ পর্যন্ত তাপমাত্রা যদি এমনভাবে সমান হয়ে আসে, যার দ্বারা গ্রহের উপরিতলের এক বড় অংশের তাপমাত্রা প্রোটিনের জীবনধারণের ডপযুক্ত তাপের চেয়ে বেশি হয়ে যায় না, এমন অবস্থায় অন্যান্য রাসায়নিক পূর্বশর্তগুলি অনুকূল থাকলে জীবন্ত প্রোটোপ্লাজমের উদ্ভব হয়৷ এই পূর্বশর্তগুলি কী তা আমরা এখনও জানি না৷ এতে আশ্চর্যের কিছু নেই, কারণ প্রোটিনের রাসায়নিক গঠন এখনও পর্যন্ত জানা নেই৷ বিভিন্ন রাসায়নিক কাঠামো নিয়ে কত ধরনের প্রোটিন জাতীয় বস্তু আছে তাও আমাদের জানা নেই৷ মাত্র বছর দশেক আগে জানা গিয়েছে, পুরোপুরি গঠনহীন প্রোটিনও পরিপাক, রেচন, চলন, সংকোচন, উত্তেজনায় সাড়া দান ও পুনরুৎপাদনের মতো জীবনের মূল ক্রিয়াগুলি সম্পাদন করে৷
পরবর্তী অগ্রগতি ঘটতে এবং এই গঠনহীন প্রোটিন থেকে কেন্দ্র (নিউক্লিয়াস) ও ঝিল্লি (মেমব্রেন) গঠিত হয়ে প্রথম কোষ তৈরি হতে সম্ভবত হাজার হাজার বছর লেগেছে৷ এইপ্রথম কোষই পরবর্তীকালের গোটা জৈবজগতের অঙ্গসংস্থানগত বিকাশের ভিত্তি রচনা করে দিয়েছে৷ প্রত্নজীববিজ্ঞানের সংগৃহীত সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান করা যেতে পারে, প্রথমেই বিকশিত হয়েছে কোষযুক্ত ও কোষহীন অসংখ্য প্রটিস্টার প্রজাতি, যার মধ্যে একমাত্র ইয়োজোন কানাডেন্স আজও টিকে আছে৷ এ থেকে একটা ধারা ধীরে ধীরে পৃথক হয়ে আদি উদ্ভিদ হিসাবে ও অন্য ধারাটি আদি প্রাণী হিসাবে গড়ে ওঠে৷ আদি প্রাণী থেকে আরও নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে পৃথক হয়ে যায় প্রাণীর অসংখ্য শ্রেণি, বর্গ, পরিবার, প্রকার ও প্রজাতি৷ সর্বশেষে গড়ে ওঠে মেরুদণ্ডী প্রাণী, যার মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ দেখা যায় এবং শেষত, এদের মধ্য থেকেই এসেছে সেই মেরুদণ্ডী প্রাণীটি যার মধ্য দিয়ে প্রকৃতি আত্মচেতনা লাভ করে, অর্থাৎ মানুষ৷
মানুষের উদ্ভবও পৃথকীভবনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এবং সেটা শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, অর্থাৎ একটিমাত্র ডিম্বকোষ থেকে প্রকৃতিসৃষ্ট জটিলতম জীবসত্তা হিসাবে পৃথকীভূত হওয়া নয়, ইতিহাসগত হিসাবেও৷ হাজার হাজার বছরের সংগ্রামের পর যখন হাত আর পায়ের পার্থক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারা গেছে, তখনই মানুষ বানর থেকে স্বতন্ত্র হঠে উঠতে পারল এবং ভিত্তি রচিত হল পৃথকোচ্চারিত কথার ও মস্তিষ্কের সেই প্রবল বিকাশের যা সেই থেকে মানুষ ও বানরের মধ্যকার ব্যবধানকে একেবারে অনতিক্রম্য করে দিয়েছে৷ শুরু হল হাতের বিশেষ ব্যবহার, যার অর্থ হাতিয়ারের উদ্ভব এবং হাতিয়ারের অর্থ বৈশিষ্ট্যসূচক মানবিক ক্রিয়া, প্রকৃতির উপর মানুষের রূপান্তরকারী প্রতিক্রিয়া, অর্থাৎ উৎপাদন৷ সংকীর্ণতর অর্থে জীবজন্তুরও হাতিয়ার আছে, কিন্তু সেটা হল তাদের দেহেরই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেমন দেখা যায় পিঁপড়ে, মৌমাছি, বিভার প্রভৃতি প্রাণীর ক্ষেত্রে৷ জীবজন্তুরাও উৎপাদন করে, তবে চতুষ্পার্শ্বস্থ প্রকৃতিতে তাদের উৎপাদনপ্রসূত প্রভাব প্রায় কিছুই নয়৷ একমাত্র মানুষই প্রকৃতির উপর নিজের ছাপ মেরে দিতে পেরেছে৷ শুধু উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর আলাদা আলাদা প্রজাতিকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গিয়ে নয়, তার নিজের বাসস্থানের জলবায়ু এবং বাইরের চেহারাকে এমনভাবে পরিবর্তন করে, এমনকি গাছপালা ও জীবজন্তুগুলিকেও এমনভাবে বদলে দিয়ে যে একমাত্র পৃথিবীটার সামগ্রিক নির্বাপণ ছাড়া মানুষের কার্যকলাপের এইসব ফলাফলের অবলুপ্তি কিছুতেই হবে না৷
এই কাজটা মানুষ করেছে প্রধানত হাতের সাহায্যে৷ এমনকি প্রকৃতিকে বদলাবার জন্য মানুষের এখনও পর্যন্ত সবথেকে শক্তিশালী হাতিয়ার যে বাষ্পীয় এঞ্জিন তাও হাতিয়ার বলেই শেষ পর্যন্ত হাতের ওপর নির্ভরশীল৷ কিন্তু ধাপে ধাপে হাতের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিকাশ হল মস্তিষ্কেরও, দেখা দিল চেতনা, প্রথমে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহারিক প্রয়োজনের ফলাফলগুলি সৃষ্টি করার অবস্থা সম্পর্কে চেতনা, তারপরে, তার ভিত্তিতে অধিকতর আনুকূল্যপ্রাপ্ত জাতিগুলির মধ্যে এল সেইসব প্রাকৃতিক নিয়ম সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি যা এই সব প্রয়োজনীয় ফলাফল নিশ্চিত করে দেয়৷ আর প্রকৃতির নিয়ম সম্বন্ধে জ্ঞানের দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির উপর ক্রিয়া করবার উপায়ও বাড়তে লাগল৷ যদি হাতের সঙ্গে সঙ্গেই এবং অংশত হাতের ক্রিয়ার ফলেই মস্তিষ্কও বিকশিত না হত, তাহলে শুধুমাত্র হাতের সাহায্যেইে বাষ্পীয় ইঞ্জিন কখনই তৈরি করা যেত না৷
মানুষের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পৌঁছেছি ইতিহাসের ক্ষেত্রে৷ জীবজন্তুরও ইতিহাস আছে, অর্থাৎ তাদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের পথে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছানোর ইতিহাস৷ তবে এ ইতিহাস তাদের হয়ে অন্যের করে দেওয়া এবং তাদের জ্ঞান ও ইচ্ছা নিরপেক্ষভাবে এই ইতিহাস রচিত৷ অন্য দিকে মানুষ যতই অপরাপর প্রাণী থেকে বিশেষ অর্থে আলাদা হয়েছে, ততই তারা অনভিপ্রেত ফলাফল ও ইতিহাসের নিয়ন্ত্রক অজানা শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে সচেতনভাবে নিজেরাই ইতিহাস গড়েছে৷ মানুষের পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যের সঙ্গে ইতিহাসের ফলাফলটির মিলও ততই বেশি নিখুঁত হয়েছে৷ এই মাপকাঠিতে যদি আজকের সবচেয়ে শিল্পোন্নত জাতির ইতিহাসকে মাপি তাহলে দেখতে পাব, লক্ষ্যের সঙ্গে ফলাফলের দুস্তর ব্যবধান৷ দেখব যে, অজ্ঞাতপূর্ব ফলাফলের প্রভাবই বেশি এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী চালু শক্তিগুলির চেয়ে অনিয়ন্ত্রিত শক্তিরই পরাক্রম অনেক বেশি৷ যতদিন মানুষের সবচেয়ে মূল ঐতিহাসিক কার্যকলাপ, অর্থাৎ যে কার্যকলাপের দ্বারা মানুষ জীবজন্তুর স্তর থেকে মানবিক স্তরে উন্নীত হয়েছে এবং যা তার অন্যান্য সমস্ত কার্যের বৈষয়িক ভিত্তি, অর্থাৎ তার জীবনধারণের উপকরণ উৎপাদন, মানে আজকের দিনে সামাজিক উৎপাদন সেই অনিয়ন্ত্রিত শক্তির অবাঞ্ছিত ফলাফলেরই ঘাতপ্রতিঘাতের সবিশেষ অধীন হয়ে থাকছে এবং বেশিরভাগ সময়েই প্রত্যাশার ঠিক উল্টো হয়ে বাঞ্ছিত ফল পাওয়া যাচ্ছে নিতান্ত ব্যতিক্রম হিসেবে, ততদিন তা না হয়ে পারে না৷ সর্বাধিক শিল্পোন্নত দেশে আমরা প্রাকৃতিক শক্তিকে বশ করে মানবকল্যাণে লাগাচ্ছি, এই প্রক্রিয়ায় আমরা উৎপাদন বহুগুণ বাড়িয়েছি৷ যার ফলে অতীতে একশো পূর্ণবয়স্ক মানুষ যা উৎপাদন করত আজ একটা শিশুও করে তার থেকে বেশি৷ কিন্তু কী তার ফল হয়েছে? অত্যধিক খাটুনি, ব্যাপক অংশের জনগণের দুঃখ–দুর্দশা বৃদ্ধি ও দশ বছর অন্তর চক্রাকারে অর্থনীতির মহাসংকট৷ যোগ্যতমের টিকে থাকার সংগ্রাম ও অবাধ প্রতিযোগিতা, অর্থনীতিবিদেরা যাকে সর্বোচ্চ ঐতিহাসিক কীর্তি বলে ঘোষণা করেন, সেটা যে জীবজগতেরই স্বাভাবিক অবস্থা এটা দেখানোর মধ্য দিয়ে ডারডইন মানবজাতির উদ্দেশে, বিশেষত তাঁর স্বদেশবাসীর উদ্দেশে কী তিক্ত ব্যঙ্গ করে গেলেন, তা তিনি জানতেন না৷ সাধারণভাবে উৎপাদন যেমন বাকি জীবজগৎ থেকে মানুষকে প্রজাতি হিসেবে উন্নীত করে দিয়েছে, ঠিক তেমনই সামাজিকভাবে মানুষকে অন্য জীবজগতের থেকে উন্নীত করতে পারে শুধু সামাজিক উৎপাদনের সচেতন সংগঠন– যার মধ্যে উৎপাদন ও বন্টন হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী৷ ইতিহাসের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনই এইরকম সংগঠন আরও অপরিহার্যই শুধু নয়, সম্ভবপরও হয়ে উঠছে৷ সেই থেকেই ইতিহাসের এক নতুন যুগ শুরু হবে, যে যুগে মানুষের নিজের এবং তার সঙ্গে তার কার্যকলাপের সমস্ত শাখার, বিশেষ করে প্রকৃতিবিজ্ঞানের এমন অগ্রগতি দেখা যাবে, যার সামনে আগেকার সমস্ত অগ্রগতি ম্লান হয়ে যাবে৷(চলবে)