তিউনিশিয়ার জেনারেল লেবার ইউনিয়নের সহযোগিতায় দ্য আরব ইন্টারন্যাশনাল ফোরামের উদ্যোগে ১৬-১৭ জুন অনুষ্ঠিত হল একটি অনলাইন সম্মেলন। বিষয় ছিল, প্যালেস্টাইনের প্রতি ন্যায়বিচার, যার মূল উদ্দেশ্য, দখলদারি ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত প্যালেস্তিনীয়দের জন্য সহযোগিতার উপায়গুলি খুঁজে বের করা। অল ইন্ডিয়া অ্যান্টি-ইম্পিরিয়ালিস্ট ফোরামের পক্ষে এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন এস ইউ সি আই (সি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড কে শ্রীধর।
সম্মেলনের ছ’টি অধিবেশনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনগত, প্রচার ও সংস্কৃতিমূলক, পুনর্গঠন ও স্বাস্থ্য বিষয়ে এবং শিক্ষা ও মানসিক স্তরে সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। মিশর, মরক্কো, আলজেরিয়া, সিরিয়া, লেবানন, টিউনিশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভেনেজুয়েলা, আয়ারল্যান্ড সহ নানা দেশের প্রতিনিধিরা প্যালেস্তিনীয় জনগণের সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়ে উপরের ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতার কথা বলেন। কমরেড কে শ্রীধর ‘রাজনৈতিক সহযোগিতা’– বিষয়টির উপর বক্তব্য রাখেন। বক্তাদের বক্তব্য বিচার-বিবেচনা করে ‘তিউনিশিয়ান ডিক্লারেশন’ নামে একটি বিবৃতি প্রকাশিত হবে।
সম্মেলনের পর ১৪ সদস্যের ‘আরব ইন্টারন্যাশনাল প্রিপারেটরি কমিটি’ গঠিত হয়। কমরেড শ্রীধর এই প্রস্তুতি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। প্যালেস্টাইন সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন ও সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে প্রস্তুতি কমিটি প্রতি তিনমাস অন্তর বৈঠকে বসবে। এই ফোরামটিকে প্যালেস্টাইনের প্রতি ন্যায়বিচারের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এআইএআইএফ-কে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে কমরেড শ্রীধর বলেন, গত মে মাসে গাজা ভূখণ্ডে দশ দিন ধরে ইজরায়েল যেভাবে বোমাবর্ষণ করেছে, ১৯৪৮ সালের পর এমন আর ঘটেনি। পাশাপাশি একই সময়ে বিশ্ব জুড়ে এর যে প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছে, তাও অভূতপূর্ব।
তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল গঠনের ঘোষণা হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই উগ্র ইহুদিবাদীরা প্যালেস্টাইনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাস করে চলা আরবদের উৎখাত করতে শুরু করে। এর পিছনে ছিল সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র। প্রাকৃতিক উপাদানে সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদ তাদের পা-রাখার জায়গা হিসাবে ইজরায়েল গঠনের পরিকল্পনা করেছিল। প্যালেস্টাইনের আরব অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী আগ্রাসন চালাতে ইজরায়েলকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সমস্ত রকম রাজনৈতিক ও সামরিক সাহায্য করে চলেছে। এদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইজরায়েল ১৯৪৯-এর জেনেভা কনভেনশনের সমস্ত নীতি অগ্রাহ্য করে প্যালেস্টাইনের জমি দখর করে নিজেদের ইহুদি-বসতি গড়ে তুলছে। বিশ্বজোড়া সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তি এবং সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অনুপস্থিতির ফলে ইহুদিবাদীরা প্যালেস্টাইনের অধিবাসীদের উপর বর্বর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজা ভূখণ্ড ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে জনবসতি, স্কুল এমনকি হাসপাতালের উপর বোমাবর্ষণ করে ইজরায়েল সেগুলিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করেছে এবং মহিলা ও শিশু সহ হাজার হাজার নিরীহ প্যালেস্টিনীয় নাগরিককে হত্যা করেছে। এরই মধ্যে আশার বিষয় হল, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির সাধারণ মানুষ আজ প্যালেস্টাইনের দাবিগুলির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। এমনকি খোদ ইজরায়েলের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকরা প্যালেস্টাইনের অধিবাসীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে। সমস্ত দেশের স্বাধীনতাপ্রেমী গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের উদ্দেশ্যে কমরেড শ্রীধর প্যালেস্টাইনের অধিবাসীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী জঙ্গি গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান যার চাপে ইজরায়েলকে সহযোগিতা করা থেকে সাম্রাজ্যবাদীদের বিরত করা যায় এবং ইজরায়েলকেও বাধ্য করা যায় তার আগ্রাসন ও গণহত্যার নীতি পরিত্যাগ করতে। প্রতিটি দেশের সরকার যাতে প্যালেস্টিনীয়দের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের ন্যায়সঙ্গত দাবিটি সমর্থন করে, নিজের নিজের দেশের সরকারের কাছে সেখানকার মেহনতি সাধারণ মানুষের এই দাবি তোলা উচিত। যারা সাম্রাজ্যবাদী ও ইহুদিবাদীদের প্যালেস্টাইনে আক্রমণ ও আগ্রাসন চালাতে সহযোগিতা করছে, সেইসব সরকারের সঙ্গে দেশের মানুষের সহযোগিতা করা উচিত নয়।
কমরেড শ্রীধর অল ইন্ডিয়া অ্যান্টি ইম্পিরিয়ালিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে প্যালেস্টাইনের বীরত্বপূর্ণ আপসহীন সংগ্রামের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করেন এবং বলেন, একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের ন্যায্য দাবিদারদের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের মদতপুষ্ট ইহুদিবাদী আগ্রাসনকারীদের এই যুদ্ধকে কখনওই দুই ধর্মের মধ্যেকার লড়াই হিসেবে দেখা উচিত নয়। বাস্তবে এ হল স্বাধীনতা ও ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ। এক দিক দিয়ে দেখতে গেলে, এই যুদ্ধ বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির সহায়ক। কারণ, এই যুদ্ধে যদি সাম্রাজ্যবাদীরা জেতে, তা হলে তারা বিশ্বের বাকি অংশেও একই অপরাধ চালিয়ে যাবে। অন্যদিকে, যদি প্যালেস্টিনীয়রা জয়লাভ করে, তা হলে সাম্রাজ্যবাদীদের অত্যাচার বাধাপ্রাপ্ত হবে।
কমরেড কে শ্রীধর তাঁর ভাষণে বলেন, এই দাবির সমর্থনে ভারতে জনমত গঠন ও সংগ্রাম গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।