আজ থেকে ১৫০ বছর আগে ১৮৭১ সালে প্যারি কমিউনের ঐতিহাসিক সংগ্রামে উত্তাল হয়েছিল ফ্রান্স তথা সমগ্র ইউরোপ। বুর্জোয়া শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করে ১৮ মার্চ বিপ্লবী কেন্দ্রীয় কমিটি প্যারিসের ক্ষমতা দখল করে শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্র কমিউন প্রতিষ্ঠা করেছিল। কমিউন গুণগত ভাবে ছিল বুর্জোয়া রাষ্ট্রের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। কমিউন শাসনে এই প্রথম শ্রমিকরা মুক্তির স্বাদ পায়।
নানা কারণে কমিউনকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ৭২ দিন পর ২৮ মে বুর্জোয়া সরকার অপরিসীম বর্বরতায় নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালিয়ে কমিউনকে ধ্বংস করে। বিচারের নামে প্রহসন ঘটিয়ে হাজার হাজার কমিউনার্ডকে হত্যা করে বুর্জোয়ারা বিপ্লব দমন করে। এই লড়াইকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে মানবমুক্তির দিশারী কার্ল মার্ক্স তাঁর চিন্তাধারাকে আরও ক্ষুরধার করেন, সমৃদ্ধ করেন। শ্রমিক বিপ্লবের প্রচলিত ভ্রান্ত তত্ত্বগুলিকে আদর্শগত সংগ্রামে পরাস্ত করে প্যারি কমিউনের লড়াই মার্কসবাদের অভ্রান্ত সত্যতাকে প্রতিষ্ঠা করে। কমিউনার্ডদের অসীম বীরত্ব ও জঙ্গি লড়াই সত্ত্বেও কমিউনের পতন দেখায়, শ্রমিকবিপ্লবের জন্য সঠিক বিপ্লবী তত্ত্ব ও সঠিক বিপ্লবী দলের নেতৃত্ব অবশ্য-প্রয়োজন। প্যারি কমিউনের এই মহান সংগ্রামের ইতিহাস জানা সমস্ত মার্কসবাদীর অবশ্য-কর্তব্য। এ বার অষ্টম তথা শেষ কিস্তি। – সম্পাদক, গণদাবী
(৮)
শাসক বুর্জোয়ারা, যারা বিপ্লবের আগে ছিল শোষক, তারা সব সময়ই চেষ্টা করবে বিপ্লবকে পরাস্ত করতে। সেই কারণে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরেই প্রয়োজন প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া শ্রেণির সঞ্চিত ধনদৌলত শ্রমিক-জনতার করায়ত্ত করা। সে কারণে প্রয়োজন ছিল ব্যাঙ্ক অব ফ্রান্সকে কমিউনের দখলে আনার। অন্তত অপর একটি কারণেও ব্যাঙ্ক দখলের প্রয়োজন ছিল। এঙ্গেলস যথার্থই বলেছেন, এ কাজটি সম্পন্ন করতে অগ্রসর হলেই সমগ্র বুর্জোয়া শ্রেণি, আসন্ন ক্ষতির সম্ভাবনায় ভীত হয়ে ভার্সাইয়ের প্রতিক্রিয়াশীল সরকারের ওপর কমিউনের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের জন্য চাপ দিত আর সে অবস্থান তখন কমিউন নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখার পক্ষে কাজে লাগাতে পারত। কমিউনের অভিজ্ঞতা থেকে এঙ্গেলস দেখালেন, ‘‘শুরু থেকেই কমিউন মানতে বাধ্য হল, ক্ষমতা দখলের পর শ্রমিক শ্রেণি পুরোনা শাসনযন্ত্র দিয়ে কাজ চালাতে পারবে না। যে আধিপত্য শ্রমিক সদ্য জয় করে নিয়েছে, তাকে আবার হারাতে না হলে, একদিকে যেমন উচ্ছেদ করে দিতে হবে সকল সাবেকি নিপীড়ন যন্ত্রকে, এতকাল যা তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হয়েছে, আবার অন্য দিকে তেমনই তাদের আত্মরক্ষা করতে হবে নিজেদের প্রতিনিধি ও সরকারি পদাধিকারীদের হাত থেকেও– এই বিধান ঘোষণা করে যে, বিনা ব্যতিক্রমে এদের প্রত্যেককে যে কোনও মুহূর্তে প্রত্যাহার করা যাবে।” মার্ক্স বললেন, ‘‘কমিউন বিশেষভাবে একটা জিনিস প্রমাণ করেছে, তা হল, শ্রমিক শ্রেণি রেডিমেড রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে সুবিধা আদায় করতে পারে না, এবং নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে না।” এই যথার্থ বিজ্ঞানসম্মত চিন্তার অভাবই কমিউনের পতনের বহু কারণের মধ্যে অন্যতম।
মার্ক্স ধারাবাহিক ভাবে ফ্রান্সের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনগুলিকে লক্ষ করেছিলেন এবং তার মধ্যে শ্রেণিসংগ্রামের রূপটিকে, তার পরিবর্তনগুলিকে, বিকাশকে চিহ্নিত করেছিলেন এবং এর অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর চিন্তাকে আরও সমৃদ্ধ করেছিলেন। কমিউনের পরাজয়ের কয়েক দিনের মধ্যে তিনি ‘ফ্রান্সের গৃহযুদ্ধ’ বইটি লেখেন। লেখেন ‘ফ্রান্সের শ্রেণি সংগ্রাম’ এবং ‘লুই বোনাপার্টের আঠারোই ব্রুমেয়ার’। ইতিহাসের প্রত্যক্ষ ঘটনাবলির বিশ্লেষণে ঐতিহাসিক বস্তুবাদের পদ্ধতি প্রয়োগের চমৎকার নিদর্শন এগুলি। এই সব রচনার মধ্যে তিনি শ্রমিক শ্রেণির দুর্বলতার দিকগুলি চিহ্নিত করেন এবং তার থেকে উত্তরণের উপায়গুলি বর্ণনা করেন। মার্কসবাদের বিপ্লবী মর্মবস্তুকে যারা বিকৃত করার চেষ্টা করছিল সেই সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে লেখা তাঁর বিখ্যাত দলিল ‘গোথা কর্মসূচির সমালোচনা’ বইটিতে মার্ক্স একটা রাজনৈতিক উত্তরণ পর্বের প্রয়োজনীয়তা ও ঐতিহাসিক অনিবার্যতা দেখান, যে পর্বে রাষ্ট্রকে অবশ্যই হতে হবে প্রলেতারিয়েতের বিপ্লবী একনায়কত্ব। প্যারি কমিউনের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন।
প্যারি কমিউনের অনেক বছর পর লেনিন বার বার ফিরে তাকিয়েছেন প্যারির শ্রমিকদের অভূতপূর্ব সংগ্রামের দিকে। তিনি কমিউনের সংগ্রামকে গভীর ভাবে পর্যালোচনা করেছেন, তার থেকে শিক্ষা নিয়ে রাশিয়ায় শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রামকে ক্ষুরধার করেছেন। লেনিন বলেছেন, ‘‘সর্বহারা শ্রেণি মাঝপথেই থেমে গিয়েছিল। শোষকদের দমন না করে, অভিন্ন জাতীয় লক্ষ্যের ভিত্তিতে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে উন্নত ধরনের ন্যায় প্রতিষ্ঠার খোয়াব দেখে কমিউন নিজেই পথভ্রষ্ট হয়েছিল। … শত্রুদের ধ্বংস করার বদলে নৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিল।”
কমিউনের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ যথার্থ বৈজ্ঞানিক সমাজবাদী দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতার অভাব। শ্রমিকশ্রেণির যথার্থ বিপ্লবী দল তখনও গড়ে ওঠেনি। ফলে বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য নেতৃত্ব ছিল না। আন্তর্জাতিকের শাখা ছিল প্যারিসে এবং আন্তর্জাতিকের কেন্দ্রীয় সংস্থার বহু যোগ্যতাসম্পন্ন সদস্যও ছিলেন কমিউনে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে বহু সদস্যই ছিলেন ব্ল্যাঙ্কি অথবা প্রুধোঁর তত্ত্বে বিশ্বাসী। উভয় তত্ত্বই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্তে্রর অনুসারী নয়। আন্তর্জাতিকের যে অংশ ছিল যথার্থ বৈজ্ঞানিক সমাজবাদী চিন্তার ধারক ও বাহক, কার্ল মার্কসের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে যাঁরা আস্থাবান ছিলেন, কমিউনে তাঁরা ছিলেন সংখ্যায় নগণ্য এবং তখনও এই অংশ প্যারিসে যথার্থ বিপ্লবী দলে সংগঠিত হয়ে ওঠেনি। এ অবস্থায় অভিন্ন বৈজ্ঞানিক সমাজবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অভাব যে কমিউনে প্রকট হবে তা খুবই স্বাভাবিক।
কমিউনের সদস্যদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ ছিল উদারনৈতিক রিপাবলিকান পেটিবুর্জোয়া যারা নয়া জ্যাকোবিন নামে পরিচিত ছিলেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ যথার্থ আপসহীন সংগ্রামী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন এবং সংগ্রামী জনতার কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবেও পরিগণিত হয়েছেন যেমন, দেলেসক্লুজ। তবে মূলতপেটিবুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীসুলভ মনোভাবের প্রাধান্যের দরুন চিন্তার দিক থেকে এঁরা বুর্জোয়া চিন্তাধারায় প্রভাবিত ছিলেন। নিঃসন্দেহে সেটা বুর্জোয়া চিন্তাধারার বর্তমান যুগের ক্ষয়িষ্ণু রূপ নয়, বরং বুর্জোয়া চিন্তার প্রথম যুগের ধারা, যে ধারা ছিল আপসহীন সংগ্রামের পক্ষপাতী, ছিল চিন্তার দিক থেকে সেকুলার এবং যার ভিতরে ছিল যৌবনের অদম্য প্রাণোচ্ছাস। তারই প্রভাব ছিল এদের উপর। তা সত্ত্বেও এ কথা মনে রাখা দরকার যে এ চিন্তার সঙ্গে মেহনতি মানুষের পক্ষে, শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে বিপ্লব সমাধা করে শোষণহীন সমাজ পত্তনের চিন্তার ছিল একটা বিরাট ফারাক। স্বাভাবিক কারণেই যে বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে কমিউন এসেছিল, বাস্তবে তা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হল না।
এঙ্গেলস বলেছেন, ‘‘… সেই জন্য বোঝা যায় কেন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কমিউন অনেক কিছুই করেনি যা এখন আমাদের মতে করা উচিত ছিল। … ব্লাঙ্কিপন্থী ও প্রুধোঁপন্থীদের নিয়ে গঠিত হলেও এই কমিউন যা করেছিল তার অনেক কিছুর নির্ভুলতাই হল অনেক বেশি বিস্ময়কর।” মার্ক্স বললেন, ‘‘যে শ্রেণি-সম্পত্তি বহুর শ্রমকে পরিণত করে মুষ্টিমেয় লোকের সম্পদে, তাকে কমিউন উচ্ছেদ করতেই চেয়েছিল। উচ্ছেদকারীদের উচ্ছেদ ছিল তার লক্ষ্য। উৎপাদনের উপায়, জমি ও পুঁজি, আজ যেটা মুখ্যত শ্রমকে দাসত্ব-শৃঙ্খলে বন্ধন এবং শোষণের উপায় মাত্র, তাকে মুক্ত ও যৌথ শ্রমের হাতিয়ারে রূপান্তরিত করে ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে বাস্তব সত্যে পরিণত করতে চেয়েছিল কমিউন।”
যথার্থ শ্রমিকশ্রেণির বিপ্লবী চিন্তা তখনও ফরাসি সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে দানা বেঁধে উঠতে পারেনি। আদর্শ, চিন্তা ও দর্শনগত দিক থেকে মূলত উদারনৈতিক বুর্জোয়া ভাবধারাই প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল কমিউন প্রতিষ্ঠা ও তার পরিচালনার ক্ষেত্রে। তবে প্রথম আন্তর্জাতিকের প্রভাবে ও বিরাট সংখ্যায় শ্রমিক-মেহনতি মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের ফলে এমন কিছু ক্রিয়াকলাপ কমিউনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেগুলো নিঃসন্দেহে সমাজ বিপ্লবের ক্ষেত্রে আর এক ধাপ এগিয়ে যাবার সম্ভাবনায় ছিল উজ্জ্বল। অবশ্য এ সম্ভাবনা সম্পর্কে তাঁরাও খুব সচেতন ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে লেনিন বলেছেন, ‘‘জাগ্রত জনতার অখণ্ড চেতনাই কমিউনের জন্মদাতা। যাঁরা কমিউন গড়ে তুলেছিলেন, তাঁরাই এর মূল্য বোঝেননি।” লেনিন বললেন, ‘সমস্ত ভ্রান্তি সত্তে্বও কমিউন উনবিংশ শতাব্দীর সর্বহারা আন্দোলনের অভূতপূর্ব উদাহরণ। … কমিউনের আত্মত্যাগ সর্বহারার সংগ্রামের সামনে খবুই তাৎপর্যপূর্ণ। ইউরোপের বুকে এই সংগ্রাম, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিয়েছিল। … এই সংগ্রাম ছদ্ম দেশপ্রেমের মুখোশ খুলে দিয়েছিল। … কমিউন দেখিয়ে দিয়েছিল, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য ইউরোপের সর্বহারা শ্রেণিকে কী কী দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
উপরোক্ত আলোচনায় কমিউনের কয়েকটি ত্রুটি, যেমন ভার্সাই আক্রমণ বা ব্যাঙ্ক দখল না করা ইত্যাদিকে সে কারণেই আপাতদৃষ্টিতে কমিউনের পতনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ কমিউন এ কাজগুলো সম্পন্ন করলেই আর তার পতন ঘটত না, এ কথা মনে করা যুক্তিযুক্ত নয়। হয়ত তার আয়ুষ্কাল কিছুটা বর্ধিত হতে পারত। কমিউন সার্থকরূপে নাও গড়ে উঠতে পারে এ আশঙ্কার কথা চিন্তা করেই ১৮৭১-এ সেপ্টেম্বর মাসে মার্ক্স সাবধানবাণী উল্লেখ করেছিলেন, ‘‘এ সময়ে অভ্যুত্থান ঘটানো বেপরোয়া ও বোকামি হবে।” অবশ্য সংগ্রাম শুরু হয়ে গেলে ন্যায়সঙ্গত কারণেই তাকে অভিনন্দন, সাহায্য ও সমর্থন জ্ঞাপনে তিনি বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি।
তাই বহু ত্রুটি বিচ্যুতি, বহু বিভ্রান্তি এবং যথার্থ বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব সত্ত্বেও একথা মনে রাখা দরকার যে, ‘‘কমিউন কোনও সংকীর্ণ বা আঞ্চলিক স্বার্থ নিয়ে লড়েনি। এর উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র মেহনতি মানুষের মুক্তি। … কমিউনের স্বার্থ হল শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন। বিশ্ব সর্বহারার লক্ষ্যও তাই। এদিক থেকে কমিউন অমর হয়ে থাকবে।” মার্ক্স বললেন, ‘‘কমিউন-সমেত শ্রমিক শ্রেণির প্যারিস চিরদিন এক নতুন সমাজের গৌরবদীপ্ত অগ্রদূত হিসাবে নন্দিত হবে। শ্রমিক শ্রেণির বিশাল হৃদয়ে তার শহিদেরা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিহাস তাদের জল্লাদদের ইতিমধ্যেই সেই শাশ্বত শাস্তিমঞ্চে আবদ্ধ করেছে, যেখান থেকে তাদের পুরোহিতদের যাবতীয় প্রার্থনাতেও তাদের নিষ্কৃতি মিলবে না।”
পুঁজিবাদী শোষণ-নিপীড়নের শ্বাসরোধী অবস্থা থেকে আজ যাঁরাই বেরোতে চান, দেড়শো বছর পরেও তাঁদের ফিরে তাকাতে হবে প্যারি কমিউনের দিকে। শিক্ষা নিতে হবে যে, পুঁজিবাদী এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে না ভেঙে শোষিত মানুষের মুক্তি আসতে পারে না। নির্বাচনে যতই সরকার পাল্টাক, তার দ্বারা রাষ্ট্রের চরিত্র বদলাবে না, রাষ্ট্রের শোষণের চরিত্র বদলাবে না। প্যারি কমিউন থেকে শিক্ষা নিতে হবে যে, পুলিশ-মিলিটারি-বিচার ব্যবস্থা-আমলাতন্ত্রের মজবুত স্তম্ভের দ্বারা শক্তিশালী এই রাষ্ট্র শোষিত মানুষের মুক্তিসংগ্রামকে নির্মম ভাবে দমনের চেষ্টা চালাবে। সেই চেষ্টাকে প্রতিহত করে মানুষের মুক্তি ছিনিয়ে আনতে হলে শোষিত মানুষের লৌহদৃঢ় ঐক্য দরকার, দরকার ক্ষুরধার শ্রেণিচেতনা, এই চেতনার ভিত্তিতে সত্যিকারর একটি কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সমবেত হওয়া। ভারতে সেই পার্টি একমাত্র এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)। এই পার্টিরই রয়েছে সঠিক দ্বান্দ্বিক বিচারপদ্ধতি, রয়েছে সংগ্রামের আগুনে পোড় খাওয়া নেতৃত্ব। এই পার্টির নেতৃত্ব দেশের সংগ্রামী আন্দোলনগুলিতে প্রতিষ্ঠিত হলেই একমাত্র সম্ভব পুঁজিবাদী এই রাষ্ট্রের মোকাবিলা করে শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। (সমাপ্ত)