প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার একশো বছর পূর্তি উপলক্ষে ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে সমবেত হয়েছিলেন ৭১টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা৷ উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের শিরোমণি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেনের মতো সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির প্রতিনিধিরা৷ ভণ্ডামির সমস্ত সীমা অতিক্রম করে উপস্থিত দর্শকদের সামনে যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রবল ঘৃণা বর্ষণ করেছেন তাঁরা৷ এক কদম এগিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাকরঁ ‘শান্তির লক্ষ্যে যুদ্ধ’ জারি রাখতে একটি ‘শান্তি ফোরাম’ গঠনের পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছেন৷
সম্মেলনে যে দেশগুলির প্রধানরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে চোখের জল ঝরিয়েছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়েছিল সেইসব দেশের শাসকরাই৷ কে কত বেশি সংখ্যক উপনিবেশে দখলদারি কায়েম করে লুটপাট চালাবে তারই প্রতিযোগিতায় বিশ্বযুদ্ধে সামিল হয়েছিল একদিকে ফ্রান্স, ব্রিটেন, রাশিয়া, আমেরিকা সহ আরও কয়েকটি দেশের জোট, অন্যদিকে জার্মানি, অস্ট্রিয়া–হাঙ্গেরি ও ইটালির জোট৷ এই যুদ্ধ শুরুর আগে নিজের নিজের উপনিবেশগুলির সাধারণ মানুষের উপর দীর্ঘদিন ধরে চরম শোষণ–নিপীড়ন চালিয়ে এসেছে ব্রিটেন, ফ্রান্স সহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির শাসকরা৷ আমেরিকা হাত রাঙিয়েছে ওই মহাদেশের আদি বাসিন্দাদের রক্তে৷
আজও বন্ধ হয়নি সেই রক্তস্নান৷ সাম্রাজ্যবাদী মুনাফার স্বার্থে গোটা বিশ্ব জুড়ে দেশে দেশে হানাদারি চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সহ ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানির মতো দেশগুলি৷ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে সামনে এসেছে একটি ভয়ঙ্কর তথ্য৷ দেখা যাচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ শুধু ইরাক, আফগানিস্তান আর পাকিস্তানে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৫ লক্ষেরও বেশি নিরীহ মানুষের৷ তাও এই রিপোর্টে সিরিয়ায় মার্কিন হানাদারিতে নিহত ৫ লক্ষাধিক মানুষের হিসাব নেই৷ ইয়েমেনে দীর্ঘদিন ধরে হামলা চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে চলেছে যে সৌদি আরবের শাসক শ্রেণি, তাকে সাম্রাজ্যবাদী মুনাফার স্বার্থে আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স লাগাতার অস্ত্রসাহায্য করছে৷ এরাই আজ এসেছে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতিতে চোখের জল ঝরাতে প্যারিসের এই ‘শান্তি’ সম্মেলনে সাম্রাজ্যবাদী নরহত্যাকারীদের এই ভড়ং পৃথিবীর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষের বুকে প্রবল ঘৃণার সঞ্চার করেছে৷