পুঁজিপতিদের ২.১৭ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ বিলকুল মুছে দেওয়া হল

২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। কীভাবে উন্নতির পর উন্নতি হচ্ছে ব্যাঙ্কের, তারই খতিয়ান। ব্যাঙ্কের সম্পদের ঠিকুজির হাল হকিকৎ। ব্যাঙ্কের যে সম্পদ কাজে লাগে না, পরিভাষায় যার নাম এনপিএ বা নন-পারফর্মিং অ্যাসেট, ২০২২-২৩ সালে ২১ শতাংশ ছাপিয়ে উঠেছিল, তার পরিমাণ কমে গেল। ২০২২-২৩-এ অধীনস্থ ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণ হিসেব থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এর পরিমাণ ২.১৭ লক্ষ কোটি টাকা। এর আগের অর্থনৈতিক বছরে তামাদি টাকার পরিমাণ ছিল ১.৭৯ লক্ষ কোটি টাকা। তামাদির পরিমাণ বেড়েছে।

রাজ্যসভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ভগৎ কারাড সুসমাচার দিয়ে জানিয়েছেন, গত পাঁচটি অর্থনৈতিক বছরে ১০.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা এইভাবে পাওনার খাতা থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে ৫.৫২ লক্ষ কোটি টাকা বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠীর থেকে পাওনা ছিল। অনাদায়ী টাকার বোঝাটা বেশ বড়সড়। এইভাবে অনুৎপাদক সম্পদের অনুপাত ২০১৮-১৯ সাল থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত বেড়েই চলেছে।

এই নন পারফর্মিং অ্যাসেট (এনপিএ) সমস্ত ব্যাঙ্কের সম্মিলিত পরিমাণ ৫.৭১ লক্ষ কোটি টাকা ২০২২-২৩-এ। এর পরিমাণ গত বছরের ৭.৪৩ লক্ষ কোটি টাকার কম। এই কমে যাওয়াকে দেখিয়ে অর্থনীতির উন্নয়নের বড়াই করছে সরকার। আসলে এর পিছনে রয়েছে অন্য খেলা। বিপুল পরিমাণ এনপিএ ব্যাঙ্কের হিসাবের খাতা থেকে মুছে ফেলে দেখানো হচ্ছে এর পরিমাণ কমে গেছে।

পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক, প্রাইভেট ব্যাঙ্ক, বিদেশি ব্যাঙ্ক, স্বল্প বিনিয়োগ ব্যাঙ্ক– সবক্ষেত্রেই এই ঋণ তামাদির চিত্রটি বেশ ঝকঝকে। পণ্ডিত লোকের ভাষার খোলস ছেড়ে দিলে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তা সুদে-আসলে মেরে দেওয়াটা খাসা বৈধতা পেয়েছে। সেখানে এনপিএ নাম মাহাত্ম্য আনতে হয়েছে। ব্যাঙ্কের টাকা হাজার হাজার সাধারণ নাগরিকের রক্ত জল করা আমানতের টাকা। সেই টাকা বড় বড় শিল্পপতিরা ঋণ নিয়ে গায়েব করে দিচ্ছে। সুদ-আসল আদায় করা দূরস্থান, পাওনার হিসাব মুছে দিয়ে খাতির করা হচ্ছে। আবার ব্যাঙ্কের ক্ষতি পূরণ করা হচ্ছে পাবলিকের জমা টাকা ও করের টাকা থেকে। গোটা জাতির প্রতি এমন বিশ্বাসঘাতকতা উন্নয়নের নামে কি চলতেই থাকবে?

উপযুক্ত পরিমাণ সম্পদ ব্যাঙ্ক গচ্ছিত না রেখে ব্যক্তি বা সংস্থাকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেবেই বা কেন? বিদেশি ব্যাঙ্কের এমন ঋণ ৫০ শতাংশ। প্রাইভেট ব্যাঙ্কে এই ঋণ ২৭.৩ শতাংশ। পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কে ৫০ শতাংশ, প্রাইভেট ব্যাঙ্কে এই ঋণ ২২.৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় ঋণনীতিতে ঋণখেলাপি করে জনগণের টাকা তছরুপের ব্যবস্থাটা বেশ জেঁকে বসেছে। একজন সাধারণ মানুষ অল্প ঋণ নিয়ে ব্যবসা সংকটের জন্য ঠিকঠাক শোধ না করতে পারলে তাঁর পিছনে পুলিশ লাগে। ঘরবাড়ি ক্রোক হয়। আর যারা বিপুল পরিমাণে টাকা গায়েব করছে তাদের উন্নতি হয়। আধুনিক ব্যাঙ্ক অর্থনীতির সার কথা এটাই।