শিল্পে কাজের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর কথা বলে বেকার যুবকদের ইনটার্নশিপ বা শিক্ষানবিশীর যে ঘোষণা বাজেটে করা হয়েছে তাতে কি কর্মসংস্থান বাড়বে? বেকারদের তা কাজ পেতে সুবিধা দেবে? তা একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।
বাজেটে বলা হয়েছে, দেশের ৫০০ বৃহৎ কোম্পানিতে এক কোটি যুবকের এই শিক্ষানবিশী চলবে। সরকারি তহবিল থেকে মাসে মাত্র ৫০০০ টাকা ভাতা দিয়ে শিক্ষানবিশদের কাজ করানো হবে। কী শিখতে হবে তা ঠিক করবে কোম্পানিগুলি। অর্থাৎ সরকারি টাকায় কোম্পানিগুলি শিক্ষিত বেকারদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেবে, কোম্পানির কোনও খরচ হবে না। আর প্রতিটি শিক্ষানবিশকে এককালীন ৬০০০ টাকা দেবে কোম্পানি, তবে তা তাদের মূল তহবিল থেকে নয়, সিএসআর ফান্ড থেকে। অর্থাৎ কর্পোরেট সোস্যাল রেসপন্সিবিলিটির ফান্ড থেকে যে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ হতে পারত তা কেটে শিক্ষানবিশীর প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। আর ৫০০টা কোম্পানি নিশ্চয়ই সকলের বাড়ির কাছে হবে না। শিক্ষানবিশ হতে বাড়ি থেকে দূরবর্তী স্থানে গেলে সেখানে থাকা-খাওয়া জোগাড় করা ইত্যাদি যাবতীয় কাজগুলি নিশ্চয় ভাতা হিসাবে পাওয়া ৫০০০ টাকাতে হবে না। গাঁটের কিছু পয়সাও খরচ করতে হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, জাতীয় শিক্ষানীতিতেও উচ্চশিক্ষার স্তরে ছাত্রদেরকে ইন্টার্নশিপ নিতে হবে। বলা হয়েছে বিনামূল্যে এদের ইন্টার্নশিপের নামে খাটিয়ে নিয়ে বিপুল মুনাফা করবে কোম্পানিগুলি।
এক্ষেত্রে যুক্তি তোলা হচ্ছে–একটা কাজ যে জানে না, তাকে সেই কাজটা শিখিয়ে দিলে তার তো ভবিষ্যতে কাজ পেতে সুবিধা হবে। কথাটা শুনতে খুবই ভালো। কিন্তু বাস্তবটা হল– ভবিষ্যতে সেই কাজের সেই সংখ্যক শূন্যপদ থাকলে তবে তো কাজ পাবে। সেই সংখ্যক শূন্যপদ না থেকে যদি এক কোটি শিক্ষানবিশের সামনে মাত্র এক লক্ষ শূন্যপদ থাকে তাহলে কাজের বাজারে তারা হবে বিশাল উদ্বৃত্ত এক বেকার বাহিনী। চাহিদার তুলনায় যোগান এত বেশি হলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই অতি অল্প মজুরিতে কাজের লোক পাওয়া যাবে। যারা কাজ পাবে তারা হবে নির্মমভাবে শোষিত এবং বাকিরা শিক্ষানবিশের ডিগ্রি গলায় ঝুলিয়ে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াবে। ফলে এই শিক্ষানবিশীর প্রকল্প বেকার যুবকদের ভবিষ্যতে কাজ পাওয়ার সুবিধার জন্য নয়, শিল্পমালিকদের বিপুল মুনাফা তৈরির জন্য।